E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাগুরায় রাজাকার পুত্রের হাতে নৌকা প্রতীক

২০১৬ এপ্রিল ১৬ ১৫:১৭:৫৫
মাগুরায় রাজাকার পুত্রের হাতে নৌকা প্রতীক

দীপক চক্রবর্তী, মাগুরা : বাবা একাত্তরের রাজাকারদের পিস কমান্ডার। বড় ভাই স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি। আর ছোট ভাইয়ের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীক।

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে একাত্তরের কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার হিসেবে পরিচিত চাঁদ আলি শিকদারের ছেলে মিজান শিকদারকে। ইতোমধ্যেই যার মনোনয়নকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা ও বাদ-প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এমনকি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ-মানববন্দনও করা হয়েছে। অথচ দলের হাই কমান্ড পালন করছেন নিরব ভূমিকা।

মাগুরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একাত্তরের যুদ্ধ চলাকালে চাঁদ আলী শিকদার বিনোদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক তা-ব চালান। ওই সময় তার নেতৃত্বে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষকেও ধরে নিয়ে হত্যা, বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগ ও লুটতারাজ চালানো হয় বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডঃ আলমগীর হোসেন বাচ্চু জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চাঁদ আলি শিকদার স্থানীয় পিস কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। সে সময় তার নির্দেশে মহম্মদপুরের মুক্তিযোদ্ধা শহিদ মুকুল, আবদুর রাজ্জাক, মহিউদ্দিন সহ ১১জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়। বিনোদপুরের খালিয়া এলাকার হাফিজুর মাস্টার, হাবিবুর রহমান, হারুনুর রশিদের বাড়িসহ ১০ থেকে ১৫টি বাড়িতে একযোগে অগ্নি সংযোগ করে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর যুদ্ধাপরাধি হিসেবে তাকে আটকও করা হলে। তিনি জেল থেকে মুক্ত হয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে মিশে যান। যে কারণে তার বিরুদ্ধে পরবর্তিতে কখনোই কোন অভিযোগ তোলা হয়নি। উপরোন্তু দলের পক্ষ থেকে নানাভাবে তার পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ তারই পুত্রকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সহায়তায় নৌকা মার্কার কান্ডারি বানানোর চেষ্টা চলছে। এটি স্থানীয় সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য অপমানকর।

মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান বলেন, চাঁদ আলি শিকদার নিজে রাজাকার কমান্ডার ছিলেন কেবল তাই নয়। তার বড় ছেলে এ্যাড. ফিরোজ তিনি নিজেও জ্বালাও পোড়াও রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি এই ইউনিয়নের বিএনপির সভাপতি। আবার ছোট ভাই মিজান শিকদার আওয়ামী লীগ সেজে নৌকা মার্কা দখল করে নিয়েছেন। তার অপরাজনীতির কারণে এই এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা কোণঠাসা হয়ে আছে।

বিনোদপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী মিজান শিকদার বলেন, আমার বাবা একাত্তরে কি করেছেন জানিনা। কিন্তু ৯০ সালের দিকে তাকে মাগুরা জেলা কৃষকলীগের সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। স্থানীয় সাধারণ মানুষের কাছে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি এ ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। ৯৭ সালে বাবার মৃত্যুর পর আমি সরকারি চাকরি ছেড়ে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হই। বর্তমানে এই ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। কিন্তু এতদিন পর শুধু শুধুই মুক্তিযুদ্ধ-রাজাকার বিষয়টি আলোচনায় আনা হচ্ছে। চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন না পেয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাক মণ্ডল বিএনপি কর্মীদের সাথে নিয়ে তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে এসব প্রচার চালাচ্ছেন। কিন্তু রাজ্জাক মণ্ডল মুক্তিযোদ্ধা হলেও তিনি আওয়ামী লীগের কেউ নন।

এ বিষয়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোল্যা নবুয়ত আলি বলেন, চাঁদ আলি শিকদার একজন কুখ্যাত রাজাকার ছিলেন এটি সত্য। যুদ্ধাপরাধি হিসেবে তিনি জেলও খেটেছেন। আবার জেল থেকে মুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুরু করেন। এখন তার ছেলের হাতে নৌকা তুলে দেয়া হয়েছে। আমরা তার বিরোধিতা করে মানববন্ধন বিক্ষোভ করেছি। কিন্তু কার কথা কে শুনছে।

রাজাকার পরিবারের সন্তানকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কক কুন্ডু বলেন, চাঁদ আলি শিকদার অতিতে রাজাকার হলেও পরবর্তিতে আওয়ামীলীগের নীতি আদর্শ মেনেই রাজনীতি করেছেন। তার সন্তান মিজান শিকদারও একজন আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেছেন। তিনি অধিক জনপ্রিয় বিধায় তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

(ডিসি/এএস/এপ্রিল ১৬, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test