E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সন্তানদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা পিতা!

২০১৬ জুন ১১ ১৬:৩১:০৮
সন্তানদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা পিতা!

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : আঃ জব্বার হাওলাদার। ৭১’র রণাঙ্গনের বীর সেনানী। ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য পদ ছেড়ে আঃ জব্বার হাওলাদার সশস্ত্র সন্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পাক হানাদারদের কবল থেকে দেশ মাতৃকাকে রক্ষার মুক্তির সংগ্রামে জয়ী হলেও জীবন যুদ্ধে তিনি আজ এক পরাজিত সৈনিক।

বাহিরের শত্রুদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে পারলেও সম্পত্তির লোভে নিজ ঘরে সৃষ্টি হওয়া শত্রু সন্তানদের হাত থেকে বাঁচতে তিনি আজ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। উপজেলার সদর ইউনিয়নের নরেরকাঠি গ্রামের অতিশপর বৃদ্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ জব্বার হাওলাদারের সম্পত্তির লোভে তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাড়িয়ে ফিরছেন। ফলে জীবন বাঁচাতে তিনি প্রায় এক মাস যাবৎ বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট পদ থেকে অবসর নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা আঃ জব্বার হাওলাদার জানান তিনি দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। বড় ছেলে সাইফুল ইসলামকে মুক্তিযোদ্ধার কোঠায় পুলিশে কনষ্টবল পদে তিনি চাকুরী দেন। পরে তিনি ছেলেকে চেষ্টা তদবির করে ঢাকা র‌্যাব-১ এ পোষ্টিং করান। অপর ছেলে শফিকুল ইসলাম গার্মেন্টে কর্মরত। দুই মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে পাত্রস্থ করেছেন। ২০১০ সালে তার স্ত্রী দূরারোগ্য রোগে ভূগে মৃত্যু বরণ করেন। বৃদ্ধ বয়সে বাবার সেবাযত্ন করতে ছেলে-মেয়েরাই বিউটি বেগম নামের বন্ধ্যা হতদরিদ্র এক স্বামী পরিত্যক্তা নারীর সঙ্গে তার বাবার বিয়ে দেন।

সাম্প্রতিক সময়ে ছেলে-মেয়েরা বাবার বিশাল সহায় সম্পত্তি সৎ মা লিখে নিয়ে যেতে পারেন এ আশংকায় তাদের নামে সব সম্পত্তি লিখে দিতে বাবার প্রতি চাপ প্রয়োগ করেন। তাতে তিনি রাজী না হওয়ায় তাকে মানসিক ও শারিরীকভাবে নির্যাতন শুরু করে তারা। গত ১২ মে আঃ জব্বার হাওলাদার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ও মানসিক এবং শারিরীক নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে ছেলে সাইফুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম এবং মেয়ে বেবীর বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা ১৩ মে গভীর রাতে বাবাকে বেদম মারধর করে ধারালো অস্ত্র গলায় ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক সৎমাকে তালাক দিতে বাধ্য করে। ওই রাতেই আঃ জব্বার হাওলাদারকে বড় ছেলের নির্দেশে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে ছোট ছেলে। পরের দিনই সব সম্পত্তি লিখে দেবে এ অঙ্গীকার করে প্রাণ বাঁচান তিনি।

১৪ মে ভোর রাতের দিকে বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে স্ত্রীকে নিয়ে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। ১৫ মে তিনি বানারীপাড়া সোনালী ব্যাংক থেকে দ্বিতীয় স্ত্রীর জমানো ৫২ হাজার টাকা তুলতে গেলে ছেলেদের ভাড়া করা নরেরকাঠি এলাকার জনৈক আলমের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা তাদেরকে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নেন। এসময় রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় চাখারের এক নারী সহ পথচারীরা বিষয়টি দেখতে পেয়ে তাদেরকে রক্ষা করেন। পরে আঃ জব্বার তার স্ত্রীকে নিয়ে বরিশাল নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থান নিলে সেখানেও পুলিশ ও ভাড়াটে সন্ত্রাসী পাঠিয়ে তাদেরকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়।

তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে নিয়ে অবৈধভাবে ঘর সংসার করছেন এ কুৎসা রটিয়ে তাকে নাজেহাল করা হলে তিনি অপবাদ থেকে বাঁচতে আবারও বিউটি বেগমকে দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন। জীবন সায়হেৃ দাঁড়ানো অসহায় আঃ জব্বার হাওলাদার নিজ বাড়ি ফিরে জীবনের শেষ দিনগুলো ধর্ম-কর্ম পালনের মধ্য দিয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাঁচতে চান। আর এ জন্য তিনি ছেলে-মেয়েদের হাত থেকে বাঁচতে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তা কামনা করেছেন।

(টিবি/এএস/জুন ১১, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test