E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভিক্ষা করা কুলসুম বিবির ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটালেন সেলিম ওসমান

২০১৬ জানুয়ারি ১৭ ২১:৩২:০০
ভিক্ষা করা কুলসুম বিবির ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটালেন সেলিম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি :বন্দর খেয়াঘাটে  হুইল চেয়ারে বসে ভিক্ষা করা বন্দর ছালেহ নগর এলাকার আশির্ধো কুলসুম বিবির ভাগ্যের পরির্বতন ঘটালেন নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।

পূর্নবাসনের জন্য তার হাতে তুলে দিয়েছেন ২৫ হাজার টাকার চেক। আর এই টাকায় তার আয় রোজগারের ব্যবস্থা করে দিতে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ইসরাত জাহান স্মৃতিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নিজস্ব অর্থায়নে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিএম ইউনিয়ন স্কুলে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করে দেওয়া ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

রবিবার(১৭ জানুয়ারী) সকাল ১১টায় বন্দর বিএম ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবীন বরণ ও স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সেলিম ওসমান কুলসুম বিবির হাতে ২৫ হাজার টাকার চেকটি তুলে দেন।

এরআগে ২০১৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর সকালে সমরক্ষেত্র মাঠে দুইজন অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাকে চিকিৎসার জন্য ২ লাখ টাকা এবং দুইজন অসহায় পঙ্গু ব্যক্তিকে একটি করে হুইল চেয়ার এবং নগদ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগীতা করেন সেলিম ওসমান। অনুষ্ঠান শেষে বন্দর ঘাট দিয়ে নদী পার হয়ে পূর্বপাড়ে আসার সময় ঘাটে হুইল চেয়ারে বসে ভিক্ষা করছিলেন কুলসুম বিবি। এ সময় তিনি সেলিম ওসমানের কাছে সহযোগীতা চাইলে তিনি সেখানে দাড়িয়ে যান।
তখন তিনি কুলসুম বিবির খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন তার স্বামী মারা গেছেন অনেক আগে। নিজের কোন ছেলে সন্তান নেই। সংসারে রয়েছে একমাত্র বিধবা মেয়ে। সে শহরের একটি গার্মেন্টে কাজ করে। মেয়ের আয়ে সংসার খরচ চালাতে না পারায় জীবনের শেষ বয়সে এসে তিনি হুইল চেয়ারে বসে বন্দর খেয়াঘাটে ভিক্ষা করে সংসার খরচ চালিয়ে থাকেন।

এ সময় সেলিম ওসমান কুলসুম বিবিকে নগদ ৩ হাজার টাকা তুলে দেন। এ সময় তিনি কুলসুম বিবির কাছ থেকে জানতে চান যদি তিনি কুলসুম বিবির কোন একটা ব্যবস্থা করে দেন তাহলে তিনি ভিক্ষা করবেন কি না? উত্তরে কুলসুম বিবি ভিক্ষা না করার প্রতিশ্রুতি দিলে সেলিম ওসমান তার সাথে থাকা জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহেরকে কুলসুম বিবির সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়ার অনুরোধ করেন।

সংসদ সদস্যকে দেওয়া কথার পর বন্দর খেয়াঘাটে আর ভিক্ষা করতে দেখা যায়নি কুলসুম বিবিকে। কুলসুম বিবি যেমন তার কথা রেখে ছিলেন ঠিক তেমনি প্রতিশ্রুতির মাত্র ১৯ দিনের মাথায় তার হাতে ২৫ হাজার টাকার চেক তুলে দিলেন সেলিম ওসমান। সেই সাথে ওই টাকায় তার আয় রোজগারের একটি ব্যবস্থা করে দিতে স্থানী নারী কাউন্সিলর ইসরাত জাহান খান স্মৃতিকে দায়িত্ব দেন।

অপরদিকে স্কুলের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে সেলিম ওসমান তার স্বভাব সুলভ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মঞ্চে তুলে তাদের সমস্যা ও দাবির কথা শুনতে চাইলে স্কুলের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলে গত ৫ বছরে সে স্কুলে এসে পানি পান করেনি। কারণ স্কুলে বিশুদ্ধ খাবার পানির কোন ব্যবস্থা নেই। উত্তরে সেলিম ওসমান তার নিজ তহবিল থেকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে স্কুলে একটি ডিপটিউবওয়েল স্থাপন করে দেওয়ার ঘোষণা দেন।এছাড়াও স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে জুবায়ের, কাউসার, সিয়াম, হাসান হাবিব, গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী, সিফাত হোসেন, আমির হামজা, নাইম ইসলাম, চয়ন মাহমুদ রাজ, সাকিব খন্দকার, হাসিন রায়হান, রাতুল খন্দকার, রঞ্জিত, এম এ ওবায়েদ সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের সমস্যা ও দাবির কথা তুলে ধরেন।

যার মধ্যে তারা বিএম ইউনিয়ন স্কুলকে সরকারিকরণ, খেলার মাঠ, লাইব্রেরী, সাইন্স ল্যাব্রটারী, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম, নতুন একটি ভবন, খাবার ক্যান্টিন, কম্পিউটার ল্যাব, সহ বিভিন্ন দাবির কথা তুলে ধরেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে পর্যায়ক্রমে সেলিম ওসমান সেই সকল দাবি পূরণ করার প্রত্যাশা দিয়ে, শিক্ষার্থীদের বক্তব্য শুনার কারণ জানিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলেন, আমি স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতিদিন কিছু না কিছু শিখছি। আমি স্কুলের অনুষ্ঠানে কোন রাজনীতিবিদের কথা শুনি না। এর কারণ হলো আমাদের দেশের পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিবিদেরা, হাট ঘাট দখল, টেন্ডারবাজি, এটা চাই ওইটা চাই বলে দাবি করে থাকে। কিন্তু স্কুলের শিক্ষার্থীরা এমন কোন দাবি করে না। তারা শুধু ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা বলে। সমস্যার কথা বলে, উন্নয়নের কথা বলে। কিন্তু এই কথা গুলো কখনও রাজনীতিবিদেরা আমাকে বলবে না। তাই আমি স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতিদিন কিছু না কিছু শিখি।



স্কুলের পরিচালন পর্ষদের সভাপতি আবুল জাহেরের নেতৃত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সহ ধর্মিনী নাসরিন ওসমান। আরও উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড: শাহনেওয়াজ, বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম এ রশিদ, বন্দর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মিনারা নাজমীন, বন্দর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একেএম নুরুল আমিন, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) নজরুল ইসলাম, সিটি করপোরেশনের নারী কাউন্সিলর ইসরাত জাহান স্মৃতি, বন্দর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আলেয়া বেগম, বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন প্রমুখ।

(এসএইচএম/এস/জানুয়ারি১৭,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test