E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১৩ বছর পর শরীয়তপুর আ’লীগের সম্মেলন, দৌড়-ঝাঁপ চলছে ঢাকায়

২০১৬ ফেব্রুয়ারি ২১ ২২:০৫:১৩
১৩ বছর পর শরীয়তপুর আ’লীগের সম্মেলন, দৌড়-ঝাঁপ চলছে ঢাকায়

শরীয়তপুর প্রতিনিধি :সুদীর্ঘ প্রতিক্ষা শেষে এক যুগেরও অধিক সময় পর আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন হতে চলেছে । এ সম্মেলনকে ঘিরে জেলার অভ্যন্তরে তেমন রাজনৈতিক উত্তাপ না ছড়ালেও পদ প্রত্যাশীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুকম্পা আদায়ে জোর লবিং আর দৌড়-ঝাঁপ করছে ঢাকায় ।

দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠন, ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের জেলার পরবর্তী কান্ডারি কে হচ্ছেন এ নিয়ে এখন জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনার ঝড়। তবে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে অধিক গ্রহনযোগ্য ও দূর্দিনে দলের হাল ধরে সংগঠনকে সামলাতে পারবেন এমন নেতৃত্বই প্রত্যাশা করছেন সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।

শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালের ১১ জুলাই শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের সর্বশেষ কমিটি গঠিত হয়। রাজনৈতিক বৈরী পরিবেশ ও তৎকালিন ২০ দলীয় জোটের ত্রাসের কারনে জেলা সদরে সম্মেলন অনুষ্ঠিত করতে না পেরে দলের জন্য নিরাপদ স্থান হিসেবে তখন আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতা মোবারক আলী শিকদারের জাজিরার বাসভবনে একটি সীমিত স্থানে সম্মেলনের অয়োজন করা হয়েছিল। ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন এর মাধ্যমে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয় তখন। ওই কমিটিতে দলের তৎকালিন জেলা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রব মুন্সিকে সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক অনল কুমার দে কে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। আওয়ামীলীগের দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৩ বছর পর পর সম্মেলন হওয়ার কথা। ২০০৭ সালে জেলা আওয়ামীলীগের কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও নানা কারনে গত ১০ বছর জেলার সম্মেলন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ ক্ষমতা গ্রহনের পর প্রয়াত জাতীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাকের উপস্থিতিতে কয়েক দয়ায় জেলার নতুন কমিটি করার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে আব্দুর রাজ্জাক মৃত্যুবরণ করলে এ উদ্যোগ থমকে দাড়ায়। এরপর ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে জেলা আওয়ামীলীগের এক বর্ধিত সভায় ১৭ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্মেলনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। এই সময়ের মধ্যে সম্মেলন না হওয়ায় তারিখ পরিবর্তন করে ২০১৫ সালের ৩০ জানুয়ারীর মধ্যে সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর আবারো তারিখ পরিবর্তন করে ৩১ মার্চ ২০১৫ তারিখে দিন ধার্য্য করা হয়। ঐ তারিখেও সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। এরপর গত বছরের ১৬ এপ্রিল জেলা আওয়ামীলীগের অপর এক বর্ধিত সভায় ২০১৫ সালের মে মাসের ২০ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে সম্মেলন হওয়ার জন্য গৃহিত সিদ্ধান্ত হয়। ঐ সভায় বাংলাদেশ আওয়ামীীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল হক, সাবেক ডেপুটি স্পীকার শরীয়তপুর-২ আসনের সাংসদ শওকত আলী, শরীয়তপুর-৩ আসনের সাংসদ নাহিম রাজ্জাক ও সংরক্ষিত আসনের সাংসদ এ্যাডভোকেট নাভানা আক্তার, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এনামূল হক শামীম উপস্থিত ছিলেন। সে সিদ্ধান্ত ও পরিবর্তন করা হয়েছে। বার বার তারিখ পরিবর্তন করার পর অবশেষে দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনায় ১৩ বছর ধরে আটকে থাকা সম্মেলন আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

উৎসবমূখর পরিবেশে শরীয়তপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে শরীয়তপুর জেলা শহরকে সাজানো হচ্ছে নতুন সাজে। জেলা শহর থেকে শুরু করে নিভৃত পল্লী এলাকাও ছেঁয়ে যাচ্ছে ব্যানার-ফেষ্টুন-পোষ্টারে। দীর্ঘকাল পর নতুন কমিটি হতে যাওয়ায় দলের অনেক গুরুত্বপূর্ন সাবেক ছাত্র-যুব নেতারা মূল কমিটিতে ঠাঁই করে নিতে সম্মেলনের সাফল্য কামনা আর নেতা-নেত্রীদের সুনাম বন্দনা করে টুইটার, ফেইসবুক থেকে শুরু করে দেয়ালে-গাছে সাটাচ্ছেন অনেক ব্যানার ফেষ্টুন।

আওয়ামীলীগের আসন্ন এই সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রধান দুইটি পদ প্রাপ্তির জন্য বেশ কয়েকজন নেতাই প্রত্যাশিত বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি আব্দুর রব মুন্সি, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল ফজল মাষ্টার, সাবেক যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধি ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর (অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল) সুলতান মাহমুদ সীমন, বর্তমান সহ-সভাপতি ও জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোবারক আলী শিকদার, সহ-সভাপতি ছাবেদুর রহমান খোকা শিকদার ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে এর নাম উল্লেখযোগ্য। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য লড়াই করছেন কয়েকজন তরুন নেতা। তারা হলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন তালুকাদর, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও নড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইসমাইল হক, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শরীয়তপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি নুরুল আমিন কোতোয়াল ও জেলা আ’লীগের অন্যতম সদস্য মোক্তারে হোসেন চৌকিদার ।

২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতা গ্রহনের পর থেকে শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরে প্রকাশ্য দুইটি গ্রুপ বিভক্ত হয়ে কাজ করছে । একটি গ্রুপের নেতৃত্ব রয়েছেন শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি,এম মোজাম্মেল হক অপর অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও দলের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ইকবাল হোসন অপু। সম্প্রতি শেষ হওয়া পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় আভ্যন্তরিন কোন্দল চরম আকার ধারণ করে। ২৭ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনকে ঘিরে নতুন করে গ্রুপ দুটির মধ্যে শুরু হয়েছে ¯œায়ু যুদ্ধ। উভয় গ্রুপেরই রয়েছে পছন্দ-অপছন্দের প্রার্থী। তারা চাইছেন কেউ কমিটি থেকে বাদ পরুক আবার কেউ নতুন করে দায়িত্ব গ্রহন করুক। তবে জেলার ৭টি থানা ও ৬টি পৌরসভা কমিটির সিংহভাগ সভাপতি-সম্পাদকের সাথে কথা বলে নতুন নেতৃত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানান, জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান দুই নেতাকেই আরেকবার দায়িত্ব দেয়া হলে সংগঠনের জন্য অধিকতর ভাল হবে।

আওয়ামীলীগের অনেক নেতা-কর্মীই আবার মনে করেন, দলের ভেতর উপ-দলীয় কোন্দল নিরসনের জন্য নতুন নেতৃত্ব আসা উচিৎ। এ ক্ষেত্রে মোবারক আলী শিকদার অথবা খোকা শিকদারকে সভাপতি করে শরীয়তপুর পৌরসভার নব নির্বাচিত মেয়র সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম কোতোয়ালকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব প্রদান করা যেতে পারে। কেউ কেউ আবার মনে করেন, একজন প্রবীন নেতাকে সভাপতি করে নুরুল আমিন কোতোয়ালকে সাধারণ সম্পাদক করা হলে দলের গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, শরীয়তপুর-২ নির্বাচনী এলাকা বিশেষ করে নড়িয়া উপজেলা স্বাধীনতার আগে থেকেই দলের একটি গুরুত্বপূর্ন ইউনিট। কিন্তু এই এলাকার নেতাদের হাতে গত ৪০ বছরেও জেলা আ’লীগের দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এবার অনেকে মনে করেন আঞ্চলিকতার প্রশ্নে দুইটি বড় পদের একটি হয়তো তাদের দেয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সুলতান মাহমুদ সীমনকে সভাপতি অথবা দেলোয়ার হোসেন তালুকদারকে বা পুলিশ মহা-পরিদর্শক (আইজিপি)’র ছোট ভাই একেএম ইসমাইল হককে সাধারণ সম্পাদক করা যেতে পারে।

কিন্তু আওয়ামীলীগের একাধিক সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, নতুন কমিটি করার ক্ষেত্রে কোন লবিং-গ্রুপিংই কাজে আসবে না, কারো পছন্দ-অপছন্দেরও গুরুত্ব থাকবেনা, কোন কাউন্সিল বা ভোটেরও প্রয়োজন হবেনা, শুধুমাত্র দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তেই নতুন নেতৃত্ব ঠিক করা হবে। কারন, তারা মনে করেন শেখ হাসিনা প্রতিটি জেলাতেই তার নিজস্ব সোর্শ এর মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের আমলনামার খোঁজ খবর রাখেন। তাই যার প্রতি নেত্রীর আস্থা রয়েছে এবং দলের জন্য নিরাপদ এমন ব্যক্তির হাতেই তিনি সংগঠনের দায়িত্ব তুলে দিবেন।

শরীয়তপুর-৩ আসনের সাংসদ নাহিম রাজ্জাক জানান, দীর্ঘদিন পরে শরীয়তপুরের সম্মেলন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ঢাকার ধানমন্ডিস্থ সভানেত্রীর কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ও শরীয়তপুরের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে কয়েকটি সভা করা হয়েছে। আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্নের পথে। সম্মেলন করতে গিয়ে যাতে কোন ঝামেলা না হয় সেই দিকে আমাদের পুরো নজর রয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সকলের মতামতের ভিত্তিতেই একটি নতুন কমিটি গঠন করা হবে।

শরীয়তপুর-১ আসনের সাংসদ ও আ’লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি,এম মোজাম্মেল হক বলেন, দীর্ঘ ১৩ বছর পর একটি উৎসব মূখর পরিবেশে শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠন নতুন পত্র-পল্লবে সজ্জিত হবে। তৃণমূল নেতা-কর্মীরা নেতৃত্বের পরিবর্তন চায়। তাদের দাবীর প্রেক্ষিতে পুরোনোকে বাদ দিয়ে নতুনদের মাধ্যমে কমিটি গঠনের চেষ্টা করা হবে।




(কেএনঅাই/এস/ফেব্রুয়ারি২১,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test