E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নওগাঁয় বিনামূল্যের পাঠ্যবই টাকা নিয়ে বিতরণের অভিযোগ

২০১৬ জানুয়ারি ০২ ১৭:০৬:২৩
নওগাঁয় বিনামূল্যের পাঠ্যবই টাকা নিয়ে বিতরণের অভিযোগ

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মান্দায় ও রানীনগরে সরকার প্রদত্ত বিনামূল্যের পাঠ্যবই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টাকা নিয়ে বিতরণের অভিযোগ উঠেছে। টাকা দিতে না পারায় অনেক শিক্ষার্থীকে বই দেয়া হয়নি। খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাদের। এনিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মান্দা এসসি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এবং রাণীনগর উপজেলার বড়খোল উচ্চ বিদ্যালয় ও ত্রিমোহিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বই বিতরণের সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্ট অভিভাবকরা।

জানা গেছে, শুক্রবার বই উৎসবের দিনে মান্দা এসসি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ১শ’ টাকা করে নিয়ে পাঠ্যবই দেয়া হয়। শনিবারও শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে একইহারে টাকা নিয়ে বই দেয়া হয়েছে। যেসকল শিক্ষার্থীরা টাকা দিতে পারেনি তাদেরকে বই দেয়া হয়নি। নতুন বই হাতে না পেয়ে ক্ষোভ আর হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাদের।


শিক্ষার্থী শাকিল হোসেন, রাজু হোসেন, মমতা আক্তার, রবিউল ইসলাম, হুমায়ন কবির, সাবিনা খাতুন, লাকি আক্তার জানায়, মান্দা এসসি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তারা নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। একই প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থী রাবেয়া আক্তার ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে সপ্তম, সামসুজ্জোহা ও নাসিরুল ইসলাম সপ্তম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উঠেছে। এসব শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নতুন পাঠ্যবই দেয়ার জন্য তাদের প্রত্যেকের নিকট থেকে বাধ্যতামুলক ১শ’ টাকা করে আদায় করেছে শিক্ষকরা। প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী অলক কুমার কুন্ডু ও ভোকেশনাল শাখার কম্পিউটার বিষয়ের শিক্ষক ইউসুফ আলী শামীম তাদের নিকট থেকে এ টাকা আদায় করেন বলে শিক্ষার্থীরা জানায়। শিক্ষার্থী শাকিল হোসেন ও হুমায়ন কবির টাকা দিতে না পারায় শিক্ষকরা তাদের বই দেননি।


শিক্ষার্থী অভিভাবক কামরুজ্জামান, খোরশেদ আলম, আশরাফুল ইসলামসহ আরো অনেকের অভিযোগ, সরকারের দেয়া বিনামূল্যের বই শিক্ষকরা টাকা নিয়ে বিতরণ করছেন। ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, এতে সরকারের লক্ষ্য উদ্দেশ্য চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে।


প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে সেশন ফি বাবদ ১শ’ টাকা করে নেয়া হয়েছে। বিষয়টি পত্রিকায় লেখালেখি না করতে সাংবাদিকদের অনুরোধ জানান তিনি।
অপরদিকে রাণীনগর উপজেলার বড়খোল উচ্চ বিদ্যালয় ও ত্রিমোহিনী উচ্চ বিদ্যালয়ে বই বিতরণের সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই দেয়ার কথা বলে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩০ টাকা এবং ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৪০ টাকা করে নেয়া হয়েছে।


বড়খোল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন এই অর্থ নেয়ার কথা স্বীকার করে জানান, শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টাকা নেয়া হয়েছে নওগাঁ জেলা শহর থেকে বইগুলো আনার জন্য পরিবহন ব্যয় বাবদ। এর আগেও নেয়া হয়েছে, কোন অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। যেহেতু এবার অভিযোগ উঠেছে কাজেই যে টাকা নেয়া হয়েছে তা ফেরত দেয়া হবে বলে দম্ভ করে বলেন তিনি।


বড়খোল গ্রামের অভিভাবক জাহিদ খান জানান, বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য এই প্রধান শিক্ষক প্রতিবছর এরকম সরকার বিরোধী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। বই বিতরন এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে বে-আইনী ও বিতর্কিত কাজ করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার কাজেই লিপ্ত থাকেন তিনি।


অপরদিকে ত্রিমোহিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দয়ারাম সাহা বই বিতরণের জন্য টাকা নেয়ার অভিযোগ মিথ্যে দাবী করে জানান, যে টাকা নেয়া হয়েছে সেটি বই দেয়ার জন্য নয়। সেই টাকা সেশন ফি এবং অন্যান্য ফি বাবদ আদায় করা হয়েছে।


নওগাঁ জেলা শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীদের হাতে সম্পূর্ন বিনামূল্যে বই সরবরাহ করছে সরকার। বই দিয়ে টাকা নেয়া একটি বড় অপরাধ। যদি ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টাকা নিয়ে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(বিএম/এইচআর/জানুয়ারি ০২, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test