E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কালকিনিতে স্থগিত দুই ভোট কেন্দ্রে অঘোষিত কারফিউ 

২০১৬ জানুয়ারি ০৫ ১৭:৩৮:৪০
কালকিনিতে স্থগিত দুই ভোট কেন্দ্রে অঘোষিত কারফিউ 

মাদারীপুর প্রতিনিধি : ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগে মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার  দু‘টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। এখনো পূর্নঃনির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয়নি। এ অবস্থায় কোন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও তাদের কোন কর্মীকে এলাকায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ ও কৃষকলীগের নেতা-কর্মীরা। সার্বক্ষণিক পাহারা দেওয়া হচ্ছে স্থগিত হওয়া ৬নং ওয়ার্ড ও ৮নং ওয়ার্ডের কেন্দ্র এলাকা। এমন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার বিকেলে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে যান এনএসআই এর ফিল্ড অফিসার ফিরোজ আহমেদ। এ সময় তাকে লাঞ্ছিত করে আটকে রাখে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও কৃষকলীগ নেতাকর্মীরা। দুই ঘন্টা পর সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।

এছাড়াও স্বতন্ত্র এক প্রার্থীর সর্মথকের দাড়ি কেটে দিয়েছে বলেও স্থানীয় ভাবে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ৩০ ডিসেম্বর পৌর নির্বাচনের আগের রাতে কাষ্ঠগড় কেন্দ্র থেকে ৮০০ ব্যালট ছিনতাই করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এছাড়া জনারদন্দি কেন্দ্রে ৫০৩ ব্যালটে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে রাখে। এ ঘটনা জানতে পেরে রিটার্নিং অফিসার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজেপি নিয়ে কেন্দ্র দুটিতে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান। বিষয়টি তৎক্ষণিক নির্বাচন কমিশনকে জানালে তাদের নির্দেশে কেন্দ্র দুটির ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। নির্বাচনের পর থেকে ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিলুর রহমান সোহাগ তালুকদার ও আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী এনায়েত হোসেন হাওলাদার। এলাকায় দিন রাত পাহারা দেওয়া হচ্ছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী সমর্থক এমনকি সাধারণ কাউকে এলকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছেনা। অযথা মানুষকে মারধর, নিজেদের পক্ষে ভোট নিতে ভোটারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

শুধু তাই নয় গত তিন দিন আগে কাষ্ঠগড় এলাকার ফারুক ফকির নামের এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থককে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে তার দাড়ি কেটে দিয়েছে। এই ঘটনার পর থেকে ঐ পরিবারের সাথে কাউকে যোগাযোগ করতে দেয়া হচ্ছেনা। এমনকি ঐ পরিবারটিও ভয়ে কিছু বলছে না।

তবে এ ব্যাপারে মোবাইলে ফোন দিলে ফারুক ফকিকের স্ত্রী ফোন রিসিভ করে। তার স্ত্রী প্রথমে কোন কথা না বললেও এক পর্যায় বলেন স্বতন্ত্রপ্রার্থীর পক্ষ নেয়ার অভিযোগ এনে অপর পক্ষ আমার স্বামীকে মারধর করা হয়েছে। তাকে কাচি ও ব্লেড আনতে বলে তার দাড়ি কাটার জন্য। পরে আমার স্বামী নিজেই তার দাড়ি কেটেছে। এ ব্যাপারে আমরা কোন কথা বলতে চাইনা। কোন ঝামেলাই জড়াতে চাইনা। আমরা আর কিছু বলবো না। আমরা কারো কাছে কিছু বলিনি তবুও সবাই জেনে গেছে।

কালকিনি পৌর নির্বাচনে এগিয়ে থাকা স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মশিউর রহমান সবুজ বলেন, ‘কালকিনির নির্বাচন স্থগিত দুই কেন্দ্রে কোন স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন ঢুকতে দেয় না স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা। সার্বক্ষণিক পাহারা দেওয়ায় এলাকায় চলছে অঘোষিত কারফিউ। কাষ্টগড় সেন্টারে কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিলুর রহমান সোহাগ তালুকদারের নেতাকর্মীরা সোমবার সন্ধ্যায় ফিরোজ আহমেদ নামের এক এনএসআই কর্মকর্তাকে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে আটকে রেখে লাঞ্ছিত করে।’

মাদারীপুর এনএসআই সহাকরী পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, ‘সরকারি কাজে আমার অফিসার ফিরোজ আহমেদ কালকিনির কাষ্টগড় এলাকায় স্থগিত হওয়া নির্বাচনী তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিলুর রহমান সোহাগ তালুকদার ও আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী এনায়েত হোসেন হাওলাদার মিলে আমার অফিসারের পকেটে টাকা ঢুকিয়ে লাঞ্ছিত করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। নির্বাচনের পর থেকেই স্থগিত হওয়া দুই কেন্দ্রের এলাকায় কোন ব্যক্তিকেই তারা প্রবেশ করতেও দিচ্ছে না।’

এ ব্যাপারে এনএসআই এর ফিল্ড অফিসার ফিরোজ আহমেদ বলেন, আমি নির্বাচনি তথ্য সংগ্রহ করতে কাষ্ঠগড় গেলে কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিলুর রহমান সোহাগ তালুকদার ও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এনায়েত হোসেন হাওলাদার ও তার লোকজন মিলে জোর করে আমার পকেটে ৫০০ টাকার ১০০টি নোট ঢুকিয়ে দিয়ে বলে স্বতন্ত্রপ্রার্থী মশিউর রহমান সবুজের পক্ষে ভোট কেনার জন্য আমি এই টাকা নিয়ে আসেছি। এই অভিযোগ তুলে আমাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। আমি এই লাঞ্ছিতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

এ সময় কয়েকজন গ্রামবাসী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, এই ঘটনার পর থেকে আমরা নিজের নিরাপত্তাহীন মনে করছি। যেখানে আইনের সর্বোচ্চ বিভাগের কর্মকর্তাদের এই অবস্থা হয়। সেখানে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কি অবস্থা হবে তা ভাবতেই পারিনা। আর আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে জয় লাভের জন্য এই কেন্দ্রে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। তাই নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত জোরদার আইন শৃংখলা বাহিনী দরকার।

কালকিনি পৌরসভার আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এনায়েত হোসেন হাওলাদার বলেন, “এই কর্মকর্তা আগে পরেও নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থা নিয়েছিল। যে কারণে আমাকে হারাতে তিনি সবুজের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাইছি।’

এ ব্যাপারে মাদারীপুর সহকারী পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনাটি পুরোপুরি আমি শুনিনি। এই বিষয়ে ওসি ভালো বলতে পারবেন।’

তবে ওসিকে বার বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এছাড়াও কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিলুর রহমান সোহাগ তালুকদারও মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সে ফোন রিসিভ করেননি। তাই তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

(এএসএ/এইচআর/জানুয়ারি ০৫, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test