E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

উন্নয়ন সারতে হবে ৩০ দিনে: লুটপাট ছাড়া পথ নেই

২০১৪ জুন ০৫ ১৩:৪৭:৪২
উন্নয়ন সারতে হবে ৩০ দিনে: লুটপাট ছাড়া পথ নেই

স্টাফ রিপোর্টার : বর্ষায় রাস্তা মেরামতসহ গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারের জন্য টিআর কর্মসূচির আওতায় এমপিদের নামে ১৫৫ কোটি টাকা মূল্যের ৪৪ হাজার ৫০০ টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।

এই বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করতে হবে। প্রত্যেককে এক থেকে সর্বোচ্চ সাত টনের একেকটি প্রকল্প তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

এত অল্প সময়ের মধ্যে বিপুলসংখ্যক প্রকল্প তৈরি ও তার বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়েই। কারণ ৩০০ নির্বাচনী এলাকার ৩০০ এমপি জনপ্রতি ১৪০ টন বরাদ্দ পেয়েছেন। প্রতিটি প্রকল্প গড়ে আড়াই টনের হলেও একজন এমপিকে কমপক্ষে ৫৬টি প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

এসব প্রকল্প জেলা কমিটির মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে। জেলা কমিটি শুধু প্রকল্প অনুমোদন করেই দায়িত্ব শেষ করবে না, তারা প্রকল্পের অগ্রগতিও পর্যালোচনা এবং প্রকল্পের বিপরীতে খাদ্যশস্য ঠিকমতো ব্যবহার হচ্ছে কি না তাও তদারক করবে। এসব প্রকল্পে যেসব শ্রমিক কাজ করে তাদের টাকা না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। জেলা কমিটি শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনাও নিশ্চিত করবে। প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করার জন্য কমিটি মাসে একবার বৈঠক করবে এবং তার অগ্রগতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে জানাবে। এই জেলা কমিটির উপদেষ্টা হচ্ছেন জেলার সব সংসদ সদস্য। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ সুপার, সব উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত বিভিন্ন দপ্তরপ্রধানরা এ কমিটির সদস্য।

জেলা কমিটিতে আসার আগে প্রকল্পগুলো উপজেলা কমিটিতে অনুমোদিত হয়ে আসতে হবে। উপজেলা কমিটিতেও উপদেষ্টা হচ্ছেন স্থানীয় এমপি। এই কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। সহসভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। উপজেলা কমিটির কাছে প্রকল্পগুলো আসবে ইউনিয়ন কমিটি থেকে। এ ক্ষেত্রে ইউনিয়ন কমিটির চেয়ারম্যান সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। ইউনিয়নের সব সদস্য টিআর কমিটিতে রয়েছেন। মূলত ইউনিয়নের সদস্যরা তাঁদের এলাকার প্রয়োজন নিরূপণ করে প্রকল্প তৈরি করেন। এরপর তা উপজেলায় পাঠানো হয়। প্রকল্প গ্রহণের পর বাস্তবায়নকাজ শুরুর আগেই প্রকল্পস্থানে সব তথ্য দিয়ে সাইনবোর্ড স্থাপন করতে হবে। এই সাইনবোর্ড এমন স্থানে বসাতে হবে, যেখানে সর্বাধিকসংখ্যক লোকসমাগম হয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রকল্প তৈরি থেকে অনুমোদন পর্যন্ত তিনটি কমিটিতে ঘুরতে হবে। একটি প্রকল্প তৈরি করা এক দিন বা দুই দিনের কাজ নয়। যথাযথভাবে প্রয়োজন নিরূপণ করে প্রকল্প তৈরি করার জন্যই এক মাস সময় দরকার। প্রকল্প তৈরি হলে সেটা ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে অনুমোদন করাতে হবে। তারপর রয়েছে উপজেলা কমিটি। সব শেষে যাবে জেলা কমিটিতে। আমাদের দেশের কাজের যে ধরণ, তাতে একটি প্রকল্প অনুমোদন হতেই কয়েক মাস লেগে যায়। প্রকল্প অনুমোদনের পর তার যথাযথ বাস্তবায়ন করা তো আরো দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। গ্রামীণ অবকাঠামো বা টিআর নিয়ে এভাবেই গোঁজামিল চলছে।

এসব প্রকল্পের বেশির ভাগই শেষ পর্যন্ত আর বাস্তবায়িত হয় না। প্রকল্পের কাগজপত্র ঠিক রেখে পুরো টাকাই আত্মসাৎ করা হয়। এই লুটপাটের দলে স্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তারাও রয়েছেন। তিনি আরো বলেন, এটা ধরেই নেওয়া যায়, আগামী এক মাসে বিভিন্ন গণমাধ্যমে টিআর হরিলুটের বিভিন্ন কাহিনী ছাপা হবে। সরকার যদি আন্তরিক হয়, তাহলে এসব ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে পারে। তবে এ ধরনের নজির আমরা সচরাচর দেখি না।

দুর্নীতি আর ক্ষমতাসীনদের স্বেচ্ছাচারিতায় এ ধরনের কর্মসূচি বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে। জানা গেছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা সংস্কারের নামে গত ১০ বছরে টিআর-কাবিখা খাতে সরকারগুলো ব্যয় করেছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। বিপুল এই অর্থ ব্যয় হলেও এসব কর্মসূচিতে কোনো জবাবদিহির ব্যবস্থা নেই। বর্তমান সরকার সবে ক্ষমতায় এসেছে। এই অল্প সময়ে নতুন করে বরাদ্দ দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রশ্ন তুলেছেন। সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপিরাও বাদ যাননি। তাঁদের প্রত্যেকের নামে ৫০ টন চাল বরাদ্দ হয়েছে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ- টিসিবির গতকালের বাজারদর অনুযায়ী প্রতি কেজি মোটা চালের বাজারদর ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা। গড়ে প্রতি কেজির দাম ৩৫ টাকা হলে ৪৪ হাজার ৫০০ টন চালের দাম ১৫৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

(ওএস/এটিআর/জুন ০৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test