E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরীয়তপুর পৌরসভার নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে মরিয়া প্রার্থীরা

২০১৫ নভেম্বর ১৭ ১৫:২৭:১২
শরীয়তপুর পৌরসভার নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে মরিয়া প্রার্থীরা

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : চলতি বছরের ডিসেম্বরে দেশের ২৪৫টি মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন। এর আওতায় দুই বছর আগে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া শরীয়তপুর পৌরসভারও  দীর্ঘ ৭ বছর পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে । অন্য কোন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা চোখে না পরলেও সরকার দলের সম্ভাব্য অনেক প্রার্থীকেই দেখা যাচ্ছে মনোনয়ন লাভে দৌড় ঝাঁপ করতে।

শরীয়তপুর জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত এই পৌরসভাটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পৌরসভা । ১৯৮৫ সালে তৎকালিন শরীয়তপুর সদর উপজেলার পালং, তুলাসার ও আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের অংশ বিশেষ কেটে নিয়ে শরীয়তপুর সদর পৌরসভা গঠন করা হয়। ১৯৮৯ সালে সালে তৃতীয় শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৯৮ সালে ২য় শ্রেণী ও ২০০৭ সালে ১ম শ্রেনীর হিসেবে শরীয়তপুর পৌরসভা স্বীকৃতি লাভ করে। ২০০৮ সালের ৪ আগষ্ট শরীয়তপুর পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

১৮ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে স্থানীয় সরকার সচিবালয় থেকে নির্বাচন কমিশন সচিবের বরাবরে ২০১৩ সালের আগষ্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ শরীয়তপুর পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন করতে একটি নির্দেশনা প্রেরণ করা হয়। কিন্তু ২০১৩ সালের ৩০ জুন তারিখে শরীয়তপুর-১ আসনের সাংসদ ও আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি,এম মোজাম্মেল হক এর কাছে পৌরসভার নিকটবর্তী পালং ইউনিয়নের পূর্বকোটাপাড়া ও নরবালাখানা গ্রামের বাসিন্দারা পৌরসভার অন্তর্ভূক্ত হতে আবেদন করলে তিনি এলাকাবসীর দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে একটি ডি.ও লেটার জমা দেন। এর পর ওই বছর ২৪ জুলাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সাংসদের ডি.ও পত্রের বরাত দিয়ে নির্বাচন স্থগিত রাখার নির্দেশ প্রদান করেন নির্বাচন কমিশনকে। এরপর আর উল্লেখিত গ্রাম দুটি পৌরসভার অন্তর্ভূক্ত করার কার্যক্রমের কোন অগ্রগতি হয়নি। ফলে ৭ বছর ৪ মাস পরে আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

এ বছর দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত অনুমোদনের পর থেকে শরীয়তপুর পৌরসভার আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা মনোনয়ন লাভের আশায় চেষ্টা তদবীর শুরু করে দিয়েছেন। তারা এলাকায় বিভিন্ন ব্যানার, ফ্যাষ্টুন, পোষ্টারের মাধ্যমে দোয়া-সমর্থন চেয়ে নিজেদের প্রার্থী হওয়ার কথা জানাচ্ছেন এলাকাবাসীকে। এই পৌরসভায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পাড়া মহল্লায় নজরে পরার মত গণসংযোগে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী নুরুল আমিন কোতোয়াল। বর্তমান মেয়র আব্দুর রব মুন্সিও পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করছেন এবং দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে উঠান বৈঠক এর মাধ্যমে নিজের বিগত ৭ বছরের দায়িত্ব পালন কালের সফলতা ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে নতুন করে দোয়া প্রার্থনা করছেন।

নির্বাচন নিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের তেমন কোন দলীয় তৎপরতা না থাকলেও হাট বাজার, হোটেল রেস্তোরা, মাঠে ঘাটে এখন একটাই আলোচনা কে কে হবেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী , আর কে-ই বা পাবেন দলীয় মনোনয়ন। তবে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন যুদ্ধ নুরুল আমিন কোতোয়াল ও আব্দুর রব মুন্সির মধ্যে হতে পারে বলে ধারনা করছেন অনেকে।

আসন্ন শরীয়তপুর পৌরসভার নির্বাচনে ক্ষমতাশীন আওয়ামীলীগ ও বিএনপি এ দু’টি দলের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দিতা হওয়ার কথা। আর দুটি দলের মধ্যেই রয়েছে আভ্যন্তরিন দ্বিধা বিভক্তি। জেলা সদরে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির বিাবদমান দুইটি গ্রুপই পরস্পর বিরোধী অবস্থান নিয়ে প্রকাশ্য দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করছে।

শাসক দলের দুই গ্রুপেরই রয়েছে মেয়র পদের জন্য পছন্দের প্রার্থী। একটি গ্রুপের প্রধান ও বর্তমান মেয়র আব্দুর রব মুন্সি নিজেই পুনরায় প্রতিদ্বন্দিতা করতে ইচ্ছুক। তার ভক্ত অনুসারীসহ দলের অনেকেই তার মনোনয়ন প্রাপ্তির জন্য কাজ করছেন। অপর দিকে নুরুল আমিন কোতোয়ালের পক্ষেও রয়েছেন সংগঠনের অনেক প্রভাবশালী নেতা কর্মী, যারা তার মনোনয়ন নিশ্চিতকরণের পক্ষে কাজ করে চলেছেন। আওয়ামীলীগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান পদ্ধতিতে দলীয় মনোনয়ন প্রদানের ধরণ কি হয়, তার উপর নির্ভর করবে প্রার্থী নির্বাচন। তবে স্থানীয় সাংসদ বি, এম মোজাম্মেল হকের ভূমিকার উপরই মনোনয়ন প্রাপ্তি সিংহভাগ নির্ভর করবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের অনেক অভিজ্ঞ ব্যক্তি।

এবারে শরীয়তপুর পৌরসভায় নির্বাচনী লড়াইতে মেয়র পদে মনোনয়ন লাভের জন্য ক্ষমতাশীন আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বর্তমান মেয়র আলহাজ আবদুর রব মুন্সি, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শরীয়তপুর পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আলহাজ নুর মোহাম্মদ কোতোয়াল, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন তোতা মাঝি, জেলা যুবলীগের সভাপতি এম এম জাহাঙ্গীর হোসেন মৃধা, শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও শরীয়তপুর কলেজের সাবেক ভিপি নুরুল আমিন কোতোয়াল, শরীয়তপুর সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারন সম্পাদক জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য ফারুক আহম্মেদ তালুকদার, জেলা ছাত্রলীগের দুই বারের দায়ীত্ব পালনকারী সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাহাড়, পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন পাহাড়ের ছোট ভাই আবুল কালাম আজাদ (আবুল পাহাড়), শরীয়তপুর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুস সালাম বেপারী প্রমুখ।

বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে এখনো তালিকায় রয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি ও সাবেক মেয়র সরদার এ কে এম নাসির উদ্দিন কালু । এ ছাড়া ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ও পুরুষ কাউন্সিলর প্রার্থীরা ও আশীর্বাদ প্রাপ্তির আশায় স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ নেতাদের কাছে ধর্না দিচ্ছে।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরদার একেএম নাসির উদ্দিন কালু বলেন, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা কম। নির্বাচন সংঘাতময় ও একচেটিয়া হওয়ার আশংকা রয়েছে। এরপরও যদি আমার দল (বিএনপি) নির্বাচন করার স্বপক্ষে সম্মত হয় এবং আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবো।

শরীয়তপুর জেলা নির্বাচন অফিসার শেখ মো. জালাল উদ্দিন জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে সংসদ সদস্যের ডি.ও পত্রের রবাত দিয়ে শরীয়তপুর পৌরসভায় নতুন এলাকা অন্তর্ভূক্তির জন্য সেই সময়ে নির্বাচন স্থগিত করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু সে কার্যক্রমের আর কোন অগ্রগতি হয়নি। নির্বাচন কমিশন থেকে আমি তালিকা পেয়েছি জেলার ৫টি মেয়াদ উত্তীর্ণ পৌরসভায় নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য। তফশীল ঘোষণার সাথে সাথে আমরা নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় কর্মকাণ্ড শুরু করবো।

শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়াশীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি, এম মোজাম্মেল হক বলেন, দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সৎ, যোগ্য, নিষ্ঠাবান ও জনগণের কাছে গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনীত করা হবে। কোন দুর্নীতিবাজ বা সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষককে আগামী পৌর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রদান করা হবে না।

(কেএনআই/এএস/নভেম্বর ১৭, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test