E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আজ ভয়াল ১৫ নভেম্বর

বাগেরহাটে এখনো গৃহহীন হাজারও পরিবার

২০১৫ নভেম্বর ১৪ ১৫:০১:১৫
বাগেরহাটে এখনো গৃহহীন হাজারও পরিবার

বাগেরহাট প্রতিনিধি :আজ ভয়াল ১৫ নভেম্বর ভয়াল সুপার সাইক্লোন সিডর দিবস। সিডরের ৮ বছর পূর্ণ হলেও বাগেরহাটে গৃহহীন হাজারো পরিবার। নিশ্চিত করা যায়নি এই জনপদের মানুষগুলোর জন্য পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র। হয়নি টেকসই ভেড়িবাধ নির্মাণ। সৃষ্টি করা যায়নি ক্ষতিগ্রস্থদের আর্থসামাজিক কর্মসংস্থানের সুযোগ।

সাইক্লোন সিডরে এই জেলার সুন্দরবন সন্নিহিত উপজেলা শরণখোলাতেই সরকারী হিসেবে মারা যায় ৯০৮ জন মানুষ। এরমধ্যে সিডরের মুলকেন্দ্র (আই) হিসেবে আঘাতহানা বলেশ্বর নদী তীরবর্তী সাউথখালী ইউনিয়নেরই প্রায় ৭শ মানুষ মারা যায়। যার অধিকাংশই ছিল নারী ও শিশু। লন্ডভন্ড হয়ে যায়, ঘরবাড়ী, গাছপালা ও ফসলের ক্ষেত। তবে বেসরকারি হিসাবে এই মৃতের সংখ্যা আরো অনেক বেশি। মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয় শরণখোলাসহ বাগেরহাটের ৫টি উপজেলার প্রায় দেড় শত কিলোমিটার এলাকা। সিডরের পর বিধ্বস্ত এলাকার মানুষের সাহায্যে ছুটে আসে সরকারি- বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও সাধারণ মানুষ। সুপার সাইক্লোন সিডরে সেই ভয়াল দু:সহ স্মৃতি নিয়ে আজও তাড়া করছে ক্ষতিগ্রস্থ উপকূলবাসিকে।

উপকুলবাসি কর্মসংস্থানের অভাবে অনেকে ভিটামাটি ছেড়ে জীবন জীবীকার জন্য ছুটে গেছেন অন্যত্র। তবে এরমধ্যে সরকারী ও বেসরকারি কিছু সাহায্যে সহযোগিতায় অনেকের কাটছেন কোনমতে জীবন জীবীকা। এই উপকুলবাসির এখন একটাই চাওয়া নিয়মিত কর্মসংস্থান। সিডরের ৮বছর পরও সেই বলেশ্বর মোহনার ভেড়ী বাধের বাইরে খুপড়িঘরে বসবাস করছে শতশত পরিবার। বাস্তবায়ন হয়নি উপকূলীয় এলাকার গণমানুষের প্রধান দাবী টেকসই বেড়ীবাঁধ। পাওয়া না পাওয়ার ক্ষোভ ও প্রতিশ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ, নিরাপদ আবাসনের দাবী নিয়ে এখনও প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে উপকূলীয় শরণখোলা-মোড়েলগঞ্জের ৪লাখ মানুষ। তবে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার বলছেন, টেকসই ভেড়ি বাঁধ পেতে বাগেরহাটের সিডর দূর্গোতদের অপেক্ষা করতে হবে ২০২১ সাল পর্যন্ত। সরকারী-বেসরকারী ভাবে অনেক পরিবার সিডর পরবর্তিতে বসবাসের জন্য ঘর পেলেও তার মোটেই ঘুর্নিঝড় মোকাবেলায় সহণনীয় নয়। ইতিমধ্যে জিও-এনজিওদের দেয়া অধিকাংশ ঘর ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। শরণখোলার ক্ষতিগ্রস্থ বলেশ্বর পাড়ের মানুষের কাছে গিয়ে স্পস্টই ফুটে ওঠেছে এসকল চিত্র। স্বজন হারোনো মানুষগুলো ঝুকিপূর্ন ভেড়িবাধেঁ মধ্যে ও বাইরের পরিবারগুলো আজও বেঁচে থাকায় স্বপ্ন দেখে থাকার। স্বজন ও সম্পদ হারানো এই জনপদের মানুষগুলো নানা কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে আজ পালন করছে ভয়াল এই দিনটিকে। বিশ্ব বিবেককে নাড়িয়ে দেয়া সাউথখালীর বর্তমান অবস্থা জানতে সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী উত্তর সাউথখালী গ্রামের ছত্তার ফকির বলেন, ‘পোলা মাইয়্যাসহ ঘরবাড়ি সব হারিয়ে নি:শ্ব জীবন কাটছে কোন মতে। সরকার ও এনজিও থেকে সহযোগিতা পেয়ে বছরের ৬ মাস খেয়ে পড়ে থাকতে হয়। কিন্তু মোগো কেউ কাজের ব্যবস্থা করে দেয় না। মোর ভাইবাগাররা কাজ করতে ঢাকা ও চিটাগাং চলে গেছে। মোগো যদি এহন নিত্য কাজ দেয় তাহলে খেটে পড়ে জীবন বাছবে’।

কথা হয় একই গ্রামের শাহজাহান খান ও রিপন হাওলাদার বলেন, ছেলে-মেয়ে ও ভাই সিডরে হারাইছি। নদী ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি-জায়গাজমি সব গেছে। এহন ভূমিহীন হয়ে রাস্তার পাশে থাকতে হয়। যদি কমংস্থানের সুযোগ হইতো তাহলে জমি কিনে থাহার ঘর বানাইতাম। মোগো এহন সাহায্যে লাগবে না, কাজ করার জায়গা কইর‌্যা দিবে সরকার। এভাবে অনেক পরিবার এখন কর্মসংস্থানের দিকে তাকিয়ে আছে ওই এলাকার মানুষ।

ক্ষতিগ্রস্থ হালিম শাহ বলেন, মোরা সিডরে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। কিন্তু সৌদি সরকারের দেয়া ঘরে স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকা যায় না। তারপরও নিজেদের চেস্টায় কোনমতে বসত করছি। এখানে অনেক সাইক্লোন সেল্টার দেয়া কথা থাকলেও তা হয়নি। তবে শহর এলাকার কাছে বড় বড় সাইক্লোন তৈরী করা হয়েছে। ভেড়িবাধঁ টেকসঁই হয়নি। তারপরও কাজ চাই। দক্ষিণ সাউথখালী গ্রামের এমদাদুল হক মিন্টু বলেন, অপর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র ও বেড়িবাঁধ এ এলাকার মানুষের জন্য অন্যতম সমস্যা। যদি টেকসই বেড়িবাঁধ ও পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়, তাহলে সিডরের মত প্রাকৃতিক দুযোর্গে হতাহতের পরিমাণ অনেক কম হবে।

সাউথখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মোজাম্মেল হোসেন বলেন, সিড়রে তার ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশী লোক মারা গেছে। এবং সম্পদের অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে। স্বজন হারানো এজনপদের মানুষের প্রানের দাবী বসবাসের জন্য একটু ঘর ও টেকশই ভেরীবাঁধ। জনসংখ্যা অনুপাতে হয়নি সাইক্লোন শেল্টার। দুর্যোগের পর বিভিন্ন দাতা সংস্থার অর্থায়নে নির্মিত শেল্টারগুলোর কাজের মান নিম্ন হওয়ায় ইতোমধ্যে তার অধিকাংশ ভবন ব্যবহারের অনুপোযোগি হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা বিদ্যালয়কাম সাইক্লোন শেল্টার গুলোরও। এখনও শতশত পরিবার খুপড়ি ঘরে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে।

রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, শরণখোলাবাসীকে রক্ষার জন্য আবাসন ব্যবস্থা, সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল পেশাজীবিদের বিকল্প কর্মসংস্থানসহ টেকশই বেরীভাঁধ নির্মাণ খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে।

(একে/এসসি/নবেম্বর১৪,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test