E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নৌকা নিয়ে কাড়াকাড়ি, পদত্যাগ আবার পদত্যাগ প্রত্যাহার

২০১৫ ডিসেম্বর ০৭ ১৫:২৬:৩২
নৌকা নিয়ে কাড়াকাড়ি, পদত্যাগ আবার পদত্যাগ প্রত্যাহার

মাদারীপুর প্রতিনিধি : আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নৌকা নিয়ে কাড়াকাড়িতে গলদঘর্ম অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে কালকিনি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের। সভা সেমিনারসহ প্রথমে পদত্যাগ আবার শনিবার সন্ধ্যায় পদত্যাগ প্রত্যাহারসহ নানা কর্মকাণ্ডে উপজেলা আওয়ামী লীগ ব্যস্ত সময় পার করলেও বসে নেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচারণা তুঙ্গে থাকায় সাধারণ ভোটাররাও তাদের প্রতি আস্তে আস্তে আস্থা রাখতে শুরু করেছে বলে একাধিক ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, কালকিনি পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র এনায়েত হোসেন হাওলাদার, স্বতন্ত্র পদে কালকিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মশিউর রহমান সবুজ, কালকিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য লোকমান হোসেন ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

এছাড়াও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের লুৎফর রহমান মনোনয়নপত্র জমা দিলেও তা যাচাই বাচাই এর পর বাতিল হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর এনায়েত হোসেন হাওলাদার, আবুল কালাম আজাদ, খোকন বেপারী, ওয়াহিদুজ্জান বুলেট, সোহেল রানা মিঠু, আশরাফ হোসেন বেপারী এই আওয়ামীলীগের ৬ নেতা দলীয় মনোনয়ন পেতে উপর মহলে লবিং এবং সাধারণ ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে গণসংযোগ শুরু করে। প্রথম দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও পৌর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপায়ান্তর না দেখে ৬ জনকে এক মঞ্চে দাঁড় করিয়ে গণসংযোগ শুরু করে।

চূড়ান্তভাবে দলের মনোনয়নের টিকিট মেলে বর্তমান পৌরসভার মেয়র এনায়েত হোসেন হাওলাদারের। এতে করে মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবিতে উপজেলা আওয়ালীগের নেতাকর্মী সমর্থকদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে কালকিনির রাজপদ। তারা কালকিনি উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ কালকিনি পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদকে তাদের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে আন্দোলন শুরু করে। এতে করে দলীয় টিকিট এনায়েত হোসেন হাওলাদারের পক্ষে থাকলেও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সমর্থন থাকে আবুল কালাম আজাদের প্রতি। চলতে থাকে দুই প্রার্থীর সমর্থদের মধ্যে নৌকা নিয়ে কারাকারি সেই সাথে চলে দফায় দফায় সভা।

এতে করেও উপজেলা আওয়ামীলীগের আন্দোলন বন্ধ না হয়ে উল্টো ২ ডিসেম্বর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি তাহমিনা সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক মীর গোলাম ফারুকের নেতৃত্বে চলে নেতা-কর্মীদের গণপদত্যাগের ঘোষণা। এ সময় জেলা আওয়ামীলীগের কাছে দপ্তর সম্পাদকের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র পাঠায় উপজেলা আওয়ামীলীগ।

ঐদিনই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের গণপদত্যাগের ঘোষণাসহ নেতাকর্মীরা জানায়, কালকিনি উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা মেয়র পদে কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিলুর রহমান সোহাগ তালুকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও খায়রুল আলম খোকন বেপারী, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপকমিটির সহ-সম্পাদক সোহেল রানা মিঠু ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি অহেদুজ্জামান বুলেটের নাম প্রস্তাব করে জেলা কমিটির কাছে পাঠানো হয়।

পরে দলীয়ভাবে একক নাম চাওয়া হলে তখন শুধুমাত্র আবুল কালাম আজাদের নাম লিখে পাঠানো হয়। কিন্তু পরবর্তীতে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে কাউকে না জানিয়ে একক সিদ্ধান্ত মতে তার পছন্দের প্রার্থী কালকিনি পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ইমারত হোসেন হাওলাদারের ছোট ভাই বর্তমান মেয়র এনায়েত হোসেন হাওলাদারের নাম কেন্দ্রে প্রস্তাব করে মনোনয়ন দেওয়ায় এই গণপদত্যাগ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে এর বিরুদ্ধে কোটি টাকার বিনিময়ে এনায়েত হোসেন হাওলাদারের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনের দুইদিন পর ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে গণপদত্যাগ প্রত্যাহারের ঘোষণা প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাংবাদিকদের জানানো হয়।

এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নের্তৃবৃন্দ, মাদারীপুর জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে কয়েক দফা মিটিং করেও সমাধানে পৌছাতে না পারায় সর্বশেষ রবিবার নেতৃবৃন্দ ঢাকায় অবস্থান করেছেন। সেখানে নতুন করে মিটিংয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

অপরদিকে নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগের কাড়াকাড়িকে কাজে লাগিয়ে মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরদার লোকমান হোসেন ও মশিউর রহমান সবুজ তাদের সক্রিয়কর্মী সমর্থক নিয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

এ ব্যাপারে মশিউর রহমান সবুজ বলেন, দলীয় নয় বিজয় অর্জনে আমি জনগণের মনোনয়ন পেতে চাই।

অপর স্বতন্ত্রপ্রার্থী লোকমান হোসেন বলেন, জনগণ যাকে যোগ্য মনে করবেন সেই নির্বাচিত হবেন।

দলীয়ভাবে আওয়ামীলীগের মেয়রপ্রার্থী এনায়েত হোসেন হাওলাদার বলেন, আমাকে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আমি আশা করছি সবাই আমার পাশে থেকে দলকে সম্মান জানাবেন।

অপরপ্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগ আমার পক্ষে কাজ করছে। সাধারণ জনগণও আমার পাশে আছে। আশা করছি জনগণের আর্শিবাদে আমি বিজয় হতে পারবো।

কালকিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর গোলাম ফারুক বলেন, জেলা আওয়ামীলীগ আমাদের নেতাকর্মীদের প্রস্তাবকৃত নামের মধ্যে কাউকে মনোনয়ন না দিয়ে জেলার নেতাদের মনোনীত প্রার্থীকে নৌকা মার্কার প্রতিক দেওয়ায় উপজেলা আওয়ামীলীগ ও তার সকল অঙ্গ সংগঠনের সকলেই পদ থেকে পদত্যাগ নিয়েছিলো। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় স্বিদ্ধান্তমতে আবার পদত্যাগ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ইমারাত হোসেনের ভাই মো. এনায়েত হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়ায় আমার ক্ষুদ্ধ। আমরা তৃণমূল পর্যায়ে আবুল কালাম আজাদকে চাই।

এ ব্যাপারে কালকিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি তাহমিনা সিদ্দিকী একই কথা বলেন।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে বলেন, মনোনয়ন দেওয়া মালিক আমি না। মনোনয়ন দেওয়ার মালিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা।

(এএসএ/এএস/ডিসেম্বর ০৭, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test