E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

তালতলীর বন রক্ষক খাচ্ছেন জীবজন্তুর খাবার আর বনের গাছ

২০১৪ জুন ০৩ ১৫:০১:২৭
তালতলীর বন রক্ষক খাচ্ছেন জীবজন্তুর খাবার আর বনের গাছ

বরগুনা প্রতিনিধি : বরগুনার তালতলী রেঞ্জের বনবিভাগের সকিনা বিট কর্মকর্তা মো. আলতাফ কাজী সংরক্ষিত টেংরাগিরি বন থেকে কেওড়া, সুন্দরী ও বাইন গাছ কেটে পাচারসহ ওই বন রক্ষকের বিরুদ্ধে জীবজন্তুর জন্য সরকারিভাবে দেওয়া  খাবার জন্তুদের না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরেজমিনে ঘুরে, বনকর্মী এবং স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপকালে ঘটনান সতত্যা পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, টেংরাগিরি বনে সরকারিভাবে গড়ে ওঠা ইকোপার্কের ৪টি মেছো বাঘ, ৮ টি হরিণ, ২ কুমির, ২৪ টি শুকরের খবারের জন্য সরকারি বরাদ্দ দায়িত্বরত বিট কর্মকর্তা আলতাফ নিজে ওই প্রাণীদের না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। খাবারের অভাবে প্রাণীগুলো ইতোমধ্যেই রুগ্ন হয়ে গেছে। একটি হরিণ ইতিমধ্যে মারা গেছে। মঙ্গলবার ইকোপার্কে গিয়ে দেখা গেছে বন বিভাগের বোটম্যান (মাঝি) গিয়াস উদ্দিন একটি বালতিতে কুমির ও মেছো বাঘের জন্য কিছু ব্রয়লার মুরগীর চামড়া, হাঁড়, পা নিয়ে এসেছেন। শুকরকে দেয়া হচ্ছে চালের কুড়া। হরিণের জন্য বন থেকে সংগ্রহকরা কিছু পাতা।
বোটম্যান গিয়াস উদ্দিন জানান, প্রতিটি বাঘ ও কুমিরের জন্য প্রতিদিন এক থেকে দেড় কেজি মাংস, শুকরের জন্য ১৫ কেজি কুড়া, ৬ কেজি চাল এবং পর্যাপ্ত মিষ্টিআলু ও কুমড়া এবং হরিণের জন্য বাজার থেকে বিভিন্ন শাক ও পাতা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে বিট কর্মকর্তার নির্দেশে দুই দিন পর পর ওই পরিমান খাবার তিনি বিতরন করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বীটের কয়েকজন কর্মচারী জানান, স্থানীয় দালাল খলিল আকন, শহিদ আকন ও জামাল আকনের মাধ্যমে গাছগুলো বড় নৌকা ও ট্রলার যোগে বেহুলার খাল, গৌয়ামতরার খাল, বড়চরের খার, ছোট চরের খাল দিয়ে গভীর রাতে পার্শ্ববর্তী খেপুপাড়া উপজেলার দরজার খাল হয়ে মহিপুরে চলে যায়। পরে চোরাকারবারীরা এসব জায়গা থেকে কয়েকটি রুট দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় গাছগুলো পাচার করে দেয়। এ ভাবে কয়েক মাসে কোটি টাকার গাছ পাচার করে ওই কর্মকর্তা।
গাছ পাচার ও জীবজন্তুর বরাদ্দ আত্মসাতের বিষয়ে বিট কর্মকর্তা আলতাফ কাজী বলেন, বন থেকে জেলেরা গাছ কেটে পাচার করছে এটি সত্য। তিনি কিছু কাটা গাছ উদ্ধার করেছেন। জেলেদের বিরুদ্ধে মামলা দেবেন। ইকোপার্কের প্রাণীদের খাবার বরাদ্দে ভাগ বসানোর বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, যখন যে খাবার পাওয়া যায় তাই প্রাণীগুলোকে দেয়া হচ্ছে। প্রাণীগুলোর জন্য প্রতিদিন সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ কী পরিমান জানতে চাইলে তিনি তা জানাতে রাজি হয়নি।
স্থানীয় জেলেরা তাদের বিরুদ্ধে বিট কর্মকর্তার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানান, তারা ছোট ছোট নৌকা নিয়ে মাছ ধরেন। বনের গাছ কেটে পাচার করার মতো কোন প্রকার সক্ষমতাই তাদের নেই। তাছাড়া তারা সকলেই স্থানীয় বাসিন্দা। চুরি করে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাবেন কোথায়। জেলেরা সরকারি অনুমতি সাপেক্ষে বনের গাছের ভেঙ্গে পড়া শুকনো ডাল-পালা জ্বালানীর হিসেবে সংগ্রহ করেন জানিয়ে বলেন, এ জন্য বিট কর্মকর্তা তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মাসিক ৫ শ করে টাকা আদায় করেন। এ টাকা দিতে অসম্মতি জানালে তাদের চোর বলে হরয়ানী করেন আলতাফ কাজী।
বন বিভাগের তালতলী রেঞ্জ কমকর্তা মলয় কুমার জানান, তিনি সখিনা বিট কর্মকর্তা আলতাফ কাজীর কুকীর্তি সম্পর্কে জেনেছেন। সে চোরাই গাছ উদ্ধার ও চোরদের ধরা ব্যাপারে তাঁর কাছে অঙ্গিকার করেছেন। তবে বন বিভাগের সম্মানের বিষয়টি চিন্তা করে আলতাফ কাজীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলে জানান।
(এমএইচ/এএস/জুন ০৩, ২০১৪)



পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test