E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী শ্রীশ্রী ভুতনাথ বাবার ধামে শুরু হয়েছে উৎসব

২০১৬ ফেব্রুয়ারি ২২ ১২:১১:৫০
নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী শ্রীশ্রী ভুতনাথ বাবার ধামে শুরু হয়েছে উৎসব

নওগাঁ প্রতিনিধি : “হে বাবা ভুতনাথ তুমি সন্তানের মনস্কামনা পূর্ণ করো প্রভু। আমার কোল জুড়ে যদি সন্তান আসে, তাহালে আগামী বছর তোমার চরনে ভোগরাদি দিয়ে তোমার মানত শোধ করবো”। ঠিক এভাবেই মন্দিরের সামনে সদ্যস্নাত ভেজা কাপড়ের আঁচল বিছিয়ে অশ্রুস্বজল নয়নে প্রার্থনা করছিলেন, মহাদেবপুরের গৃহবধু শান্তনা রানী (২৬)। ৮ বছর আগে বিয়ে হয়েছে তার। স্বামীর সংসারে কোন অভাব অনটন নেই। শুধু অভাব একটি সন্তানের। আর তাই তিনি এসেছেন ভুতনাথ বাবার ধামে।

তিনি শুধু একা নয়, বিভিন্ন অঞ্চল থেকে একই প্রার্থনা নিয়ে এসেছেন, সবিতা, ফুলকুমারী, জয়িতা, স্বপ্না রানী আর অঞ্জনা দাস। এরা সকলেই এসেছেন সন্তানের আশায় ভুতনাথ বাবার আশীর্ব্বাদ নিতে। স্বামীর মঙ্গল কামনায় এসেছেন, ভারতী, বিউটিসহ অনেক গৃহবধু। বাবার প্রধান ভোগ বারোভাজা, সন্দেশ,আর ফলমুল সোপর্দ্দ করছেন বাবার পায়ে। এছাড়া যাদের মনস্কামনা পুরন হয়েছে, তারা তাদের মানত পাঁঠা, কবুতরের বাচ্চা, বাবার মূর্তি, মাথার মুকুট আর কদম দিয়ে মানত পরিশোধ করছেন।

হাজার হাজার ভক্তের পদচারনায় মুখর হয়ে উঠেছে নওগাঁ সদর উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষে মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়নের শিকারপুর মৌজার ভুতনাথ বাবার হিন্দুবাঘার ধামটি। নারী ভক্তের উপচেপড়া ভিড়ে যেন তিল ধারনের ঠাঁই নেই সেখানে। প্রাচীন আমলের এই উৎসব/মেলা কবে কখন থেকে শুরু হয়েছে এমনটি কেউ বলতে পারেনা। শনিবার ওই ধামে ঘুরে ঠিক এমনটিই চোখে পড়েছে। এই ধামের উৎসবকে ঘিরে সেখানে মেলা বসে থাকে। সেকারনে সেখানকার নাম ‘হিন্দুবাঘার মেলা’ নামে এলাকায় বহুল পরিচিত। প্রতিবছর মাঘ মাসের ভীম একাদশীর দিন শুরু হয় উৎসবের। শেষ হয় মাঘী পূর্ণিমার তিথি শেষে। প্রতিবছর অন্তত অর্ধশত পাঁঠা আর সহ¯্রাধিক কবুতরের বাচ্চা মানত হিসেবে দিয়ে থাকেন ভক্তরা। তবে বাবার মন্দিরে কোন রক্তপাত ঘটানোর বিধান না থাকায় সেগুলো আস্ত রেখে দেয় কমিটির লোকজন। পরে সেগুলো বিক্রি করে সেই অর্থ মন্দিরের উন্নয়ন কল্পে ব্যয় করা হয় বলে, ধামের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে গনেশ চন্দ্র ও মনোরঞ্জন সরকার জানিয়েছেন।

ভুতনাথ বাবার পূজা কমিটির নেতারা জানান, গত বছর যে সব গৃহবধু সন্তান কামনা করে বাবার মন্দিরে পাঁঠা বা কবুতরের বাচ্চা মানত করেছিলেন, তাদের অনেকের কোল জুড়ে সন্তান এসেছে। আর তারাই তাদের মানত পরিশোধ করতে এসেছেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরন করছেন কমিটির পক্ষ থেকে। অনেক ভক্ত বাড়ি থেকে খাবার সঙ্গে এনেছেন। সন্তান-সন্ততি নিয়ে তারা সেখানে বসেই খেতে দেখা যায়। আগামী সোমবার উৎসব শেষ হলেও মেলা চলবে অন্তত আরো ১৫দিন। তবে এই মেলার সঙ্গে পূজা কমিটির কোন সম্পৃক্ততা নেই। ভুতনাথ বাবার উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলা হলেও এই মেলা থেকে উপার্জিত অর্থের কোন কানাকড়িও মন্দিরের ভাগ্যে জোটেনা। মন্দিরের নামে জমিতে মেলা লাগানোর জন্য সরকারীভাবে লীজ দেয়া হয় বলে অভিযোগ পূজা কমিটির। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মেলাটি ডেকে নেয়। এবার ১লাখ ৩৮ হাজার টাকায় ১০দিনের জন্য মেলা ডাক দেয়া হয়েছে বলে মহাদেবপুরের ইউএনও কেএম তাজকির-অর-জামান এই প্রতিবেদককে জানান। তবে মেলা থেকে অর্জিত অর্থের অংশ পূজা কমিটি পায়না, এমন বিষয় তাকে কেউ জানায়নি বলে জানান।
এদিকে ভুতনাথ মন্দিরের দক্ষিনপাশে বসে ‘সাধু মেলা’। ওই সাধু মেলায় বসে গাঁজা খাওয়ার প্রতিযোগীতা। লাল গেরুয়া পরিহিত লম্বা চুল-দাড়িওয়ালা কংকালসার মানুষগুলো সেখানে গঞ্জিকা ভক্ষনে ব্যস্ত দেখা যায়। খোলা-মেলাভাবে এই গাঁজা খাওয়া আর গাঁজার ধোঁয়ায় সেখানকার পরিবেশ বিষাক্ত করে তোলে। শুধু সাধুবেশী মানুষই নয়। সেখানে তরুনদের পাশাপাশি মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনকেও গঞ্জিকা সেবনে দেখা যায়। পূজারীদের মতে, গঞ্জিকা ভক্ষন পূজার কোন অংশ নয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে এমনটি চলে আসছে বলে উৎসব স্থলের বাইরে গাঁজার আসর বসে।

অপরদিকে মেলায় বসেছে, বিভিন্ন মিষ্টান্নসহ ভুতনাথ বাবার ভোগের সামগ্রী বারোভাজার দোকান। ওইসব দোকানে ভক্তদের ভিড় ছিল উপচেপড়া। এছাড়া মন্দির চত্বরের বাইরে প্রসাধনী, খাবার দোকান, লোহা-লক্কড় বটি ছুড়িসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র আর চিত্ত বিনোদনের নামে বসানো হয়েছে ১২টি পুতুল নাচের স্প্যান্ডেল। বিকেল থেকে এসব স্প্যান্ডেলে পুতুল নাচের নামে চালানো হচ্ছে, জ্যান্ত পুতুলের নগ্ন নৃত্য। এছাড়া মেলায় বসানো হয়েছে হরেকরকম জুয়ার আসর। এসব জুয়ার আসরে ভিড় করছে তরুনরা। পাশেই চলছে পুতুল নাচের নামে নগ্ন নারীদেহের অশালীন নাচ। ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকার রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা রীতিমত সেখানে মদ, জুয়াসহ নারীদেহের উলঙ্গ নাচে এলাকার যুবসমাজকে অধপতনের দিকে ধাবিত করছে। এতে সাধারনের কাছে পূজা কমিটির বদনাম হলেও পূজা কমিটি ওই অসামাজিক কর্মকান্ডে মোটেই সম্পৃক্ত নয় বলে দাবী করেন পূজা কমিটির নেতারা। এব্যাপারে ইউএনও বলেন, জুয়া আর পুতুলনাচের নামে নারীদেহের নগ্ন নৃত্য কোনভাবেই চলতে দেয়া যাবেনা। রবিবার জেলা প্রশাসক ড. মোঃ আমিনুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম জানান, আজ রাত থেকেই মেলা বন্ধ করে দেয়া হবে।




(বিএম/এস/ফেব্রুয়ারি২২,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test