E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চাটমোহরে পরাজিত আ’লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখ্যান

২০১৬ জানুয়ারি ০৩ ১৪:৫১:২৩
চাটমোহরে পরাজিত আ’লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখ্যান

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি :পাবনার চাটমোহর পৌরসভা নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন, নীল নকশার নির্বাচন দাবি করে নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত পরাজিত মেয়র প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন সাখো।

পৌর সদরের নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান অ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন সাখো। একই সাথে তিনি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিও করেন ।

অ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন সাখো তার বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে দেশের সব নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু চাটমোহর পৌরসভার নির্বাচনে তার ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করেছেন চাটমোহরের প্রশাসন। তারা নির্বাচনের আগে থেকেই নৌকা প্রতিকের প্রার্থীকে যেকোনো মূল্যে হারানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন। তারা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে নৌকা প্রতীকের নেতাকর্মী সমর্থকদের নানাভাবে হয়রানী করেছেন বলে অভিযোগ করেন সাখো। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগের দিন সিভিল পুলিশকে সাথে নিয়ে প্রকাশ্যে ভোটারদের মাঝে টাকা বিতরণ করেছেন দুলাল মির্জার ছোট ভাই জুয়েল মির্জা। বিভিন্ন এলাকায় আমার কর্মী সমর্থকদের প্রচারণায় বাধা দান, মারধর করেছে বিদ্রোহীর প্রার্থীর লোকজন। থানায় অভিযোগ দিতে গেলে ওসি অভিযোগ না নিয়ে উল্টো তাদের হুমকি দিয়েছেন। এ বিষয়ে আমি জানতে গেলে তারা (প্রশাসন) বলেছে, নৌকার জামানত থাকবেনা। ইউএনও, এসি ল্যান্ড, ওসি, নির্বাচন কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, এমপি সাহেব যেভাবে বলবেন সেভাবে কাজ হবে, তার নির্দেশে চলতে হবে।

সাখো আরও বলেন, নির্বাচনের আগেরদিন বিকেলে আমার বাসায় এজেন্ট ফরম নেওয়ার জন্য নেতাকর্মী আসলে এসি ল্যান্ডের নেতৃত্বে ১২টি গাড়ি আমার বাসা ঘিরে ফেলে, পুলিশ লাঠিচার্জ করে নেতাকর্মীদের উপর। আমি কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমপির নির্দেশ বাস্তবায়ন করছেন তারা। নির্বাচনে দিন সকাল ৬টায় নৌকার ব্যাচ লাগানো আমার একটি কর্মীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন চালায় পুলিশ। সকাল ৮টায় বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে আমার কর্মীদের শরীর থেকে নৌকার ব্যাচ খুলে নিয়েছে তারা। অনেক কর্মীকে ভোট দিতে দেয়নি। ১ নাম্বার ওয়ার্ডে নির্বাচনী অফিসের মধ্যে পুলিশের উপস্থিতিতে আমার কর্মী মহররমকে মারধর করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী। নির্বাচনের পরদিন নতুন বাজারে নিমাইচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান খোকনকে মারধর করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী ও তার লোকজন। নতুন বাজার নিশিপাড়া এলাকার আ’লীগ কর্মী মোতালেবকে তার দোকান তুলে দেয়ার হুমকী দিচ্ছেন বিদ্রোহী প্রার্থী। আনিছুর রহমান বাবু নামের এক নেতাকে ছোড়া নিয়ে তাড়া করেছেন যুবলীগের সেক্রেটারী সাইদুল। দোলং এ সাখাত নামের এক যুবক চাঁদাবাজীর মাধ্যমে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছে। ছাত্রলীগ সভাপতি আলিম বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছে। বিদ্রোহী প্রার্থী দুলাল মির্জা নিজেকে এখন ‘এমপির র‌্যাব’ বলে পরিচয় দিচ্ছেন। থানায় অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ অভিযোগ না নিয়ে এমপির দলে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে আমার নেতাকর্মীদের। ভোটের দিন পুলিশের গাড়িতে করে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে গেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী। কিন্তু প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি। আমি সরকারের র‌্যাব দেখে ভয় পাইনা। কিন্তু এখন ‘এমপির র‌্যাব’ দেখে আমি ভয় পাচ্ছি। অ্যাড সাখো বলেন, নির্বাচনের দিন বেলা ২টার দিকে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রের বুথ থেকে জেনেছি ভোট কাস্ট হয়েছে ৩০%। আর তিনটার পর কোনো কেন্দ্রে আমাদের কর্মীদের থাকতে দেয়া হয়নি। বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক ভোট কারচুপি করে ব্যালট বাক্স ভরা হয়েছে। কি ভোট হয়েছে আপনারা ভাল জানেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ইউএনও, এসি ল্যান্ড, নির্বাচন কর্মকর্তা তাদের তৈরী করা ফলাফল ঘোষণা করেছেন। যাতে পৌরবাসীর রায়ের সঠিক প্রতিফলন ঘটেনি, ভোটারদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। নির্বাচনের পরদিন বিদ্রোহী প্রার্থী ও তার সমর্থকরা এমপির সাথে দেখা করতে গেছেন, এমপি তাদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেছেন। এমপি নাকি গুনাইগাছা মাঠে তাদের সংবর্ধনা দেবেন। শনিবার দুপুরে পুলিশী পাহাড়ায় নির্বাচনী আচরণবিধি ভেঙ্গে বিজয় মিছিল করলেন বিদ্রোহী প্রার্থী ও তার সমর্থকরা। কিন্তু প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছেন। রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। সাখাওয়াত হোসেন সাখো আরও বলেন, আজ আমাদের নেতাকর্মী ও পৌরবাসীর পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের ইচ্ছার রায়ের প্রতিফলন ঘটেনি। তারা ফুঁসছে। তারা যেকোনো সময় এর প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তখন সাংবাদিকদের সঠিক সংবাদ পরিবেশনের জন্য আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, এরপর যা হয় তার দায়ভার বহন করতে হবে ইউএনও, এসি ল্যান্ড, নির্বাচন কর্মকর্তা ও ওসিকে। পৌরবাসী যেকোনো সময়ে তাদের কাছে প্রতারণার হিসেব চাইবেন। সাখো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, তাহলে সব প্রার্থী মিলে যে ভোট পাবে আমি একাই তার চেয়ে অনেক বেশি ভোট পাবো। চাটমোহর পৌর নির্বাচনকে প্রহসনের, নীল নকশার নির্বাচন উল্লেখ করে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। একই সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা ও জনগনের সাথে প্রতারণা করার দায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেগম শেহেলী লায়লা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সরকারের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার গাজী এস এম মোজাহারুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বজলুল করিম খাকছার, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হোসেন ধনী, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মো: শামসুজ্জোহা, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসাহাক আলী মানিক, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক বেগম সাজেদা রহমান, নিমাইচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান খোকন, এবাদত হোসেন, ইসাহক আলী ঈশা, বাবু সহ অন্যান্য নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

(এসএম/এসসি/জানুয়ারি০৩,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test