E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১০ বছর পর খালাশপীর কয়লা খনির ভাগ্য খুলছে!

২০১৬ ফেব্রুয়ারি ২৯ ১৫:৪৭:৪৫
১০ বছর পর খালাশপীর কয়লা খনির ভাগ্য খুলছে!

পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি : উপমহাদেশের উৎকৃষ্টমানের পীরগঞ্জের খালাশপীর কয়লা খনির ভাগ্য খুলছে! ২০০৬ সালে সরকারের কাছে খনিটির সমীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়ার ১০ বছর পর শনিবার প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-১ জাহাঙ্গীর আলম এবং হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন খনি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

কয়লা খনি প্রকল্প সূত্র জানায়, এশিয়া মহাদেশের শ্রেষ্ঠ কয়লা খনিটি পীরগঞ্জের মদনখালি ইউনিয়নের মাগুড়া গ্রামে। উপজেলা সদর থেকে ১৩ কিঃ মিঃ পশ্চিমে খনিটির অবস্থান। সেখানে ১৯৫৯ থেকে ১৯৬২ পর্যন্ত বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) পরীক্ষার নিরীক্ষার পর খালাশপীর খনির অবস্থান নির্ণয় করে। এরপর ১৯৮৯-১৯৯০ সালে জিএসবি ২৫ বর্গ কিঃ মিঃ খনি এলাকায় প্রাথমিকভাবে ৪টি কূপ খনন করে ৩ টিতে ২৮৪ মিটার থেকে ৪৮০ মিটার গভীরতায় উন্নতমানের বিটুমিনাস কয়লার সন্ধান পায়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে খনির টপোগ্রাফিক্যাল সার্ভের জন্য কনসোর্টিয়াম অফ হোসাফ ইন্টারন্যাশনাল ও চায়নার সেনউইন মাইনিং গ্রুপ সরকারের কাছে আবেদন করে। একটি চীনা প্রতিষ্ঠান খনিজ জরিপের প্রাথমিক কাজ দ্বি-মাত্রিক ও ত্রি-মাত্রিক (২/ডি ও ৩/ডি) সিসমিক সার্ভের জন্য ২০/২৫ ফিট বোরিং করে সুড়ঙ্গঁ পথে খনিতে সাড়ে ৭ হাজার বোমা বিষ্ফোরণ করে। পাশাপাশি কয়লার গভীরতা, পুরুত্ব, মজুদ, স্তর জানতে ৭টি কূপ খনন করে।

অপরদিকে ভারতের জিওটেক কোম্পানীও ১৪টি কূপ খনন করে সবগুলোর তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে হোসাফ কনসোর্টিয়াম ২০০৬ সালের আগষ্টে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ে সমীক্ষা প্রতিবেদন (ফেসিবিলিটি রিপোর্ট) জমা দিয়ে মাইনিং লিজের জন্য আবেদন করেছে।

সূত্রটি আরও জানায়, ২৫ বর্গ কিঃ মিঃ আয়তনের ৮ স্তর বিশিষ্ট খালাশপীরের কয়লা খনিতে সম্ভাব্য কয়লা মজুদের পরিমাণ ৬’শ ৮৫ মিলিয়ন টন। যা দিয়ে বাংলাদেশের ২’শ বছরের কয়লার চাহিদা মেটানো সম্ভব। সমীক্ষার পর ২ দশমিক ৫২ কিঃ মিঃ এলাকায় ৮ স্তর বিশিষ্ট খনিতে ১’শ ৪৩ মিলিয়ন টন প্রমাণিত মজুদ কয়লা রয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা হলে প্রমাণিত মজুদ কয়লার ৪০ ভাগ উত্তোলন করলে প্রতি বছর ২ মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলন করা যাবে। যা দিয়ে প্রথম ৫ বছর প্রতিদিন ৫’শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং কয়লা উৎপাদন বাড়ালে ১০ম বছরে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। সেইসাথে ৪/৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। এখানে বিটুমিনাস নামের উচ্চ জ্বালানী ক্ষমতা সম্পন্ন কয়লা রয়েছে। প্রতি পাউন্ড কয়লার জ্বালানী ক্ষমতা ১০ হাজার ৫’শ ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (বিটিইউ)। এতে ক্ষতিকর সালফারের উপস্থিতি মাত্র এক ভাগেরও কম। খনির এক স্তরে ধাতু গলানোর কাজে ব্যবহৃত কোকিংকোল ও চুনাপাথর এবং কাঁচ বালি রয়েছে, এগুলো অনেক খনিতেই পাওয়া যায় না।

খালাশপীর কয়লা খনিকে ঘিরে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে পীরগঞ্জবাসী। এ ব্যাপারে পরিদর্শনে আসা হোসাফ গ্রপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন- পরিবেশের সাথে ভারসাম্য রেখে ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করলে পরিবেশের কোন ক্ষতি হবে না। আমরা খনি সমীক্ষার প্রতিবেদন ২০০৬ সালে সরকারের কাছে জমা দিয়েছি। সরকার কয়লানীতি চুড়ান্ত করলে এ খনির (খালাশপীর কয়লা খনি) কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন কর্মসুচী বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-১ জাহাঙ্গীর আলম বলেন- এলাকার জনগনকে সাথে নিয়ে সরকার কয়লা উৎপাদনে যাবার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ জন্য আমরা সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর পীরগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লাখো মানুষ খালাশপীর কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের দাবি জানালে তিনি জনতাকে কয়লা উত্তোলনের প্রতিশ্রুতি দেন। এ সময় আশান্বিত হয়ে উঠে পীরগঞ্জবাসী। এ পরিদর্শনকে পীরগঞ্জবাসী কয়লা খনির ভাগ্য খুলছে বলে মনে করছেন। এ সময় খনি এলাকায় হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে। তারা সমস্বরে খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের দাবী জানায়।

(জেকেবি/এএস/ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test