E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফকিরহাটে ম্যাজিস্ট্রেট ও দুই বিজিবি সদস্যের নামে পরোয়ানা

২০১৬ জানুয়ারি ১৩ ১৯:৫৩:৩০
ফকিরহাটে ম্যাজিস্ট্রেট ও দুই বিজিবি সদস্যের নামে পরোয়ানা

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট :বাগেরহাটের ফকিরহাটে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন আওয়ামী লীগ সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী সরদার নিয়ামত হোসেনকে (৫৬) পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বিজিবি‘র দুই সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

বাগেরহাটের জেষ্ঠ্য বিচারিক হাকিম ও ফকিরহাট আমলী আদালতের বিচার মো. জিয়ারুল ইসলাম এই পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছেন। এরা হলেন বাগেরহাটের তৎকালীন সহকারি কমিশনার (ভূমি) আরিফুল ইসলাম, বিজিবি‘র তৎকালীন ৩৪ ব্যাটেলিয়নের হাবিলদার মো. মামুন আলী (রেজি নং ৫২১৬৬) ও সিপাহী মো. বাবুল হোসেন ( রেজি নং ৫০৩০০৪)।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলাম বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কালেক্টরেটে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে, হাবিলদার মো. মামুন আলী তার সাবেক কর্মস্থলে এবং সিপাহী মো. বাবুল হোসেন বর্তমানে বিজিবি ৩০ ব্যাটিলিয়নে কর্মরত আছেন বলে এই মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন।

২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় বাগেরহাটের সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে বিজিবি‘র ১২-১৪ সদস্যের একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স সেখানে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করছিলো। ঐ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন ঐ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার নিয়ামত হোসেন (৫৬)।

মামলার নথি ও আদালত সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন চলাকালে উপজেলার সাতসিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: আরিফুল ইসলাম এবং তার নির্দেশে বিজিবি সদস্যরা সরদার নিয়ামতকে আটক করে রাইফেল দিয়ে বেদম প্রহার করে। গুরুতর আহত অবস্থায় ঐ ম্যাজিস্ট্রেট তাকে এক ঘন্টারও বেশী সময় বিজিবি‘র পিকআপে ফেলে রাখেন এবং পরে ফকিরহাট থানায় নিয়ে আটকে রাখেন। পরে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে তাকে ঐদিন দুপুরে ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১২ মার্চ শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসার জন্য তাকে প্রথমে খুলনার একটি ক্লিনিকে এবং ১৫ মার্চ হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ মার্চ সকালে তার মৃত্যু হয়।

নিহতের লাশের ময়না তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ঐ প্রহারজনিত কারণেই তার মৃত্যু হয়েছিলো। তাঁর পায়ের হাঁটু ও গোড়ালিতে ফ্র্যাকচার হয়েছিলো এবং পেট, বুক, কাঁধসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ ও ফোলা জখম হয়েছিলো। সরদার নিয়ামত হোসেনের লাশের ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে এ সব বিষয়সহ ঘটনাটিকে সুনির্দিষ্টভাবে হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ড. একে আজাদ ফিরোজ টিপু জানান, সরদার নিয়ামত হোসেন ফকিরহাট উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৪ সালের ৫ মার্চ তার উপর হামলা, মারধর, হত্যার চেষ্টা, তার কাছে থাকা টাকা আত্মসাৎ ইত্যাদি অভিযোগে ঐ ম্যাজিস্ট্রেট ও তার নেতৃত্বাধীন অজ্ঞাতনামা বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে ফকিরহাট আমলী আদালতে একটি সিআর মামলা (৩৪/১৪) দায়ের করেন। ফকিরহাট আমলী আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ও তৎকালীন মুখ্য বিচারিক হাকিম আবু তাহের অভিযোগটির বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ দেন। ঐ তদন্ত চলাকালে সরদার নিয়ামত হোসেন মারা গেলে ২০১৪ সালের ১২ জুন মামলাটি আইনানুগভাবে হত্যা মামলায় রূপান্তরসহ নিহতের স্ত্রী নূরানী আসমাকে মামলার বাদী নির্ধারণ করা হয়।

বিচার বিভাগীয় তদন্তের সময় সংশ্লিষ্ট বিচারিক হাকিমগণ মোট নয়জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন। বাদীপক্ষ সুনির্দিষ্টভাবে ঐ ম্যাজিস্ট্রেট ও দুই জন বিজিবি সদস্যের বিরুদ্ধে সরদার নিয়ামত হোসেনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ এনে মামলাটি আমলে নেয়ার আবেদন করলে গত ৫ জানুয়ারি আদালত ঐ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন।


(এসএকে/এস/জানুয়ারি১৩,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test