E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সরকারি ঘোষণার পর-ধান ক্রয় শুরু না হওয়াতে ভরসা পাচ্ছে না কৃষকেরা

২০১৬ মে ২৩ ১২:৩৬:২৭
সরকারি ঘোষণার পর-ধান ক্রয় শুরু না হওয়াতে ভরসা পাচ্ছে না কৃষকেরা

দুর্গাপুর (নেত্রকোনা)প্রতিনিধি :৫ মে থেকে কৃষকের কাছ থেকে সরকার সরাসরি ধান কেনার ঘোষণায় নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার কৃষকেরা কোন ভরসা পাচ্ছে না ।

কৃষকরা জানায়, প্রতি বছরই ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সরকার এমন ঘোষণা দেয়। পরে ধান-চাউল সবই কেনে চাউলকল মালিকদের কাছ থেকে। ফলে কৃষকরা সরকারের কাছ থেকে কোন সুফল পাচ্ছে না। অনেক কৃষক ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য ধান কেটে জমিতেই মাড়াই করে ফড়িয়াদের কাছে ধান বিক্রি করে দিচ্ছে।

গত ২৪ এপ্রিল সচিবালয়ে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকের পর খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ৫ মে থেকে ৩১ আগস্ট সরকারিভাবে ধান ও চাল সংগ্রহ করা হবে। এবার মোট ১৩ লাখ মেট্রিক টন ধান ও চাল কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৭ লাখ মেট্রিক টন হবে ধান, বাকিটা চাল।

নেত্রকোণা দুর্গাপুর উপজেলার বিলকাকরাকান্দা গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিবছরই সরকার ঘোষণা দেয় কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনবে। কিন্তু বাস্তবে খাদ্য বিভাগ এক-দুই দিন লোক দেখানো কিছু ধান কেনার পর আর কেনে না। এবারও যে এর ব্যতিক্রম হবে এমন ভরসা কোন কৃষকই বলতে পারেন না। একই ধরনের মন্তব্য করেন, খুজিউড়া গ্রামের কৃষক শাহজালাল মিয়া ।

উপজেলার ঘাগড়া দশাল গ্রামের কৃষক হক মিয়া বলেন, সরকার ২৩টাকা কেজি দরে ধান কিনলে বাজার কিছুটা হয়ত বাড়বে। তাতে কৃষকের কি লাভ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা ধান কিনবে কৃষকের কাছ থেকে। এই ধান ব্যবসায়ীরা বেচবে মিলারদের কাছে। মিলারেরা বেচবে সরকারের কাছে। এই যে হাত বদল হতে হতে সরকারের বেধে দেয়া ধানের দাম কৃষকের কাছে পৌছার কোন সম্ভাবনাই নেই। এখনতো ৪ শত ৫০টাকা থেকে ৪ শত ৮০ টাকা মণ দরে ধান বেচে কৃষকের লোকসান হচ্ছে। আবাদ খরচই উঠছে না। তবে সরকারের ঘোষিত দাম পেলে কৃষকের লাভ থাকবে বলেন কৃষক দশাল গ্রামের মঞ্জুল মিয়া ।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের চক লেঙ্গুরা গ্রামের কৃষক মোঃ ওয়াহিদ মিয়া অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে কম দামে ফড়িয়াদের মাধ্যমে ধান কিনে মিলমালিকেরা গুদামজাত শুরু করে দিয়েছেন। তারা কমদামে কেনা এই ধানই পরে সরকারের কাছে বেচবে। তাই সরকার ধান কেনা শুরু করলেও ধানের বাজার তেমন বাড়বে না বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলার বিরিশিরি খাদ্যগুদাম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেবপ্রদ বিশ্বাস জানান, চলতি অর্থ বছরে দুর্গাপুর উপজেলা থেকে ২ হাজার ৪শত ৮৩ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করার জন্য বরাদ্দ পেয়েছি। তবে এখনও কেনা শুরু হয়নি । এ বিষয়ে অচিরেই উপজেলা পর্যায়ে সভা হবে তারপর আমরা ধান কেনা শুরু করর।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা মোঃ নাজমূল ইসলাম জানান, এ উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৭ শত ৫ হেক্টর জমিতে ৬৮ হাজার ৩২২ মেট্রিক টন চাউল হবে। এ পর্যন্ত ৯৫% ধান কর্তন হয়েছে সেই অনুযায়ী ১৭ হাজার ৬শত হেক্টর জমি থেকে অর্জিত হয়েছে ৬২ হাজার মেট্রিক টন চাউল। ৫% কর্তন হলে কোন ক্ষয় ক্ষতি ছাড়াই দারাবে প্রায় ৬৭ হাজার ১৬ মেট্রিক টন চাউল। প্রতি ১ কাটা (.০৮শতাংশ) জমিতে কৃষকের গড় খরচ দারায় ১৬ শত টাকা থেকে ১৭ শত টাকা, পানি সেচ ববাদ খরচ হয় ৪ শত থেকে ৫ শত টাকা। এর বিপরীতে ধান পায় কৃষক গড়ে কাটা প্রতি ৫মন । মূলত সরকার ধান ক্রয় না করলে কৃষকদের কোন লাভ নেই।

কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ওমর ফারুক বলেন কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করার জন্য প্রকৃত কৃষকদের তালিকা তৈরি করার কাজ চলছে। তালিকা অনুযায়ী ধান ক্রয় করা হবে। তবে ধান ক্রয় করার কার্যক্রম আগে শুরু হলে এ এলাকার কৃষকরা আর ও উপকৃত হত।



(এনএস/এস/মে২৩,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test