E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

খুনিয়াদীঘির নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের কথা আজো মানুষ ভুলেনি

২০১৫ নভেম্বর ২৩ ১৬:০৯:৫২
খুনিয়াদীঘির নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের কথা আজো মানুষ ভুলেনি

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি : বিজয়ের মাস ডিসেম্বর আসলেই ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার হানাদারদের সেই লোমহর্ষক নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের কথা স্মরণ করে শিউরে ওঠে এই উপজেলার মানুষ।

বিভিন্ন এলাকা থেকে স্বাধীনতাকামী নিরীহ লোকজনকে ধরে এনে মুক্তিযোদ্ধাদের খবর জানতে ঐতিহাসিক খুনিয়া দীঘির পাড়ে একটি শিমুল গাছের সাথে হাতের তালুতে লোহার পেরেক গেঁথে ঝুলিয়ে রেখে রাইফেলের বাট ও বেয়োনেট দিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানোর পর দীঘির পাড়ে দাঁড় করে ব্রাশ ফায়ারে হত্যার পর হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকাররা লাশ ভাসিয়ে দিত দীঘির পানিতে।

সেখানেই লাশগুলো পচে গলে পানির সাথে মিশে যেত। হাজার হাজার লাশ আর রক্তে দীঘির পানির রং সব সময়ই থাকতো টকটকে লাল। খান সেনারা স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় এলাকার যুবতি ও সুন্দরী নারীদের পিতা-মাতা এবং স্বামীর উপস্থিতিতেই ধরে এনে ক্যাম্পে আটকে রেখে চালাতো পাশবিক নির্যাতন। এ কথা শুনলে গা শিউরে ওঠে। ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুরতম নির্যাতনের বর্ণনা করতে গিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের পঞ্চাশোর্ধ এ নির্যাতিতা বিধবা উপরোক্ত কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ক্ষণিকের মধ্যে নিজেকে সামলে তিনি আরো বলেন- বিয়ের ছ’মাসের মাথায় তার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায় পাক সেনারা। ক্যাম্পে আটকে রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের খবর জানতে রাতে তার ওপর বর্বর নির্যাতন চালায় ওরা। পরদিন সকাল বেলায় সলিম উদ্দীন নামক এক রাজাকার তার কাছে এসে জানায়, তিনি ক্যাম্পে গেলে তার স্বামীকে ছেড়ে দেয়া হবে। তার কোন ক্ষতি হবে না।

পতিভক্তি ঐ নারী স্বামীকে বাঁচাতে ছুটে যান ক্যাম্পে। সেখানে গিয়ে দেখেন, তার মত অনেক নারীকে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের কাছে জানতে পারেন, সময়ে অসময়ে খান সেনারা তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে চালায় নানা পাশবিক নির্যাতন। তার বেলাতেও এর ব্যতিক্রম হয় নি। শত আকুতি মিনতি করেও তার কথা শুনে নি ওরা। ছেড়ে দেয়নি তার স্বামীকে। একাধারে ৪ রাত সেখানে বন্দী থেকে নানা নির্যাতন সহ্য করে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন। তিনি পরে জানতে পারেন, তার স্বামীকে মেরে ফেলেছে ওরা।

জানা যায়, খান সেনারা স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল, হরিপুর উপজেলার কয়েক হাজার লোককে ধরে নিয়ে এসে রাণীশংকৈলের খুনিয়াদীঘি পাড়ের একটি শিমুল গাছের সাথে হাতের তালুতে লোহার পেরেক মেরে ঝুলিয়ে রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের খবর জানতে নানা নির্যাতন চালায়। পরে হত্যা করে লাশ ভাসিয়ে দিত দীঘির পানিতে। ঐ এলাকায় স্থাপিত সেনা ক্যাম্পে নারীর ওপর চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। এতে অনেকে অন্ত:সত্ত্বা হয়ে পড়েন। দেশ স্বাধীনের পর অনেকের কোলে জন্ম নেয় পিতৃ পরিচয়হীন অনেক সন্তান।

যাদের আর পুনর্বাসন করা হয় নি। খুনিয়াদীঘির পাড়ে পাক বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের নীরব স্বাক্ষী সেই শিমুল গাছটি এখন ডালপালা বিস্তার করে বিরাট আকার ধারণ করেছে। শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে ঐ পুকুর পাড়ে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।

তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এনামুল হক জানান, ২০১২ সালে টেন্ডারের মাধ্যমে আরসিসি পিলার দিয়ে বাউন্ডারী ওয়াল গ্রীল সহ মোট ৯ লক্ষ টাকার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ইয়াশিন আলী বলেন- মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে ধরে রাখতে প্রয়োজনে বাউন্ডারী ওয়াল দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে স্মৃতি সৌধ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।সংরক্ষিত ৩০১ আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা জাহান লিটা বলেন, খুনিয়াদীঘির স্মৃতিকে ধরে রাখতে নতুন প্রজন্মকে জানার জন্য দর্শনার্থী স্থান ও জাতীয় পর্যায়ের আঙ্গিকে স্মৃতি সৌধ তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে।

(কেএএস/এএস/নভেম্বর ২৩, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test