E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরীয়তপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

২০১৬ মে ০৪ ১৪:২৫:৫৮
শরীয়তপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানীর প্রতিবাদে সপ্তাহ ব্যাপী ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, বিক্ষোভ আনোদালন করেছে শিক্ষার্থীরা। যৌন হয়রানির বিচার চেয়ে থানায় মামলা এবং জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করার ৭ দিন পার হয়ে গেলেও প্রশাসন আটক করতে পারেনি অভিযুক্ত নাঈম সরকারকে।

গত কয়েকমাস যাবৎ বিকৃত রুচির ম্যাচ মালিক কর্তৃক শিক্ষার্থীদের উপর এভাবে যৌন হয়রানীর কোন বিচার না হওয়ায় এ ঘটনা বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি ৬ ছাত্রীকে এক ম্যাচ মালিক যৌন হয়রানী করায় ফুঁসে উঠে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সোমবার ইনস্টিউটিটে গিয়ে দেখা গেছে ম্যাচ মালিকদের পক্ষ নিয়ে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ও বখাটেরা অধ্যক্ষের কক্ষে বসে চোখ রাঙ্গাচ্ছে অধ্যক্ষকে। স্থানীয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহবান জানালেও অপরাধিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা দিয়েছে তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় শরীয়তপুর পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট। কম্পিউটার টেকনোলোজি, ইলেক্ট্রোনিক্স টেকনোলোজি, টেলি কমিউনিকেশন টেকনোলোজি ও আইপিসিটি টেকনোলোজি এই মোট চারটি বিষয়ে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৪ শত জন শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটিকে। যাদের বেশীরভাগ শিক্ষার্থীই শরীয়তপুর জেলার বাইরে থেকে এসে লেখা পড়া করছে এখানে। এদের মধ্যে এক শতাধিক মেয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে। ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে কোন ছাত্রাবাস বা ছাত্রী নিবাস গড়ে উঠেনি শরীয়তপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। ফলে ইনস্টিটিউট এর আশে পাশের গ্রামগুলোতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালু করা হয় ছাত্রাবাস ও ছাত্রী নিবাস। এ সকল ছাত্রাবাসে বা ছাত্রী নিবাসে থেকেই পড়া লেখা করতে হচ্ছে বাইরে থেকে আসা বেশীরভাগ শিক্ষার্থীকে।

সম্প্রতি একটি ছাত্রাবাসে অবস্থিত ৪০ জন শিক্ষার্থী ছাত্রাবাসের মালিক কর্তৃক বিকৃত লালসার (সমকামি যৌন হয়রানীর) শিকার হওয়ার অভিযোগ উঠে। এ কারনে গত ৬ জানুয়ারি ওই ছাত্রবাস ত্যাগ করে এবং তার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ-মানবন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় দেওভোগ গ্রামে অবস্থিত গিয়াসউদ্দিন সরকার এর বাড়িতে শিক্ষাথীদের থাকার ছাত্র/ছাত্রী নিবাসে বসবাসকারী ৩০জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬জন ছাত্রীকে ম্যাচ মালিক এর ছেলে নাঈম সরকার কর্তৃক যৌন হয়রানি করার খবর ছরিয়ে পরে। বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি শরীয়তপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষকে জানালে তিনি তাৎক্ষনিক ভাবে উক্ত ৬ জন ছাত্রীকে উদ্ধার করে কলেজ ক্যাম্পাসের শিক্ষকদের বাসভবনে থাকার ব্যবস্থা করেন। ঘটনাটি তাৎক্ষনিক ভাবে ছড়িয়ে পরলে ইনস্টিটিউট এর ছাত্র-ছাত্রীরা তার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন এবং ক্লাস বর্জনসহ পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন। দফায় দফায় জেলা পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তারা এ নিয়ে সমঝোতা করার চেষ্টা চালায়। একজন ছাত্রী বাদী বাদী হয়ে শরীয়তপুর সদর পালং মডেল থানায় যৌন হয়রানীর অভিযোগ এনে নাঈম সরকারের বিরুদ্ধে একটি মামলাও দায়ের করেছে বলে জানা গেছে। এখনো ছাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে বলে জানিয়েছে তারা। নাঈম সরকারের ভাড়াটে মাস্তানদের ভয়ে স্টাফ কোয়ার্টারের ভেতরে থেকেও দরজা-জানালা খোলার সাহস পাচ্ছেনা ছাত্রীরা।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির সমর্থকরা ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করে ছাত্রদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। তারা মাদক সেবন করে কলেজের শহীদ মিনারের বেদীতে বসে। মাঝে মধ্যে ছাত্রদেরকেও মাদক সেবনে বাধ্য করে।

ইনস্টিটিউট এর শিক্ষার্থী আফসানা মিমি, চাঁদনী ইসলাম ও খাদিজা বলেন, আমরা ৬ মাস আগে থেকে নাঈম সরকারের বাড়িতে ভাড়া ঘরে ম্যাস করে ছয় বান্ধবী মিলে থাকছিলাম। আমাদের সকলের বাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায়। মা বাবা খুব কষ্ট করে আমাদের লেখা পড়ার টাকা যোগার করেন। দুই মাস আগে থেকে নাঈম সরকার আমাদের নানাভাবে উত্যক্ত করে আসছিলো । আমাদের ফোন করে অনেক বিকৃত রুচির কথা বলে কু-প্রস্তাব দিতো। গভীর রাতে ঘরে দরজা খুলতে আমাদের ডাকাডাকি করতো। দরজা না খুললে আমাদের অনেক রকমের হুমকি দিতো।এমনকি আমাদের তুলে নেয়ারও ভয় দেখাতো। আমরা বিষয়টি স্যারদের জানানোর পর এখন আমরা শিক্ষকদের তত্বাবধানে রয়েছি। আমরা থানায় মামলা করেছি। শুধু নাঈম সরকারই নয়, এমন অন্য যে সকল নরপশু আমাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে শিক্ষার্থীরদের যৌন হয়রানি ও ভয় ভীতি দেখাচ্ছে আমরা তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই। ছাত্রীরা সরকারের কাছে অনতি বিলম্বে এই প্রতিষ্ঠানে একটি ছাত্রী নিবাস নির্মানেরও দাবি জানান।

শরীয়তপুর পলিটেকনক্যাল ইনস্টিটিউট এর শিক্ষার্থী মো. শেখ রাসেল, আহাদ খান, রাজু আহমেদ ও শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বোনদের উপর যৌন হয়রানীর প্রতিবাদে ও লম্পট নাঈম সরকারের বিচারের দাবিতে আমরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি। ছাত্রদের সাথে কুরুচিপূর্ন যৌন আচরনের অভিযোগে এর আগে জানুয়ারী মাসে আরেকটি ছাত্রাবাসের মালিকের বিরুদ্ধেও আমরা আন্দোলন করে এর কোন বিচার পাইনি। ওই ম্যাস মালিকের হুমকির কারণে ইতিমধ্যে আমাদের ৫ জন বন্ধু জীবনের ভয়ে এই প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করে চলে গেছে। এখনো অনেক শিক্ষার্থীরা বাড়িতে চলে গেছে। আন্দোলন তুলে নিতে প্রশাসন আমাদের আহবান জানিয়েছে। সকল অপরাধিদের বিচারের আওতায় আনা হলে আমরা নিয়মিতভাবে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করবো।

শরীয়তপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার হুমায়ুন কবীর খান বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে দেশের ৬৪টি জেলা থেকেই ছাত্র-ছাত্রীরা এসে ভর্তি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানে কোন ছাত্রাবাস/ছাত্রীনিবাস না থাকায় আশের পাশের গ্রামগুলোতে অন্তত ৩০টি বাড়িতে শিক্ষার্থীরা ম্যাস করে থেকে লেখা পড়া করছে। তারা মাঝে মধ্যে সমাজের কিছু খারাপ লোকদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা সঠিকভাবে এদের নিরাপত্তা দিতে পারছিনা। জোর দিয়ে প্রশাসনের কাছে কোন কথা বলতে গেলে স্থানীয় প্রভাবশালীদের রোষানলে পরতে হয়। আমরা এই দূর্যোগের স্থায়ী সমাধান চাই এবং অনতিবিলম্বে ইনস্টিটিউটের জন্য অন্তত ২টি হোস্টেল নির্মাণ করতে সরকারে প্রতি বিশেষভাবে মিনতি জানাচ্ছি।

শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: এহসান শাহ বলেন, বেশ কয়েকদিন থেকেই শরীয়তপুর পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট এর শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা শুনে আসছিলাম। বিচ্ছৃংখলা এড়াতে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে বিষয়টি তাদের নজরে রেখেছেন। আমরা ছাত্রদের আহবান জানিয়েছি তাদের আন্দোলন তুলে নিতে। অভিযুক্ত ব্যাক্তিকে পুলিশ খুঁজছে। তাকে আটক করতে পারলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে।

(কেএনআই/এএস/মে ০৪, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test