E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

গাংনীতে প্রবাসীর শিশু পুত্র অন্তরকে অপহরণ করে হত্যা

২০১৫ ডিসেম্বর ১১ ১৫:৪৯:২২
গাংনীতে প্রবাসীর শিশু পুত্র অন্তরকে অপহরণ করে হত্যা

মেহেরপুর প্রতিনিধি : নিখোঁজের চার ঘন্টা পর স্কুল ছাত্র অন্তরকে (৮) মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করা হলেও শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি। উদ্ধারের সময় নিভু নিভু করা অন্তর আত্মা শেষ পর্যন্ত সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে। মুক্তিপণের দাবিতে অপরণ করে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানায় পরিবার ও এলাকাবাসী।

নিহত অন্তর মেহেরপুর গাংনী উপজেলার বাওট গ্রামের সৌদি প্রবাসী কাফিরুল ইসলামের ছেলে। সে বাওট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র ছিল। অপহরণ ও হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত একই গ্রামের চিহ্নিত সন্ত্রাসী সবুজের বাড়িঘর ভাংচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। অবশ্য সন্ধ্যার পর থেকে সবুজের পিতামাতাসহ পরিবারের সবাই আত্মগোপনে রয়েছে। তাদেরকে খুঁজে বের করতে গ্রামবাসী রাতভর বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে।

নিহত অন্তরের পরিবার ও গ্রাম সূত্রে জানা গেছে, নিহত অন্তরের ছোট চাচা জাকিরুল সিঙ্গাপুর থেকে বাড়ি ফিরলে সম্প্রতি নিজ বাড়িতেই বিদ্যুতস্পৃষ্টে নিহত হয়। এ খরব পেয়ে গত দুই মাস আগে ছুটিতে বাড়ি ফিরেছেন অন্তরের পিতা। এক ছেলে ও এক মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে ভালই কাটছিল তার ছুটির সময়। প্রতিদিনের ন্যায় বৃহস্পিতবার বিকেলে অন্তরকে বাড়ির পার্শ্ববর্তী বাওট সোলাইমানী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে খেলার জন্য রেখে অন্যত্র চলে যান কাফিরুল ইসলাম। সন্ধ্যায় তিনি বাড়ি ফিরলেও ছেলে না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। কিন্তু কোথাও কোন খোঁজ না পেয়ে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গ্রামের মসজিদের মাইকে নিখোঁজ সংবাদ প্রচার করা হয় । এরপরও কোন হদিস না মেলায় ‘আসন্ন বিপদের অশনি সংকেত’ নাড়া দিতে থাকে পিতামাতার মনে। গ্রামবাসীর প্রচেষ্টায় রাত নয়টার দিকে বিদ্যালয়ের কমনরুমের মধ্যে অন্তরের সন্ধান মেলে।

উদ্ধারের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন জানান, অন্তরের হাত-পা কাপড় দিয়ে পেছনের দিকে বাঁধা ছিল। মুখও ছিল বাঁধা। মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে দ্রুত বামন্দীর একটি ক্লিনিকে নেওয়া হয়। সেখান থেকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসাতালে নেওয়া হলে রাত সাড়ে দশটার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক অন্তরকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর খবরে পিতামাতা মুর্ছা যাওয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশী থেকে শোক ছাপিয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা গ্রামের মানুষের মাঝে। অন্তর হারানোা পরিবারে এখন চলছে শোকের মাতম। এলাকা সুত্রে আরো জানা যায়, অন্তরের প্রতিবেশী গোলাম মোস্তফার ছেলে সবুজ হোসেন মুক্তিপণের দাবিতে অন্তরকে কৌশলে অপহরণ করে। সবুজের বাড়ির ভেতর দিয়েই কাফিরুলের পরিবারের লোকজনের চলাফেরার পথ। খেলার মাঠ থেকে অন্তর বাড়ি ফেরার পথে কৌশলে সবুজ তাকে অপহরণ করে নিজ ঘরের মধ্যে হাত-পা বেঁধে আটকে রাখে। গ্রামের মানুষের তৎপরতায় কোন কিছু করতে না পেরে অন্তরকে স্বাসরোধ করে অথবা বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন গ্রামবাসী।
কাফিরুলের ঘনিষ্ট একই গ্রামের সাহাবুল ইসলাম জানান, সন্ধ্যার পর কাফিরুলের ভাই জাব্বারুল ইসলামের কাছ থেকে কাফিরুলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহের চেষ্টা করে সন্ত্রাসী সবুজ। এতে পরিবারের সন্দেহ বেড়ে যায়। পরে সবুজকে গ্রামের লোকজন জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার কথাবার্তায় অসংঙ্গতি ধরা পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে কৌশলে সেখান থেকে সটকে পড়ে সবুজ। এর কিছুক্ষণ পরেই সবুজের বসত ঘরের পাশর্^বর্তী বিদ্যালয়ের কমনরুম থেকে অন্তরকে উদ্ধার করা হয়। অন্তরকে উদ্ধার করা ওই কমনরুমের পেছনে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেপটিক ট্যাংক। ওই ট্যাংকের উপরের অংশ ভেঙ্গে ফাঁকা করা হয়। অন্তরকে হত্যা করে ট্যাংকের মধ্যে ফেলে রাখার সিদ্ধান্ত ছিল বলে ধারণা গ্রামবাসীর। এছাড়াও অন্তরকে বেঁধে রাখা শাড়ির ছেড়া কাপড় সবুজের পরিবারের কারো বলেও মনে করছেন তারা। অন্তরকে খোঁজার এক পর্যায়ে যখন গ্রামের লোকজন সবুজের বাড়িতে যায় তখন ঘরের মধ্যে শাড়ির ছেড়া কিছু টুকরা দেখতে পান তারা। এতে তারা ধারণা করছেন যে, অন্তরকে অপহরণ করে প্রথমে সবুজের ঘরের মধ্যেই রাখা হয়। পরে বিদ্যালয়ের সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে ফেলার উদ্দেশ্যে বিদ্যালয়ের কমনরুমে নেওয়া হতে পারে। এলাকাবাসী সবুজ ও তার পরিবারের লোকজনকে খুঁজতে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি করে। সবুজের কোন হদিস মেলেনি। তবে বিক্ষুদ্ধ উত্তেজিত গ্রামবাসী সবুজের বাড়িঘর ভাংচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়।

খবর পেয়ে রাতেই গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে সবুজকে আটকের অভিযানে যোগ দেন। এসময় সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওসি। তিনি বলেন, বাওট গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য নিয়ামত আলী এবং হোগলবাড়ীয়া গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান আতু প্রায়ই সবুজের বিষয়ে তদবির করতেন। তারা দু’জন মিলে সম্প্রতি তাকে জামিন করে বাড়ি নিয়ে আসে। সবুজকে ভাল মানুষ হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করে। পুলিশ সুপারের কাছেও সহযোগিতা কামনা করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের এই দুই নেতা। তিনি আরো বলেন, সবুজের বিরুদ্ধে অস্ত্র, বিষ্ফোরক দ্রুব্য ও ইটভাটায় মোবাইলে চাঁদাবাজিসহ গাংনী থানায় ৫টি মামলা রয়েছে। চলতি বছরের ১৬ মার্চ তাকে বাওট গ্রাম থেকে সর্বশেষ গ্রেফতার করেছিল গাংনী থানা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পুলিশকে দেয় সবুজ। তাই সবুজ জামিন হলে তার উপর বিশেষ নজরদারী করার চেষ্টা ছিল পুলিশের।

গাংনী থানার ওসি আকরাম হোসেন আরো জানান, নিহত অন্তরের লাশ কুষ্টিয়া মেডিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার দুপুরের দিকে বাড়ি পৌছাতে পারে। এ ঘটনায় মামলার দায়েরের প্রস্তুতির পাশাপাশি সবুজকে গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। যেকোন মূল্যে তাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করতে পুলিশের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।

(এমআইএম/এইচআর/ডিসেম্বর ১১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test