E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাস্তার দাবিতে রাস্তায় নামলো দুর্গাপুরবাসী

২০১৬ জুন ০৬ ১৬:৫৭:২১
রাস্তার দাবিতে রাস্তায় নামলো দুর্গাপুরবাসী

চারণ গোপাল চক্রবর্তী : প্রধান সড়কের দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থার  আজও পরিত্রাণ পায়নি দুর্গাপুরবাসী। যাতায়াতের অনুপযোগি রাস্তার দরুণ প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছেন পথ চলায়। যোগাযোগের প্রধান সড়কের করুণ অবস্থার উত্তরণের স্বার্থে অবশেষে রাস্তায় নামলো তাঁরা। রাস্তায় মানববন্ধন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদমুখর এলাকাবাসী প্রশাসনের মাধ্যমে প্রাধানমন্ত্রী বরাবর পেশ করেছেন স্মারকলিপি।

প্রধান সড়কের বিকল্প হিসাবে দুর্গাপুর-কলমাকান্দা-নেত্রকোনা-শ্যামগঞ্জ সড়ক ব্যবহার করে ময়মনসিংহ ও ঢাকা যাতায়াত করতে হচ্ছে তাদের।তাতেও ভোগান্তির শেষ নেই।কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোনা সড়কটি সরু ও অসংখ্য পুরাতন বেইলি ব্রিজ সম্বলিত হওয়ায় প্রায়শই যাত্রীরা পোহাচ্ছে যন্ত্রণা।

দুর্গাপুর থেকে শ্যামগঞ্জ সড়কের দুরত্ব ৩৭ কি,মি যা সাধারণত ১ ঘণ্টায় পাড়ি দেওয়ার কথা, কিন্তু সেই পথ পাড়ি দিতে যাত্রীদের সময় লাগছে ৪/৫ ঘণ্টা। ৩৭ কি,মি এর স্থলে ৭২ কি,মি পথ মাড়াতে হচ্ছে ঢাকাগামী যাত্রীদের। দীর্ঘ সময় ধরে চলমান ভোগান্তি থেকে পরিত্রাণ পায়নি এলাকাবাসী, তাই জুন ৫ তারিখে রাস্তায় নেমে এলো স্থানীয় বোদ্ধা-শিক্ষক-শ্রমিক-কৃষক-ছাত্রসহ স্বর্বস্তরের জনগণ, দ্রুত রাস্তা সংস্কার সহ ৫ টি মূল দাবী এবং জরুরি ভিত্তিতে দুর্ভোগ থেকে উওরণের জন্য ৫টি, মোট ১০ টি দাবি নিয়ে।

স্থানীয় যাত্রীসেবার নিমিত্তে চলাচলকারি বাস গুলো বর্তমানে এই সড়কে চলাচল করে না। দুর্গাপুরের বিরিশিরি থেকে বাস স্টপিজ স্থানান্তর করা হয়েছে পূর্বধলার জারিয়া তে । বর্তমানে এই আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খনিজ সম্পদ নিতে আসা ৫০০/৬০০ ট্রাক চলাচল করে। পর্যটকবাহী প্রাইভেটকার সহ ছোট-বড় অগনিত গাড়ি,সিএনজি ও ব্যাক্তিগত/ভাড়ায় চালিত মোটসাইকেল গুলো যাত্রীদের কাছ থেকে রাস্তার করুণ অবস্থার কথা বলে অধিক ভাড়া হাঁকিয়ে বিকল্প কেট্টা-বাট্টা সড়ক দিয়ে যাত্রী পরিবহন করছে ।

অন্যদিকে রাজধানী ঢাকা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করত রাতের বাসগুলো চলাচল করছে কলমাকান্দা-ঠাকুরোকোনা-নেত্রকোনা-শ্যামগঞ্জ হয়ে ময়মনসিংহ-ঢাকা । অকারণে মূল্যবান সময় ব্যয় হচ্ছে যাত্রীদের এবং অর্থদন্ডি দিতে হচ্ছে বাস মালিকদের অতিরিক্ত ডিজেল এর জন্য।

পাহাড়ী কাঠ,কয়লা,বালি,নূড়িপাথর ও বাংলাদেশের একমাত্র খনিজ সম্পদ সাদা মাটি সহজলভ্যতার সুবাদে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে এই রাস্তা ধরে প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্য্য’র লীলাভূমি এবং নেত্রকোনা জেলার সর্বোচ্চ সরকারি রাজস্ব আয় অঞ্চল দুর্গাপুরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হয় সমগ্র দেশের।

নেত্রকোনা জেলা সড়ক ও জনপদের অধীনস্ত এই রাস্তা জেলা প্রকৌশলি অফিসের সূত্র মতে, সর্বশেষ ২০১১ সালে বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি, তৎকালীন স্পীকার মোঃ আব্দুল হামিদ ও এই এলাকার তৎকালীন সাংসদ রুহী একনেক বরাদ্দের ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ভারে শ্যামগঞ্জ থেকে দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত মোট ৩৭ কি,মি, রাস্তা, ছোট-বড় ১২ টি ব্রীজ সহ ধারাবাহিক উন্নয়ন প্রকল্প কাজের উদ্বোধন করেন, যা লক্ষ্যনীয়ভাবে দ্রুততার সঙ্গে রাস্তা নির্মাণে এবং অবহেলিত দুর্গাপুরবাসীর দুঃখ শুকনাকুড়ী সেতুসহ কৃষ্ণেরচর সেতু, পলাশকান্দি সেতুর মাধ্যমে দুঃখ যন্ত্রণার অবসান ঘটায় ও দুর্গাপুরবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

সরেজমিণে গিয়ে দেখা গেছে অতিরিক্ত মাল বোঝাই ট্রাক-লড়ীর দৌড়াত্মে এই আঞ্চলীক সড়কের বিভিন্নস্থানে ছোট-বড় গর্ত দৃশ্যমাণ ও পীচ ঢালা কালো রাজপথ শুধু নাম সর্বস্ব। প্রায়শই রাস্তার খানা-খন্দের জন্য চালিত যান বিকল হয়ে সৃষ্ট হয় দীর্ঘ যানজট। প্রতিদিন এই সড়কদিয়ে রাজধানী ঢাকা, জেলা নেত্রকোনা ও বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে বিভিন্ন পেশার প্রায় ১০ হাজার লোক নিয়মিত যাতায়াত করে, যাদের অধিকাংশই নিজেদের আজকাল ভূক্তভোগী হিসাবে উল্লেখ করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও আলাপচারিতায় প্রশাসন কে অকথ্য গালাগাল করছে,তবুও জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় প্রশাসনের টনক নড়ছে না।

এ ব্যাপারে নেত্রকোনা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলি মোঃ মাসুদ খানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এই ব্যাপারে অবগত আছেন, তিনি উচ্চ পর্যায়ে আবেদন করেছেন যা ইতিমধ্য আলোর মুখ দেখেছে। তিনি জানান, মন্ত্রণালয়ের গৃহীত সিদ্ধান্তে পর্যটন ও জেলার সর্বোচ্চ রাজস্ব আয় অঞ্চল হওয়ার সুবাদে এই সড়কটিকে আঞ্চলিক থেকে জাতীয় মহাসড়ক হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে । দুইশত চব্বিশ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আদলে দুই লেন এর রাস্তার কাজ অফিসিয়াল কার্জগুলো সমাপ্ত করে শীঘ্র শুরু করা হবে ।

জুন ৫ রবিবার সকাল ১১ ঘটিকায় সুজন সভাপতি অজয় সাহা,প্রেসক্লাব সভাপতি মোহন মিয়া,বৃহত্তর ময়মনসিংহ আইনজীবি ও সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি প্রবীর মজুমদার স্বাক্ষরিত প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিতে, যোগাযোগ ব্যাবস্থার বেহালদশার জন্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জনগণের নানান অসুবিধার কথা উল্লেখ করেন। প্রতিবাদমুখর জনতার কাতারে দাঁড়ান খোদ সাংসদ ছবি বিশ্বাস । এতে বিরুপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে জনসাধারণ। ছাত্রনেতা লেলিন বলেন, সাংসদ যখন মানববন্ধনে তাহলে আমরা দাবিগুলো কাকে জানাবো,কার মাধ্যমে জানাবো?

(সিজিসি/এএস/জুন ০৬, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test