E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দুবলার চরে ব্যাহত হচ্ছে শুঁটকি উৎপাদন

২০১৫ ডিসেম্বর ১৪ ১৯:০৩:০০
দুবলার চরে ব্যাহত হচ্ছে শুঁটকি উৎপাদন

বাগেরহাট প্রতিনিধি : দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে চলতি মৌসুমে দুবলার চরে জেলেরা মাছ আহরন ও শুঁটকি তৈরির কাজের অনুমতি পেলেও সুন্দরবন বিভাগের শর্ত আর কর্মকর্তাদের তদারকিতে জেলেরা পড়েছে চরম বিপাকে। অনুমতি পেলেও অতিরিক্ত শর্ত আরোপের কারণে ব্যাহত হচ্ছে  মাছ আহরন ও শুঁটকি তৈরির কাজের। আর জেলে পল্লীর ১০ হাজার জেলেদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে হতাশা।

দুবলার চরে শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে এবারও জেলেদের আগ্রহ ছিল অনেক। জেলেরা জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এবার মাছও ধরা পড়েছে বেশি। এ মৌসুমে জেলেরা বনহীন চরেই ঘর নির্মাণ করেন। আর জেলেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য গড়ে ওঠে দোকান। এ বছর সুন্দরবন বিভাগ আট হাত প্রস্থ আর ১৬ হাত দৈর্ঘ্যরে ঘর করা অনুমতি দিয়েছে। জেলেরা জানিয়েছেন, এত ছোট ঘরে মানুষ ও মালামালের জায়গা কোনো ভাবেই হচ্ছে না।এদিকে প্রায় এক মাস আগে দুবলার চরে বসা দোকানপাটও উচ্ছেদ করে দিচ্ছে সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তারা। উচ্ছেদের কারণে লোকসানে পথে বসে যেতে বসেছেন এসব এলাকার দোকানিরা।

জেলেদের ঘর ভাংগছে সুন্দরবন বিভাগ : চলতি মৌসুমকে ঘিরে বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটছে জেলে পল্লীর হাজার হাজার জেলে-মহাজন ও দোকানির। শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে দুবলার চরের আলোরকোল, অফিসকিল্লা, মেহের আলীর চর, নারকেলবাড়িয়া, শেলা, ছাপড়াখালীসহ বিভিন্ন চরে ১০ হাজার জেলে পাঁচ-ছয় মাসের জন্য অস্থায়ী ভাবে বসতি গড়ে তোলে। প্রতিবছর অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সাগর থেকে মাছ আহরণ করে চরগুলোতে শুঁটকি তৈরির কাজ করে থাকেন জেলেরা। তবে এ বছর চরে গিয়ে জেলেরা ঘর তোলার পর নানা অজুহাতে তা দফায় দফায় ভেঙে দিচ্ছে সুন্দরবন বিভাগ। জেলেরা তাদের চাহিদা ও প্রয়োজন মতো ঘর নির্মাণ করে সেখানে বসবাসসহ শুঁটকি ও অন্যান্য মালামাল রাখেন। প্রতিটি জেলে-মহাজনের নিয়ন্ত্রণে থাকে কমপক্ষে ২০-২২জন থেকে শুরু করে ৫০ জনেরও বেশি জেলে। কিন্তু সেই তুলনা ঘর তুলতে দিচ্ছে না সুন্দরবন বিভাগ।

সুন্দরবন বিভাগের বেধে দেয়া মাপ মতো বানানো ঘরে জেলেরা থাকতে পারছে না। জেলেদের রাতে সুন্দরবনের বনহীন চরে খোলা আকাশের নিচে ঘুমাতে হচ্ছে। মালামালও রাখতে হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। এতে বিশেষ করে শুঁটকি ও কাঁচা মাছ রাখতে তাদের দারুন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। চরের ক্ষুদ্র শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. আবুল বাসার বলেন, চরে প্রথম পর্যায়ে জেলেরা যে ঘর তুলেছিলেন, তা বড় হয়েছে বলে বন বিভাগ ভাঙচুর করে ছোট করে দিচ্ছে। এর ফলে এই ঘরগুলোতে মালামাল রাখার পর জেলেদের ঘুমানোর জায়গা থাকছে না। প্রতিনিয়িত বাঘ, শূকর, সাপসহ হিংস্র বন্য প্রাণীর আক্রমণের শঙ্কা ও ভয়ভীতি নিয়ে খোলা আকাশের নিচে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাত্রিযাপন করতে হচ্ছে।

দুবলার চরের দোকান উচ্ছেদ : চরের দোকানি ফারুক হোসেন, কামরুল, আমিন ও ফরহাদ বলেন, শুঁটকি মৌসুম শুরু হলে আমরা জেলেদের সঙ্গে এসে এখানে দোকানপাট বসিয়ে থাকি। বেচাকেনা করে থাকি চরের জেলে ও মহাজনদের সঙ্গে। তবে এ বছর আমাদের সকল দোকান ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। দোকানি ফারুক বলেন, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে চরে দোকান দিয়ে আসছি। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে দোকানপাট বসতে দিলেও এবার হঠাৎ করে এক মাস পর আমাদের উঠিয়ে দিচ্ছে। আমার এইর মধ্যে চরে ৪০-৫০ লাখ টাকা বাকি পড়েছে। এই মুহূর্তে উঠিয়ে দিলে আমি এই টাকা ওঠার কীভাবে। এখান থেকে বাড়ি ফিরে গেলে আমাকে পথে বসতে হবে। তাই আমি বন বিভাগের কাছে জোর দাবি ও অনুরোধ জানাচ্ছি যে, অন্তত চলতি মৌসুমটা যেন আমাদের এখানে থাকতে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে দুবলা বন কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বছর চরে ৫৩৫টি জেলেঘর নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। যাঁরা শর্ত না মেনে অতিরিক্ত বড় ঘর তুলেছে তাদের ঘর মাপমতো রেখে বাকি অংশ ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ৫৩৫টি ঘরের বাইরে যেসব দোকানপাট (ওষুধ, সেলুন, মুদি, হোটেল) রয়েছে তা অবৈধ বলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আমরা ভেঙে দিয়েছি।

(একে/এএস/ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test