E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জেলা প্রশাসকের সহায়তায় আশার আলো দেখলেন আসমা

২০১৬ মে ১৭ ১৯:৫০:১৫
জেলা প্রশাসকের সহায়তায় আশার আলো দেখলেন আসমা

অভিজিত রাহুল বেপারী : পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া থানার গৌরীপুর ইউনিয়নের আসমা আক্তার(৪২)। দরিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত অসহায় এসএসসি পাশ আসমা কোন কাজ না পেয়ে ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এক সময় বিয়ে হয়, ৩ সন্তানের জননী হন তিনি। সংসারের খরচ নির্বাহ করতে স্বামী সুন্দরবনে গোলপাতা সংগ্রহের কাজ করত এবং নিজে পিরোজপুর মঠবাড়িয়া সড়কের চরখালী ফেরীতে ভিক্ষা করতেন।

দরিদ্রতা তাকে দমাতে পারেনি , বড় দুই ছেলেকে ভর্তি করেন স্থানীয় এতিমখানায় সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসায়, নিজে সন্ধ্যার পরে ছেলেদেরকে নিয়ে পড়াতে বসতেন। নিজের ভিক্ষাবৃত্তির টাকা জমিয়ে ছেলেদের পড়াশোনার খরচ জোগাতেন। এর মধ্যে জন্ম নেয় ছোট ছেলে। বড় ছেলের এসএসসি পরীক্ষার আগে স্বামী সুন্দরবনে গোলপাতা কাটতে গিয়ে বাঘের কামড়ে মারা যায়। অসহায় আসমার জীবনে আবারো নেমে আসে ভয়ংকর অমানিশার অন্ধকার । দৃঢ় প্রতিজ্ঞ আসমা তবুও থেমে থাকেন নি, সংকল্প চালিয়ে যান ছেলেদের পড়াশোনা শিখিয়ে প্রতিষ্ঠিত করার।

খেয়ে না খেয়ে ভিক্ষার টাকা জমিয়ে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগান তিনি। এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় বড় ছেলে রাজিব (২০) কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়। অনার্স পড়ার ইচ্ছা পোষণ করে বড় ছেলে। পিরোজপুরের তৎকালীন এক পুলিশ কর্মকর্তার সহায়তায় পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজে অনার্স ভর্তি হয়। এদিকে মেঝ ছেলে রাকিব(১৮) ভান্ডারিয়া থেকে ভাল ফলাফল করার পর বাড়িতে না জানিয়ে বন্ধুদের সহায়তায় ঢাকার লালমাটিয়া স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি হয় এবং এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছে। এর মাঝে একবার রাকিব কলেজের টাকা পরিশোধ না করতে পারায় পালিয়ে আসে। পরবর্তীতে রাকিবের কলেজের অভ্যন্তরীন পরীক্ষার রেজাল্ট এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পারফরমেন্স এর কারনে তার বকেয়া ফিস মওকুফ করে দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ।

আবার বিপদ, মেঝ ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী রাকিবের বাম চোখে টিউমার ধরা পরে। অসহায় মা ছেলের চিকিৎসার কোন উপায় না পেয়ে দ্বারে দ্বারে হাত পাতেন। এসময় তাকে এক ভদ্রলোক পরামর্শ দেন পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মো : খায়রুল আলম সেখ এর শরণাপন্ন হওয়ার ।

জেলা প্রশাসক মো : খায়রুল আলম সেখ সব কিছু শুনে তৎক্ষণাৎ তাকে অর্থ সাহায্য দেন এবং তার ফেসবুক আইডির মাধ্যমে সমাজের বিত্তবান মানুষদের সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আহ্বান জানান। তার ফেসবুক আইডির এবং উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ অনলাইনে খবর প্রকাশিত হলে মানবজমিনের নেছারাবাদ প্রতিনিধি মো : আসাদুজ্জামান, রেড ক্রিসেন্ট বরিশাল এর নুর ইসলাম, রুপসা ইউপি সচিব এমরান হোসেন সাহায্যের হাত বাড়ান।

মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসমাকে সহযোগিতার নগদ ৮০০০ টাকা তুলে দেন জেলা প্রশাসক মো : খায়রুল আলম সেখ।এসময় অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর মো : রাশেদুজ্জামান ।

অর্থ সাহায্য পেয়ে আসমা বলেন , আমার জীবনে এর আগে এভাবে কেউ কখোনো সাহায্য করেন নি। আমি সবার সহযোগীতা পেলে আমার সন্তানকে সুস্থ্য করে তুলতে পারব । তিনি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

জেলা প্রশাসক মো : খায়রুল আলম সেখ বলেন, অনেকেই আসমার সংগ্রামের কথা শুনে তার পাশে দাড়ানোর ইচ্ছা পোষণ করেছেন। তার পরিচিত এক ডাক্তার রাকিবের চোখের চিকিৎসা এবং পড়াশোনার ব্যয় বহন করার কথা জানিয়েছেন। তিনি আশা করেন এভাবে সকলের সহযোগিতায় আসমার মত সংগ্রামী মানুষেরা জীবনে নতুন করে আশার আলো দেখতে পাবে।

(এআরবি/অ/মে ১৭, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test