E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এবারো সর্বনাশ ঘটাতে পারে পীরগঞ্জের ইউক্যালিপটাস!

২০১৬ এপ্রিল ০৪ ১৬:৫৮:৪৫
এবারো সর্বনাশ ঘটাতে পারে পীরগঞ্জের ইউক্যালিপটাস!

পীরগঞ্জ (রংপুর) থেকে গোলাম কবির বিলু : এবারো পীরগঞ্জে ইউক্যালিপটাস গাছ প্রাকৃতিক আর কৃত্রিম সম্পদ সর্বনাশ ঘটাতে পারে। ফি-বছরই এ উপজেলায় বৈশাখী ঝড় কিংবা প্রবল বাতাসে ইউক্যালিপটাস গাছ ভেঙ্গে পড়ে সাধারন মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

অল্প সময়ে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অধিকাংশ মানুষই গাছটি বাগান কিংবা রাস্তায় রোপন করছে। ফলে জনসচেতনার অভাবে প্রতিনিয়তই প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। ফলে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। সপ্তাহ খানেক আগে পীরগঞ্জ উপজেলায় এক প্রবল ঝড়ে ইউক্যালিপটাসের আঘাতে বিদ্যুৎ যোগাযোগ ব্যবস্থা লন্ডভন্ডসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান এবং জেলা পরিষদের সাথে চুক্তি সাপেক্ষে অধিকাংশ রাস্তায় এমনকি সাধারন মানুষও তাদের ফসলের জমির ধারে বা জমিতেই ইউক্যালিপটাস গাছের বাগান করেছে। এখনও তা অব্যাহত রয়েছে। গাছটি দুর্বল হওয়ায় সামান্য ঝড়েই ভেঙ্গে পড়ছে। ইতিপূর্বে হাজারো ঘর-বাড়ি, অসংখ্য শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উপর গাছটি ভেঙ্গে পড়ে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এটি প্রাকৃতিক সম্পদের পাশাপাশি কৃত্রিম সম্পদেরও ক্ষতি করছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। গত বছর এপ্রিলে কাল বৈশাখী ঝড়ে পীরগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, ছাতুয়া দাখিল মাদরাসা, ভেন্ডাবাড়ী মহিলা কলেজসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইউক্যালিপটাস গাছ ভেঙ্গে পড়ায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারেনি।

অপরদিকে সামান্য ঝড়েই ইউক্যালিপটাস গাছটি ভেঙ্গে পড়ায় কোমর সোজা করে দাঁড়াতে রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর প্রায় ২ মাস সময় লেগেছিল। গত বছরের ২১ এপ্রিল এবং মে মাসের ২৩ ও ২৬ তারিখের বৈশাখী ঝড়ে ব্যাপকহারে গাছটি ভেঙ্গে পড়ায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা লন্ডভন্ড হয়েছিল। ফলে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা চরম ভোগান্তির মাঝে পড়েছে। সামান্য বাতাসেই গাছটি তারের উপরে ভেঙ্গে পড়ায় খুঁটি পর্যন্ত ভেঙ্গে যায়। রংপুরের পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, পীরগাছা, গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর ও সুন্দরগঞ্জ নিয়ে রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ গঠিত। ওই সমিতির পীরগঞ্জ উপকেন্দ্রের এজিএম আল হেলাল বলেন- ইউক্যিালিপটাস গাছটি আমাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামান্য বাতাসেই গাছটি ভেঙ্গে তারের উপর পড়ায় গত বছর সাড়ে ৫’শ খুঁটি ভেঙ্গে গিয়েছিল। ৪ হাজার কি.মি বৈদ্যুতিক লাইনের মধ্যে অনেক স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমীর চন্দ্র ঘোষ বলেন- ইউক্যালিপটাস গাছটি ভিনদেশী প্রজাতির। এর অনেক পানির প্রয়োজন হওয়ায় মাটির অনেক নীচে শিকড় দিয়ে পানি শোষণ করে। আর খরা প্রবণ এলাকায় অধিক পরিমানে পানি শোষণ এবং মাটির শক্তি নষ্ট করায় জমিতে ফসল কম উৎপাদন হয়। এর পাতা সহজে পচনশীল না হওয়ায় পানিতে কিংবা জমিতে পড়লে মাছ ও ফসলের ক্ষতি সাধন হয়।

পীরগঞ্জের খালাশপীর কয়লা খনি প্রকল্পের ভূ-তত্ত্ববিদ শ্রী অনুপ কুমার রায় বলেন- গাছটি স্বল্প সময়ে অর্থনৈতিক সুবিধা দিলেও অধিক পানি শোষনের কারণে দেশকে মরুকরণের দিকে ধাবিত করছে। পাশাপাশি পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে।

উপজেলার চৈত্রকোল, ভেন্ডাবাড়ী, বড়আলমপুর, চতরা, মদনখালী, কুমেদপুর, রায়পুর, মিঠিপুর, কাবিলপুর, রামনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাথে চুক্তির ভিত্তিতে এলাকার মানুষজন শত শত কিলোমিটার রাস্তায় ইউক্যালিপটাস গাছের বাগান করেছে। এ ব্যাপারে বড়আলমপুর ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বলেন- গ্রামবাসী এসে ইউনিয়ন পরিষদের সাথে চুক্তি করে রাস্তার দু’ধারে ইউক্যালিপটাস গাছ রোপন করেছে। কয়েক বছর আগে লাগানো গাছগুলো বড় হয়েছে। সেগুলো এখন ঝড়ে ভেঙ্গে পড়ে নানান সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

উপজেলার কাদিরাবাদ বনবীটের অফিসার আব্দুল হাই সরকার বলেন- ইউক্যালিপটাস গাছটি দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় সাধারন মানুষ এটি রোপন করছে। ক্ষতিকর হওয়ায় গাছটির ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্সারী মালিক বলেন- অল্প সময়ে গাছটি বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ এটির প্রতি চাহিদা বেড়েছে। তাই আমরাও এর চারা করছি। গাছটির ক্ষতিকর দিক সস্পর্কে সরকারীভাবে ব্যাপক প্রচারনা এবং প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ করা হলে প্রকৃতিও রক্ষা পাবে, গাছ বিক্রিও বন্ধ হবে।

এ ব্যাপারে রাজশাহী বিশ্বািবদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মঞ্জুর হোসেন মোবাইল ফোনে বলেন- ইউক্যালিপটাস অষ্ট্রেলিয়ার মরুজ অঞ্চলে জন্মে। এটি বনায়নের জন্য বৃটিশরা আমাদের দেশে এটি এনেছে। এটি খুব পানি শোষণ করে এবং এর শিকড় থেকে এক ধরনের বিষাক্ত জৈব্য নিঃসরন হওয়ায় প্রকৃতির ক্ষতি হয়। বন বিভাগের উদাসীনতা, এনজিও’দের তৎপরতা আর সাধারন মানুষের অজ্ঞতার কারণে উত্তরাঞ্চলে গাছটি ব্যাপক আকারে রোপন করা হয়েছে। মানুষকে সচেতন করে গাছটির ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা প্রয়োজন।

(জিকেবি/এএস/এপ্রিল ০৪, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test