E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

পাবনার উলাট মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ

২০১৬ এপ্রিল ০২ ২৩:৫৫:১৯
পাবনার উলাট মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ

পাবনা প্রতিনিধি :পাবনা সুজানগর উপজেলার মানিক হাট ইউনিয়নের উলাট মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হোসাইন আহমেদ এর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ করেছে উলাট এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল কুদ্দুসসহ এলাকাবাসী।

গত ২৮ মার্চ-১৬ তারিখে উলাট মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হোসাইন আহমেদ এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাবনা জেলা প্রশাসক বরাবর এলাকাবাসীর পক্ষে একটি আবেদন করেছে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল কুদ্দুস।

এলাকাবাসীর অভিযোগ হোসাইন আহমেদ ৪ থেকে ৫ বছর আগে তার প্রকৃত পরিচয় গোপন করে স্থানীয় কিছু জামায়াত শিবিরের সাথে যোগসাজসে এই মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায় হোসাইন আহমেদ ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে সরাসরি জড়িত ছিল।

এ বিষয়ে হোসাইনের নিজ এলাকা যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জুলফিকার আলী বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের একটি প্যাডে এই মর্মে প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেন যে, হোসাইন আহমেদ একজন প্রকৃত রাজাকার এবং যুদ্ধাপরাধী। ১৯৬৯ সালে সে নিজ উপজেলার এরিয়াস দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করে যশোরের বাঘার পাড়া ফাজিল মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। এর কিছুদিনের মধ্যে সে মাদ্রাসার একমাত্র ছাত্র সংগঠন বর্তমান ছাত্র শিবিরের যোগদিয়ে সাম্প্রদায়িক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। এরই মধ্যে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে সে ক্ষমতার লিপ্সা তথা পাকিস্তান প্রেমে অনুপ্রাণীত হয়ে স্থানীয় রাজাকার মোমিন আহমদের হাত ধরে দেশ বিরোধী সংগঠন রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়। দেশের সিংহভাগ মানুষ যখন দেশ মাতৃকার টানে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন তখন সে রাজাকার বাহিনীতে যোগদিয়ে নিরীহ নিরপরাধ শান্তি প্রিয় মানুষের উপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন নিপীড়ন চালানোর পাশাপাশি হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠে। তার এসব নির্যাতন ও হত্যা এবং মহিরন কড়াইতলা গ্রামের জয়নাল আবেদীনকে অমানবিক নির্যাতন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলা অবস্থায় উক্ত শামসুর রহমান ব্যক্তিগত কাজে যশোর বিমান অফিসে গেলে রাজাকার হোসাইন আহমেদ ও রাজাকার মাহমুদ আলী তাকে সেখান থেকে অস্ত্রের মুখে ধরে বাঘারপাড়া রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে আসে। এরপর তারা শামসুরের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধাদের সম্পর্কে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা চালায়। কিন্তু সে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে কোন তথ্য না দেওয়ায় তারা তাকে ধরে আনার একদিন পর নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করে। একই উদ্দেশ্যে তারা উক্ত জয়নাল আবেদীনকে প্রকাশ্যে দিবালকে বাড়ি থেকে ধরে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে আসে। কিন্তু সেও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে কোন তথ্য দেয়না। এতে হোসাইন আহমেদ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ৭দিন ওই ক্যাম্পে আটকে রেখে বর্বরোচিত নির্যাতন করে পাশ্ববর্তী একটি ডোবায় ফেলে দেয়। সেখান থেকে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে যশোর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ায় আজও তিনি বেঁচে আছেন তার মোবাইল নং-০১৭১২-৯২৬৪৯০। এভাবে রাজাকার হোসাইন আহমেদ দীর্ঘ ৯ মাস যুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময় এলাকার মুক্তিকামী নারী পুরুষের উপর নির্যাতন নীপিড়ন চালানোর পাশাপাশি স্বাধীনতা বিরোধী ষড়যন্ত্র চালায়। এসব ষড়যন্ত্র, নির্যাতন এবং হত্যার প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে এখনও অনেকে জীবিত রয়েছেন। বিশেষ করে হোসাইন আহমেদ কর্তৃক শামসুর রহমানকে হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী একই উপজেলার পাইক পাড়া (কড়ইতলা) গ্রামের বাসিন্দা ফসিয়ার রহমান। মোবাইল নং-০১৯৩৪-২৬৪৫২৪ এখনও সেই লোমহর্ষক হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তবে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর রাজাকার হোসাইন আহমেদ রাতের অন্ধকারে বাঘারপাড়া থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ায় আজও এলাকাবাসীর মনে প্রতিশোধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। আমি একজন মুক্তি যোদ্ধা হিসেবে প্রত্যাশা করি স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী কুখ্যাত রাজাকার হোসাইন আহমেদ দেশের কোথাও আত্মগোপন করে থাকলে অথবা কারো আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালে সে এলাকার সরকারি উর্ধতন কর্তৃপক্ষ যেন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেন। পাশাপাশি তিনি যদি সেই এলাকার কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকেন তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন দেশাত্মবোধের টানে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।

উলাট মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হোসাইন আহমেদ ছাত্র শিবিরের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ স্বীকার করলেও মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত নয় বলে জানান। তিনি বলেন উলাট মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির দ্বন্দ্বের কারণে এলাকাবাসীর কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তার বিরুদ্ধে এ সব অভিযোগ এনেছে।

হোসাইন আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল কুদ্দুস জানান আমরা হোসাইনের বিরুদ্ধে উপযুক্ত তথ্য প্রমান পেয়েছি। বিষয়টি এখন জাতীয় মানবাধিকার অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। আমরা তার সুষ্ঠু বিচার আশা করছি।





(পিএস/এস/এপ্রিল০২,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test