E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নড়াইলে জমিদার বাড়ির সরকারি সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ

২০১৬ মে ২৩ ১১:৫৮:২৭
নড়াইলে জমিদার বাড়ির সরকারি সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ

নড়াইল প্রতিনিধি :ভূমিদস্যু কর্তৃক জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নড়াইলের হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ির সরকারি সম্পত্তি গ্রাস প্রচেষ্টার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

রবিবার (২২ মে ) দুপুর ১২টায় আদালত সড়কে নড়াইল সদর উপজেলার হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ির ১১.৮৮ একর খাস সম্পত্তি ভুমিদস্যু কর্তৃক অসত্য তথ্যের বিনিময়ে গ্রাস প্রচেষ্টার প্রতিবাদ, সরকারি সম্পত্তি রক্ষার জন্য ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ও ভুমিদস্যুদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন, হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ির জমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট এসএ মতিন, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা চেম্বর অব কমার্সের সভাপতি মো: হাসানুজ্জামান, জেলা জাতীয় পার্টি’র সভাপতি শরীফ মনীর হোসেন, মানবাধিকার কর্মী কাজী হাফিজুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা কাজী ইমাইল হোসেন লিটন, জেলা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলী হাসান, যুগ্ম সম্পাদক অশোক কুন্ডু, অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট সরদার মাহাবুবুর রহমান, জেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি অশোক কুন্ডু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহবায়ক মলয় কুমার কুন্ডু, রাবেয়া ইউসুফ, রওশন আরা লিলি, অ্যাডভোকেট শাহীনউল্লাহ মোহন, সিনিয়র সাংবাদিক সাথী তালুকদার, জেলা যুবমৈত্রী’র সম্পাদক পারভেজ আলম বাচ্চু, সৈয়দ শরিফুল ইসলাম নান্থু, জেলা ক্লিনিক সমিতির সভাপতি তারিকুল ইসলাম প্রমুখ।

মানববন্ধন শেষে হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ির জমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ মিছিলসহকারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় যেয়ে নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোঃ হেলাল মাহমুদ শরীফের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী নিকট স্মারকলিপি প্রদান করে।

উল্লেখ্য, প্রায় ৬০ বছরের পূর্বে হাটবাড়িয়ার জমিদার আশুতোষ রায় এবং অজিত রায় পিতা- জিতেন্দ্রনাথ রায় নড়াইল পৌরসভার ৫৬নং ব্রাক্ষ্মণডাঙ্গা মৌজার সেঃ মেঃ দাগে ৩.২৯ একর, ২৫ দাগে ০.৫৯ একর, ২৬ দাগে ৩.৭৭ একর, ২৭ দাগে ১৫.৬৪ একর, ৪৬ দাগে .০৪৭ একরসহ মোট ২৩.৭৬ একর জমির পূর্ববর্তী মালিক ছিলেন। নড়াইল হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ির ঘটনার প্রকৃত অবস্থা এই যে, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর জমিদার আশুতোষ রায় এবং অজিত রায় উভয় মালিকগণ কাহারো নিকট জমি রেজিস্ট্রি দলিলমুলে হস্তান্তর না করেই সপরিবারে তৎকালিন পূর্বপাকিস্তান ত্যাগ করে ভারতে চলে যান এবং সেখানে স্থায়ী নাগরিক প্রাপ্ত হয়ে বসবাস করেন। জমিদারদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি অরক্ষিত থাকায় সরকার দখল গ্রহণ ও নিয়ন্ত্রণ করে। ১৯৫০ সনে জমিদারী উচ্ছেদ ও প্রজাস্বত্ব আইন জারীর পর প্রজাস্বত্ব আইনের বিশেষ বিধান অনুযায়ি অত্র সম্পত্তি ঘড়হ-ৎবঃধরহধনষব কযধংয খধহফ হিসেবে পরিগণিত হওয়ায় সম্পত্তিতে সরকারের স্বত্ব ও দখল অর্জিত হয়। এছাড়াও এস,এ জরিপে সরকারের ১নং খতিয়ানের খাস জমি হিসেবে রেকর্ড না হয়ে ভুলবশতঃ ২৩.৭৬ একর জমি সাবেক মালিকদ্বয়ের নামে এস,এ ৫৬ খতিয়ানে রেকর্ডভুক্ত হয় এবং বর্তমান আর,এস রেকর্ডে সরকারের ১নং খাস খতিয়ানভূক্ত রয়েছে।

কিন্তু হঠাৎ জনৈক মোস্তাব মন্ডল তাঁর ভারতের ২৪পরগনা জেলার বনগাঁ থানাধীন দক্ষিন সুদ্দরপুর মৌজার ১১.১০ একর জমির সাথে চড়বিৎ ড়ভ অঃঃড়ৎহবু মূলে ১৯৭৫ সালে বিনিময় করেন এবং পরবর্তীতে যশোর জেলার জেলা প্রশাসক এর দপ্তরে ২১/০৩/১৯৭৫ সালে বর্ণিত বিনিময় ২৩/৭৪-৭৫ নং মিস মামলার বৈধতা করে বর্ণিত ১১.৮৮ একর ভুমির স্বত্ত্বাধিকারী হয়েছেন বলে দাবি করেন যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, মনগড়া, ভিত্তিহীন এবং সাজানো ঘটনা বলে আন্দোলনকারী মনে করেন।

স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়েছে, নড়াইলের বিজ্ঞ যুগ্ম দায়রা জজ জনাব এ, কে, এম এনামুল করিম (১ম আদালত) মহোদয় গত ২৩/০১/২০১৪ তারিখ নালিশী ১১.৮৮ একর সম্পত্তি বাদি মোস্তব মন্ডল পক্ষে রায় প্রদান করে বিবাদী সরকার পক্ষকে পরবর্তী ৩০দিনের মধ্যে আপোষে বুঝে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। ইতিমধ্যে সরকার পক্ষ নড়াইলের জেলা প্রশাসক নড়াইলের যুগ্ম জেলা জজ আদালতের ৩৯/০৫ নং আপীল মামলার রায়ের বিরুদ্ধে সিভিল রিভিশন দায়েরও করেন। এদিকে মোস্তব মন্ডলের সরেজমিনে দখল, জরিপ, রেকর্ড, ভুমিকর পরিশোধের দাখিলা না থাকার বিষয়টি বিজ্ঞ আদালত রায় প্রদানকালে আমলে না এনে এবং বিনিময় দলিলের বৈধতা সম্পর্কে পূর্বের আদালত কর্তৃক দেওয়া রায়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ না করে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে মোস্তব মন্ডলের পক্ষ দ্বারা অন্যায়ভাবে প্রভাবিত ও প্ররোচিত হয়ে পক্ষপাতমূলক রায় প্রদান করেছেন তা ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। মোস্তাব মন্ডল ইতিপূর্বে এ মামলা বিভিন্ন আদালতে প্রমাণে ব্যর্থ হন বিধায় বিজ্ঞ বিচারক সহকারী জজ জনাব মোঃ আব্দুস সালাম খান তাঁর রায়ে আলোচনা, পর্যবেক্ষণ ও মতামতের অংশে বিনিময়কারী মোস্তাব মন্ডলের তথাকথিত এবং দাবীকৃত বিনিময় দলিল জাল-জালিয়াতির কথা বলেছেন। এ মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট অচিন কুমার চক্রবর্তী (জিপি)।

আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি আশু দৃষ্টি আকর্ষন পূর্বক ভূমিদস্যু কর্তৃক সম্পত্তি গ্রাস প্রচেষ্টা থেকে মুক্ত করা এবং ভুমিদস্যুদের শাস্তির দাবি জানান।
এ বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিক, মানবাধিকার সংগঠনের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।



(টিএআর/এস/মে২৩,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test