E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নৌকা পেতে যে কোন ছাড়, লাঙ্গল প্রার্থীরা খোশ মেজাজে, ধানের শীষ লাপাত্তা !

২০১৬ ফেব্রুয়ারি ২৪ ১৯:১২:২০
নৌকা পেতে যে কোন ছাড়, লাঙ্গল প্রার্থীরা খোশ মেজাজে, ধানের শীষ লাপাত্তা !

পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি :প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্বশুরবাড়ী রংপুরের পীরগঞ্জে। জাতীয় সংসদে এটি রংপুর-৬, পীরগঞ্জ আসন নামে পরিচিত। ১৫টি ইউনিয়নের পীরগঞ্জ থেকেই প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি হন। পীরগঞ্জ পৌরসভার সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ৩ টি ইউনিয়ন এবং মেয়াদ পূর্ণ না হওয়ায় ১টি ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে না। আগামী ৩১ মার্চ এখানে ১১টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ইউপি নির্বাচন উপলক্ষে এখানে সম্প্রতি সরকারের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের রাজনৈতিক পরিচিতিসহ বিভিন্ন ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। পাশাপাশি স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোও সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র গ্রহন ও মনোনয়নপত্র প্রদানের আবেদন ফরম বিতরণ করেছে। ইতিমধ্যেই আ’লীগ নেতৃবৃন্দ প্রার্থীদের সাক্ষাতকারও নিয়েছে। নৌকা পেতে প্রার্থীরা যে কোন ছাড় দিতে প্রস্তুত। ফলে দলের নেতাদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, বর্তমানে অধিকাংশ সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

জাতীয় পার্টি তাদের প্রার্থীদের মাঝে মনোনয়নপত্রের ফরম বিতরণ করেছে। অপরদিকে এখানো বিএনপির কোন প্রার্থীর নাম শোনা যায়নি। তারা লাপাত্তা।

১১টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক পেতে ৮০ জন আবেদন করেছে। সেখানে অনুপ্রবেশকারীও রয়েছে বলে বিশ্বস্ত সুত্র জানিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আ’লীগ নেতা জানান- সারা জীবন নৌকা পাহারা দিলাম। আর এখন অনুপ্রবেশকারীরাই বিশেষ কারণে নৌকা প্রতীক পাচ্ছে। এ ব্যাপারে মিঠিপুর ইউনিয়ন আ’লীগ সম্পাদক ও সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুক আহমেদ তার ইউনিয়নে অনুপ্রবেশকারী স্পেন প্রবাসী মাজহারুল আনোয়ার মোর্শেদ এর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। একই অভিযোগ রয়েছে মদনখালী ইউনিয়নের প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মানিক মন্ডলের বিরুদ্ধে। অপরদিকে জাতীয় পার্টি থেকে ওইসব ইউনিয়নে এ পর্যন্ত ১৭ জনকে মনোনয়ন পত্রের ফরম দেয়া হয়েছে।

উপজেলার ইউনিয়ন থেকে গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে জানা গেছে, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর সংখ্যা বেশী হবে না। আবার স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা বাড়তে পারে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যারা আ’লীগ থেকে মনোনয়ন পাবেন না। তাদের অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।

উপজেলার কাবিলপুর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান শামছুল আলম আ’লীগ সাক্ষাতকার বোর্ডে সাফ জানিয়েছেন তাকে মনোনয়ন না দিলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন। সূত্রটি আরও জানিয়েছে, প্রার্থী বাছাইয়ে স্বজনপ্রীতি, গড়িমসি বা রহস্যজনক আচরণ করা হলে, নৌকা প্রতীকের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে। আওয়ামীলীগের ভুল হলে এখানে জাতীয় পার্টির পোয়াবারো হবে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

টুকুরিয়া ইউনিয়নের ৪ বারের চেয়ারম্যান (বর্তমানেও) আ’লীগ নেতা মিজানুর রহমান শাহীন দল থেকে মনোনয়ন পাচ্ছেন না জেনেই তিনি জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এর সাথে দেখা করে লাঙ্গল প্রার্থীতা নিশ্চিত করে নিয়েছেন। শাহীন মিয়া জানান- প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পূর্ন আস্থা রেখেই মহাজোটের শরীক দল জাপার লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবো। ওই ইউনিয়নে নৌকা প্রার্থীকে নিয়ে বিপদে পড়তে পারে আ’লীগ। এক্ষেত্রে আ’লীগ নেতারা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান- আওয়ামীলীগকে যারা ব্যবহার করবে, তাদের পরাজয় নিশ্চিত। আর আওয়ামীলীগ যাদেরকে ব্যবহার করবে তারাই সফলকাম হবে। চৈত্রকোল ইইনয়নের আ’লীগ নেতা চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলদার হোসেন বলেন- গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আমার কাছে এসে তথ্য নিয়েছেন। তারা অন্যান্য ইউনিয়নেও গেছেন।

স্থানীয় আ’লীগ দলীয় সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার চৈত্রকোল ইউনিয়নের- সাবেক চেয়ারম্যান দেলদার হোসেন, শাহ্ আলম, জিয়াউর রহমান সবুজ; ভেন্ডাবাড়ীর আব্দুল হালিম সরকার, মঞ্জুর হোসেন মন্ডল, শহিদুল ইসলাম-১, শহিদুল ইসলাম-২, আসাদুজ্জামান রাজু, রেজাউল করিম পঁচা, ওয়াজেদ আলী, ফারুক আহমেদ; বড় দরগা ইউপির- সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগ সভাপতি মোতাহারুল হক বাবলু, সফুরা বেগম, মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক, এমদাদুল হক, হারুন অর রশীদ; কুমেদপুরের- সাবেক চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক লাল, সাখাওয়াত হোসেন, মিজানুর রহমান, মোশফাক হোসেন খাঁন চৌধুরী ফুয়াদ, গোলাম রব্বানী ইস্তাদুল, আব্দুল হাকিম মিয়া; মদনখালীর বর্তমান চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মঞ্জু, সামছুল আলম, জহিরুল ইসলাম সাজু, গওসুল আজম, মোস্তাফিজার রহমান বকুল, মোস্তাফিজার রহমান মানিক মন্ডল; টুকুরিয়ার-আতাউর রহমান মন্ডল ও আব্দুর রাজ্জাক, শানেরহাটের বর্তমান চেয়ারম্যান মেজবাহুর রহমান, আলাউল হক সুধা, সেলিম মিয়া, তরুণ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মন্টু, পাঁচগাছীতে- লুৎফর রহমান লতিব, রাশেদুল ইসলাম মিন্টু, ভবেশ চন্দ্র বর্মন, সুভাস চৌধুরী, বাবলু মন্ডল, মিঠিপুরে সাবেক চেয়ারম্যান হাসান আলী সরকার, হামিদুর রহমান মঞ্জু, মুরালী চন্দ্র বর্মন, এসএম ফারুক আহম্মেদ, স্পেন প্রবাসি মাজহারুল আনোয়ার মোর্শেদ, রফিকুল ইসলাম, চতরায়- বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এনামুল হক শাহীন, মাসুদ মিয়া, মমিনুল ইসলাম রঞ্জু প্রধান, এজেডএম সেকেন্দার আলী মন্ডল, মিজানুর রহমান রাজু, দেলোয়ার হোসেন, কাবিলপুরে- আহম্মদ আলী, শামছুল আলম, রফিকুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, মিজানুর রহমান চেয়ারম্যান পদের মনোনয়ন পেতে আবেদন করেছেন। অপরদিকে জাপা থেকে বড়দরগায় ফারুক আহমেদ, চতরায় জয়নাল হোসেন, মদনখালীতে আবুল কাশেম মিয়া, কুমেদপুরে মকবুল হোসেন, চৈত্রকোলে ইসাহাক মিয়ার নাম প্রায় চুড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা জাপার সাধারন সম্পাদক নুর আলম যাদু বলেন- দলের চেয়ারম্যানের নির্দেশে আমরা ১১টি ইউনিয়নেই প্রার্থী দেব। লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিতে ভোটাররা এখন দিন-ক্ষন-সময় গুনছেন। প্রার্থীরাও খোশ মেজাজে আছেন। কারণ এটি লাঙ্গলের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। ভোটাররা আসন্ন ইউনিয়ন নির্বাচনে তার প্রতিফলন ঘটাবে ইনশাল্লাহ। উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মোতাহারুল হক বাবলু বলেন- তৃণমুলের মতামত ও সহযোগিতায় প্রার্থীদের বাছাই করা হয়েছে। আমরা সবক’টি ইউনিয়নে বিজয়ী হবো। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ভেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম, রামনাথপুরের ভাটা ব্যবসায়ী দানশীল ব্যক্তিত্ব আলহাজ্ব আনিছার রহমান এর নাম শোনা যাচ্ছে।


(জিকেবি/এস/ফেব্রুয়ারি২৪,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test