E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শাহজাদপুরে সিমেন্ট কারখানার ধুলায় এলাকাবাসীর জীবন দুর্বিষহ

২০১৬ মে ২১ ১৬:১২:২৫
শাহজাদপুরে সিমেন্ট কারখানার ধুলায় এলাকাবাসীর জীবন দুর্বিষহ

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ি বড়াল নদের তীরে অবস্থিত দেশবন্ধু সিমেন্ট কারখানায় ডাষ্ট কালেক্টর না থাকায় কারখানা থেকে নির্গত সিমেন্টের ধূলা পুরো এলাকা ছড়িয়ে পড়ছে। এতে করে আসে পাশের বসতি গাছপালা ও বিভিন্ন ফসলের উপর সিমেণ্টের ধূলিকণা পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র। শ্বাস কষ্টসহ নানা রোগে ভুগছে এলাকার মানুষ। আমগাছসহ সব ধরণের বৃক্ষে দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। স্থানীয়দের অভিযোগ সিমেন্টের ধূলিকণায় মাঠের ফসল, গাছের ফল উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে।

কারখানার আশপাশের বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে সিমেন্ট কারখানার ধূলিকণা ছড়িয়ে পড়ায় এ কারখানার পাশে পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছেলে মেয়েদের নাকে কাপড় দিয়ে চলতে হচ্ছে। পাশাপাশি কাপড় ও খাবারের উপর ধূলিকণা পড়ায় জনগণের বসবাস করা অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এলাকার লোকজন শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

এলাকাবাসীরা অভিযোগ করে বলেছে, দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকায় কর্তৃপক্ষর কাছে অভিযোগ দেয়া হলেও তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহন করছেনা। এলাকাবাসীদের লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, উপজেলার বাঘাবাড়ি পূর্ব পাড়া গ্রামের পাশে এই সিমেন্ট কারখানাটি স্থাপিত হয়েছে। শুরুতে কারখানাটি ভালভাবে পরিচালিত হয়। সে সময় কারখানার ডাষ্ট বাইরে আসতোনা। কয়েক দফা মালিকানা পরিবর্তন হওয়ার পর বর্তমানে দেশবন্ধু কোম্পানি এই সিমেন্ট কারখানাটির দায়িত্ব গ্রহন করে।

বর্তমানে এই সিমেন্ট কারখানায় ডাষ্ট কালেক্টর না থাকায় নির্গমন ডাষ্টের কারণে বাঘাবাড়ি পূর্বপাড়া ও চয়রা এ দুটি গ্রামের হাজার হাজার লোকজন চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। তারা আরো জানান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উপর দিয়ে কারখানার উৎপাদিত সিমেন্ট বাজারযাত করার জন্য ১০ চাকার ভারি ট্রাক চলাচল করায় বাঘাবাড়ি বড়াল সেতুর দক্ষিণ থেকে কারখানা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। বাঁধেটি দুর্বল হয়েপড়ায় এলাকাবাসী আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমের পূর্বে বাঁধটি মেরামত ও ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ না করা হলে বাঁধ এলাকার মানুষদের চরম ক্ষতি সাধন হবে।

বাঘাবাড়ি পূর্ব পাড়া গ্রামের শাহিন আলম, ইয়ার মোল্লা, আরজ মন্ডল, রশিদ মন্ডল জানান, কারখানা থেকে নির্গত কিলিংকারের ডাষ্ট বাতাসের সঙ্গে মিশে বাড়িঘরের চালের উপর, ধান ও শাকশব্জির উপর পড়ছে। ডাষ্টের কারনে কাপড় বাইরে শুকানোর জন্য বাইরে নেড়ে দিতে পারিনা। সিমেন্টের ধূলা পড়ে সব কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। পুকুরের পানি দুষিত হয়ে পড়ছে। গবাদী পশু বাইরে থাকায় তাদের খাওয়া পানির উপর পড়ছে। আমাদের রান্না করা খাবারের উপর পড়ে খাবার নষ্ট হচ্ছে। ধান গাছের উপর পড়ায় ধান মরে যাচ্ছে। বেগুন গাছের উপর পড়ায় বেগুন ধরছেনা। দিন রাত ২৪ ঘন্টাই ঘরবাড়ির জানালা দরজা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এই কারখানার মালিকের লোকজন স্থানীয় কতিপয় সুবিধাভোগী প্রভাবশালী লোকজনদের ম্যানেজ করায় সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করলেও কোন লাভ হচ্ছেনা। যে কারনে আমরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।

বাঘাবাড়ি বাস স্ট্যান্ড এলাকার আব্দুল মজিদ ও হযরত আলী জানান, মাঝে মধ্যে এমন ভাবে ডাষ্ট নির্গত হয় যে পুরো এলাকা দিনের বেলায় কুয়াশার মত হয়ে পড়ে। সূর্য্যের আলো পর্যন্ত দেখা যায়না। এই ডাষ্টের কারণে এলাকার সব শ্রেণীর মানষের শ্বাসকষ্ট সহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পুরো এলাকার পরিবেশ দুষিত হয়ে পড়ছে। এ ব্যাপারে কারখানার জেনারেল ম্যানেজার এ কে এম কামরুজ্জামান জানান, কারখানায় ৫টি ডাষ্ট কালেক্টর রয়েছে। এগুলো পুরাতন হওয়ায় ডাষ্ট কালেক্টরের কার্যকারিতা কমে গেছে। যন্ত্রাংশ গুলো পরিষ্কার করার উদ্দোগ নেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, কারখানাটি স্থাপনে এলাকার শত শত লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। যেটুকু ক্ষতি হচ্ছে তারচেয়ে জনসাধারনের বেশী লাভ হচ্ছে। স্থানীয় কিছু লোকজন ঈর্ষান্বিত হয়ে নানা অপপ্রচার চালচ্ছে। ডাষ্ট কালেক্টর আছে, প্রয়োজনে আরও স্থাপন করা হবে।

এ ব্যাপারে কথা হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের সিনিয়র ক্যামিষ্ট কামারুজ্জামানের সাথে। তিনি জানান, পরিবেশ দূষণের দিক থেকে বাঘাবাড়িতে অবস্থিত দেশ বন্ধু সিমেন্ট কারখানাটি সর্বাগ্রে। কারখানায় কর্মরত কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে সর্তক করে দেওয়া হলেও তারা কোন কথা কানে তুলছেন না।

এদিকে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আহমেদ জানান, এলাকাবাসীদের এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

(এআরপি/এএস/মে ২১, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test