E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাজাকারদের ফাঁসিতে উল্লসিত কিশোরগঞ্জবাসী

২০১৬ মে ০৩ ১৪:২১:১২
রাজাকারদের ফাঁসিতে উল্লসিত কিশোরগঞ্জবাসী

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : মানবতাবিরোধী অপরাধে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে অ্যাড. শামসুদ্দিন আহমদসহ ৪ রাজাকারের ফাঁসির রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। ট্রাইব্যুনালের ফাঁসির রায় ঘোষণার খবরে উল্লাস প্রকাশ করেন তারা এবং দ্রুত এ রায় কার্যকরের দাবি জানান।

এদিকে মঙ্গলবার মামলার রায় ঘোষণার পর পরই করিমগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ সদরে আনন্দ মিছিল করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। তারা বলছেন, এ রায়ের ফলে শহীদের আত্মা শান্তি পাবে। এখন তারা ৪ রাজাকারের ফাঁসি দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন।

করিমগঞ্জ পৌর এলাকার ঘোনাপাড়া গ্রামের ৮৫ বছরের বৃদ্ধা রাবেয়া খাতুন বাড়ির আঙিনায় স্বামীর কবরের পাশে বসে কাঁদছিলেন। মায়ের কান্না দেখে ডুকরে কেঁদে ওঠেন তার তিন ছেলে দুলাল, আলাউদ্দিন ও সালাউদ্দিন। রাবেয়ার স্বামী আব্দুল হামিদ একজন সহজ-সরল মানুষ ছিলেন। তার অপরাধ ছিল একটাই। তার বড় ছেলে গোলাম মোস্তফা গোলাপ মুক্তিযুদ্ধে গেছেন। আর এ অপরাধে রাজাকার নাসির তার দলবল নিয়ে আয়লা গ্রামে আব্দুল হামিদকে গুলি করে হত্যা করে।

রাবেয়া খাতুন বলেন ‘ স্বামীকে হত্যার পর রাজাকার নাসির আমাদের বাড়িতে এসে আমার কাছে ম্যাচ চায়। এর পর আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় আমাদের ঘরবাড়ি। ৭ ছেলে ৩ মেয়ে নিয়ে অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে এতদিন বেঁচে আছি। আজকের দিনটি দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। ঘাতকদের ফাঁসি হওয়ায় বুকের উপর থেকে একটা বড় পাথর সরে গেছে।’ তবে স্বামী হত্যার ঘাতকদের বিচার বাস্তবায়ন দেখে মরতে চান এ বৃদ্ধা।

গুজাদিয়া রামনগর গ্রামের যুবক পরেশ চন্দ্র সরকার ছিলেন রাজাকার শামসুদ্দিন আহমেদের বন্ধু। ১৯৭১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর শামসুদ্দিনের নেতৃত্বে একদল রাজাকার অস্ত্র ও গুলির মজুদ নিয়ে তাড়াইল যাচ্ছিল। বাড়ির সামনে জমিতে কাজ করতে দেখে পরেশকে তার নাম জিজ্ঞেস করে উত্তর না পাওয়ায় ব্রাশ ফায়ার করে পরেশের দেহ ছিন্নভিন্ন করে দেয় শাসসুদ্দিন। এমনকি হত্যার পর তার মরদেহ দাহ করার পরিবর্তে কবর দিতে বাধ্য করা হয়।

এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার স্বাক্ষী গুজাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ ভুইয়া জানান, পরেশ ও নাছির একই স্কুলে পড়তো। রাজাকার শামসুদ্দিন তার বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় পরেশকে তার নাম জিজ্ঞেস করে। এ সময় পরেশ বলছিল, আমার নাম আপনি জানেন না? সঙ্গে সঙ্গে তাকে গুলি করে হত্যা করে শামসুদ্দিন। গ্রামবাসীকে হুমকি দেয়া হয়, পরেশের মরদেহ যেন কবর দেয়া হয়। দাহ করা হলে পুরো রামনগর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হবে। বাধ্য হয়ে তাকে বাড়ির পেছনে মাটি চাপা দেয়া হয়।

করিমগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. মেহেদী আলম বলেন, করিমগঞ্জে ৪ রাজাকারের ফাঁসির রায়ের মধ্য দিয়ে এলাকাবাসী আজ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় করিমগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার গাজী আবদুল মান্নান, কুখ্যাত রাজাকার ক্যাপ্টেন এ টি এম নাছির, তার ভাই অ্যাডভোকেট শামছুদ্দিন আহমেদ এবং অপর দুই রাজাকার হাফিজ উদ্দিন ও আজাহারুল ইসলাম এলাকাবাসীর কাছে ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। বিশেষ করে দুই ভাই ক্যাপ্টেন নাছির ও শাসসুদ্দিনের নৃশংস বর্বরতার কথা এখনও ভুলতে পারেনি এলাকাবাসী।

হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ অসংখ্য অপরাধে লিপ্ত ছিলেন এসব রাজাকার। উপজেলার বিদ্যানগর, আয়লা, ফতেরগোপ ও কিরাটন ও পাশের এলাকায় নির্বিচারে হত্যা, লুট, অপহরণ অগ্নিসংযোগের তাণ্ডব চালায় তারা। এ সময় তাদের হাতে শহীদ হন ১৪ জন স্বাধীনতাকামী। বিদ্যানগর গ্রামেই হত্যা করা হয় ৮ জনকে। এছাড়া গুজাদিয়া রামনগর, আতকাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় নারকীয় এসব তাণ্ডব চালায় তারা।

২০১০ সালের ২ মে করিমগঞ্জ উপজেলার আয়লা গ্রামের মিয়া হোসেনের ছেলে গোলাপ মিয়া কিশোরগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৬নং আদালতে একটি মামলা করেন। এ মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, নাসির উদ্দিন আহমেদ করিমগঞ্জ হাই স্কুলে পড়ার সময় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়ে তার বাবা মিয়া হোসেনকে হত্যা করেন। পরে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মামলাটি তদন্ত শুরু করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ওই ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান।

(ওএস/এএস/মে ০৩, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test