E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাগেরহাটে অন্তঃসত্ত্বা নববধুকে হত্যা 

২০১৫ নভেম্বর ১০ ১২:২২:২৮
বাগেরহাটে অন্তঃসত্ত্বা নববধুকে হত্যা 

বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ ‘আমি নিঁচু ঘরের মেয়ে, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে দাদা, তুমি এসে আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাও’। এই বলে ছোট ভাইয়ের কাছে শেষ আকুতি জানিয়ে ছিল মেধাবী কলেজ ছাত্রী নববধু সুষমা অধিকারী (২১)। কিন্তু মায়ের কাছে ফেরা হয়নি তার।

নিঁচু বংশে জন্ম, যেন আজন্মই পাপ হয়ে দেখা দেয় সুষমার জীবনে। যৌতুক লোভী স্বামীর পরিবারের অমানুষিক নির্যাতনে অন্তঃসত্তা অবস্থায় বিয়ের মাত্র ছয় মাসের মধ্যে মৃত্যু হয় তার। আর এই মৃত্যুকেই আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে সুষমার স্বামীর পরিবার। বাগেরহাট পুলিশ সুপার বরাবর এমনই লিখিত অভিযোগ করেছেন নিহতের ভাই মৃদুল অধিকারী।
নিহতের ভাই মৃদুল অধিকারী মঙ্গলবান সকালে জানান, বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার বড়গাওলা গ্রামের মধুসুধন অধিকারীর মেয়ে মেধাবী কলেজ ছাত্রী সুষমা অধিকারীর (২১) সাথে ১৪ মে বাগেরহাট সদর উপজেলা লাউপালা এলাকায় মূতঃ রনজিত দের ছেলে সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা মনোতোষ দে এর সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় সুষমা অধিকারী গোপালগঞ্জ সরকারী বঙ্গবন্ধু কলেজে ব্যবস্থাপনায় অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। অধিকারী বংশের মেয়ে এবং দে বংশের ছেলে একারণে বিয়ের সময় যৌতুক হিসাবে মোটা অংকের নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্র প্রদান করা হয়। বিয়ের কিছুদিন পর যৌতুকের দাবীতে স্বামী মনোতোষ দে, তার মা মায়া রানী দে ও ভাই মিঠুন দে সুষমা অধিকারীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে।
গত ৩ নভেম্বর দুপুরে ছোট ভাইয়ের কাছে ফোন করে নির্যাতনের কথা বলে কান্নাকাটি করে বলেছিল তাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু মায়ের কাছে ফিরতে পারেনি সে। এদিনই বেলা আড়াইটায় তার পিতার বাড়িতে খবর দেয়া হয় সুষমা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মেয়ে বিয়ে দিয়ে প্রায় সর্বস্বান্ত কৃষক মধুসুধন অধিকারী টাকা দিতে না পারায় সুষমার উপর নির্যাতনের মাত্রা ক্রমে বাড়তে থাকে। নিরুপায় হয়ে একমাত্র মেয়ের হাসি মুখ দেখার জন্য বসতভিটা থেকে ৩১ শতাংশ জমি বিক্রি করে দুইলক্ষ টাকা মটর সাইকেল কেনার জন্য জামাইয়ের হাতে তুলে দেন। এতেও থেমে থাকেনি নির্যাতন। তারা আরো টাকা দাবী করতে থাকে। পাশাপাশি ছোট জাতের মেয়ে বলে প্রায়ই অকথ্য ভাষায় গালি দিতে থাকে সুষমার স্বামীর পরিবার।
নিহতের ভাই মৃদুল অধিকারী অভিযোগ করে বলেন, তারা বাগেরহাট সদর হাসপাতালে এসে শুধু তার বোনের লাশটি দেখেছেন। ঘটনার পর থেকে তার শশুর বাড়ির লোকজন পালিয়ে যায়। এরপরও হত্যা মামলা না হয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা মনোতোষ দে প্রভাব খাটিয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে। বর্তমানে থানা পুলিশ বলছে ময়না তদন্ত রির্পোট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করবে। এহত্যাকন্ডের ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য প্রভাবশালীরা তৎপরতা অব্যহত রেখেছে বলে তিনি দাবী করেন। তিনি প্রশাসনের উর্ধতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

(একে/এনএস/নভেম্বর ১০, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test