E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন শিশু পার্ক, অপরাধিদের স্বর্গরাজ্য!

২০১৬ জানুয়ারি ০৯ ১৫:১২:০৮
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন শিশু পার্ক, অপরাধিদের স্বর্গরাজ্য!

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন শিশু পার্ক, তবে এটি এখন উঠতি বয়সি বখাটে অপরাধিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে, দেখার কেউ নেই। আর এক্ষেত্রে এখানকার প্রশাসনও সম্পূর্ণ নির্বিকার। স্কুল/কলেজ ফাঁকি দিয়ে উঠতি বয়সী তরুণ তরুণীরা ক্লাস টাইমে এখানে এসে জড়িয়ে পড়ছে নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডে, গাছের ঝোপ, পার্কের ভিতরের পরিত্যাক্ত ভবনের বিভিন্ন রুমে, কিংবা বাথরুমে বসে প্রেম নিবদনের নাম করে দিনে দুপুরেই লিপ্ত হচ্ছে অবাধ যৌনাচারে।

অনেক অভিবাবক হয়তো ভাবছেন তাদের আদরের সন্তান স্কুল, কলেজে পাঠদান শেষে বাড়ি ফিরবে, কিন্তু না, তারাতো তার পরিবর্তে নানা অপরাধে জরিয়ে নিজেকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। তাদের এহেন কর্মকান্ডে অভিবাবকরাও সংকিত।

গতকাল দুপুরে সরেজমিনে জেলা প্রশাসন শিশু পার্কে গিয়ে দেখা গেছে শহরের হাফিজা খাতুন স্কুল, আলী আমজাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা স্কুল ড্রেস ও কলেজের নির্ধারিত ড্রেস পরেই এখানে এসে বিভিন্ন অপ্রিতিকর কর্মকান্ডে জড়াচ্ছে। সাংবাদিক প্রবেশ করেছে একথা শোনা মাত্রই পালানোর চেষ্ট করতে দেখা গেছে অনেক তরুণ তরুণিকে। পার্কের পরিত্যক্ত দু’তলা ভবনটির ছাদে উঠে দেখা গেছে এক প্রান্তে কয়েক শিক্ষার্থী কিশোরী অপ্রীতিকর অবস্থায় আর অন্য প্রান্তে দেখা গেছে শহরের উঠতি বয়সি বখাটে তরুণদের ১৫ থেকে ২০ জনের একটি অশৃঙ্খল দল। কেউ বসে সিগারেট খাচ্ছে আবার কেউ হেরোইনের মতো মরণ নেশায় হাবু ডুবু খাচ্ছে।

জানা গেছে এখানে ঘুরতে আসা তরুণ তরুণীদের এরা বিভিন্ন সময়ে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা পয়সা, মোবাইল ছিনিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, গাছে বেঁধে মারপিট ও মেয়েদের ধর্ষণের অভিযোগও পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে। ঐ পার্কটিতে সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য কেয়ারটেকার থাকার কথা থাকলেও সরেজমিনে গিয়ে তাদের দেখা পাওয়া যায়নি। এমন অবস্থায় সচেতন অভিবাবক বা শিশু-কিশোররা ভয়ে ঐ পার্কে এখন আর আগের মতো যেতে সাহস পাননা। সূত্রে জানা গেছে সূর্য ডোবার পরপরই এখানে শহরের মাদক সেবীদের আনাগোনা আসংখা জনক হারে বেড়ে যায়, আর তা চলে গভীর রাত পর্যন্ত।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগ করা হয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাসুকুর রহমান সিকদারের সাথে তিনি এ বিষয়ে বলেন, এই পার্কটিকে কেন্দ্র করে এখানে যারা এসে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারাতো এখানকার ছেলে মেয়ে, তাই আপনারা সাংবাদিক সহ এলাকার সচেতন মহল এ ব্যাপারে এগিয়ে আসলে এ বিষয় গুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব । আর আমি পার্কটিতে কেয়ারটেকার হিসেবে যারা আছেন তাদের বলে দেব তারা যেন সঠিক ভাবে তদারকি করে।

জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন মাসুদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আসলে এখানে শিশুদের বিনোদনের জন্য কোন জায়গা ছিলনা, তাই সাংবাদিক, সাংস্কৃকি কর্মিসহ বিভিন্ন সূধী মহলের দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালিন জেলা প্রশাসনের সাথে সম্বন্নয় করে এ পার্কটি চালু করা হয়। তবে পার্কটির বিষয়ে জেলা প্রশাসনই ভালো বলতে পারবেন।

তিনি আরো জানান জেলা প্রশাসন নতুন করে পার্কটিতে বিভিন্ন ধরনের রাইড ক্রয় করে নতুন ভাবে এটাকে সংস্কারের উদ্যেগ নিয়েছেন, আশা করি অল্প দিনের মধ্যেই এই পার্কটি নতুন রুপে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখতে পারবে শহরবাসী।

প্রবাসী অধ্যুসিত প্রথম শ্রেণী স্বীকৃতি প্রাপ্ত মৌলভীবাজার জেলা শহরে শিশুদের বিনোদনের জন্য খুব একটা সুযোগ সুবিধা নেই বললেই চলে। বিভিন্ন দেশে থাকা এখানকার প্রবাসীরা প্রতি শীত মৌসুম শুরু হলেই নারীর টানে চলে আসেন নিজ শহরে। দেশে এসে নিজের আত্মীয় স্বজনের খোজ খবরের পাশা পাশি বিকেল বেলা সন্তানদের নিয়ে একটু ঘুরে বেড়াতে চান, কিন্তু এখানে প্রবাসীদের সন্তানদের বিনোদনের জন্য নেই কোন পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা।

এ নিয়েও প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ বিরাজমান। প্রবাসী ছাড়াও জেলা শহর মৌলভীবাজারে রয়েছেন সরকারি/বেসরকারি চাকুরীজিবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। বিগত চার দলীয় জোট সরকারের শাসনামলে মৌলভীবাজার শহরের অবকাটামো খাতের অভুতপুর্ব উন্নয়ন হলেও তার ছিটা ফোটাও লাগেনি বিনোদন কিংবা পর্যটন খাতে । এখানে ঐ সময় যত উন্নয়ন হয়েছে তার সবই হয়েছে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহম নের হাত ধরে।

স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী, অভিবাবক ও শিশুদের অবসর সময়ের বিনোদনের জন্য এখানে এখনো গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি কোন বিনোদনের ব্যাবস্থা।বিগত ২০১২ সালে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালিন জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমানের উদ্যেগে জেলা প্রশাসন শিশু পার্ক করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন করে,অবশেষে জেলা প্রশাসনের উদ্যেগে শহরের প্রাইমারী ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের পাশে সরকারি পরিত্যক্ত জায়গায় গড়ে তোলা হয় জেলা প্রশাসন শিশু পার্ক। বছর তিনেক পূর্বে এই পার্কটিতেই পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে শিশু সংগঠন সবুজকুঁড়ি আসর সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনকে নিয়ে দিনব্যাপি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বৈশাখী পিঠা মেলার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে ঐ সময় সাধুবাদ জানায় বিভিন্ন মহল।

শিশু-কিশোর অভিবাবক ও প্রকৃতি প্রেমীরা খুঁজে পায় অবসর সময়ে বেড়ানো কিংবা সময় কাটানোর নতুন ঠিকানা। তাদের এমন আশার প্রেক্ষিতে পার্কটিতে বসানো হয় দোলনা, বসার জায়গাসহ নিশ্চিত করা হয় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য এই পার্কটিতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার নুন্যতম ব্যবস্থা এখানে নেই বললেই চলে।

(একে/এএস/জানুয়ারি ০৯, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test