E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ হার্ডিঞ্জ সেতুর ধ্বংসাবশেষ পদ্মায় ভেসে উঠেছে

২০১৬ জানুয়ারি ২২ ২১:৫১:১৬
স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ হার্ডিঞ্জ সেতুর ধ্বংসাবশেষ পদ্মায় ভেসে উঠেছে

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি :স্বাধীনতা অর্জনের ৪৪ বছর পর হার্ডিঞ্জ সেতুর ধ্বংসাবশেষ লৌহ খন্ড ঈশ^রদীর পাকশীতে পদ্মা নদীতে ভেসে উঠেছে। এই ধ্বংসাবশেষ দেখার জন্য এখন প্রতিদিনই আশে-পাশের এলাকার লোকজন নদীর তীরে ভীড় জমাচ্ছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ প্রান্তে দেশের সর্ববৃহৎ এবং এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম রেলসেতু ‘হার্ডিঞ্জ ব্রীজের’ একটি স্প্যান উপুর্য্যপরী বোমার আঘাতে নদীতে খসে পড়ে। নদীতে ভেসে উঠা এই লৌহ খন্ডটি হার্ডিঞ্জ সেতুর ধ্বংসপ্রাপ্ত স্প্যানের অংশ বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নদী তীরবর্তী এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় মাসাধিক কাল আগে নদীর দক্ষিণে লক্ষীকুন্ডা এলাকায় জেলেরা মাছ ধরার সময় তাদের জাল পানির নীচে আটকে যায়। জাল ছাড়াতে জেলেরা নদীতে ডুব দিয়ে এই বিশাল লৌহ খন্ডের অস্তিত্বের সন্ধান পায়। ইতিমধ্যে শুস্ক মৌসুম শুরু হওয়ায় নদীতে পানি কমে অনেক কমে গেছে। ফলে এখন উপর হতেই এই লৌহখন্ডের অংশবিশেষ দৃশ্যমান হয়েছে। এরমধ্যে জেলেরা আরও দুটি স্প্যানের অংশের সন্ধান পায়। এগুলোও এখন পানির উপরে ভেসে উঠেছে। হার্ডিঞ্জ সেতুর ধ্বংসাবশেষ ভেসে উঠার খবর দ্রুত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার বয়স্ক ব্যক্তিরা নৌকা নিয়ে এই খন্ডগুলো দেখে ব্রীজের অংশ বলে নিশ্চিত করেছে। শুক্রবার সরেজমিনে নৌকায় হার্ডিঞ্জ সেতু হতে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে যেয়ে দেখা যায়, নদী তিনটি লৌহখন্ডের অংশবিশেষ পানির উপরে ভেসে উঠেছে। একটি বড় আকারের এবং দুটি ছোট আকারের খন্ডের অস্তিত্ব রয়েছে। অনেকেই নৌকা ভাড়া করে হাডিঞ্জ সেতুর এই খন্ড দেখার জন্য প্রতিদিনই ভীড় করছে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক পাকশীর অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ জানান, ১৯৭১ পাকহানাদার বাহিনীর যশোরে পতন হলে তারা ১৪ই ডিসেম্বর একটি ট্রেনে করে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র ও রসদ নিয়ে ঈশ^রদীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। উদ্দেশ্য ঈশ^রদীতে সমাবেত হয়ে প্রতিরোধ তৈরী করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য। পাকবাহিনী এসময় হার্ডিঞ্জ ব্রীজের ভেড়ামারা প্রান্তে এসে থামে এবং পাকসেনাদের অনেকেই পায়ে হেঁটে ব্রীজ পার হয়। মুক্তিবাহিনীর আক্রমন প্রতিরোধের জন্য পাকশীর পাকসেনারা আগে থেকেই হার্ডিঞ্জ ব্রিজের উপর একটি ট্যাংক রেখে দিয়েছিল। এছাড়াও পাকবাহিনী ব্রীজে ডিনামাইটও সেট করে রেখেছিল। সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে ভারতীয় মিত্র বাহিনী পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য বিমান হতে ব্রীজের উপর বোমা বর্ষণ শুরু করে। অধ্যাপক কালাম জানান, মিত্র বাহিনীর বোমা বর্ষণ ও পাকবাহিনীর ডিনামাইটের ডাবল চার্জে ব্রীজের ১২ নম্বর এবং পাকশী প্রান্তের ৪ নম্বর স্প্যানটি এসময় ভেঙ্গে খসে পড়ে।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্রীজ ইঞ্জিনিয়ারের অফিস, ব্রীজের মোট ১৫টি স্প্যানের ১২ নং এবং পাকশী প্রান্তের ৪নং স্প্যানটি বোমার আঘাতে নদীতে পড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সে সময় নদীতে প্রবল ¯্রােত থাকায় ভেঙ্গে পড়া স্প্যানের অংশ তোলা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে। তাছাড়া যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশে এগুলো তোলার যন্ত্রপাতিরও অভাব ছিলো। দীর্ঘ ৪৪ বছরে এই খন্ডগুলো ¯্রােতের টানে ব্রীজের অবস্থান হতে প্রায় ৩-৪ কিলোমিটার দূরে সরে গেছে।

এব্যাপারে রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্রীজ ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম মানবকনঠকে জানান, স্প্যানের অংশটি তিনি সরেজমিনে দেখে এসে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। এটি সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।


(এসকেকে/এস/জানুয়ারি,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test