E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জেল থেকে হত্যার নির্দেশ দিত জেএমবি নেতারা

২০১৬ জুন ১৫ ১০:০৬:৪০
জেল থেকে হত্যার নির্দেশ দিত জেএমবি নেতারা

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :কারাগার থেকেই হত্যার নির্দেশ দিত জেএমবি নেতারা। চট্টগ্রাম কারাগারে আটক জেএমবি’র স্থানীয় সেকেন্ড ইন কমান্ড ফুয়াদ ওরফে মো. বুলবুল তার সহযোগীদের মাধ্যমে সংগঠনের অন্যান্য নেতার কাছে নিয়মিত চিঠি পাঠাতো। এসব চিঠিতে জেএমবি’র শত্রুদের হত্যা করার আহ্বান জানানো হতো।

চট্টগ্রামে এসপির স্ত্রী মিতু হত্যায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন এমনই একটি চিরকুট। চিরকুটটি মিতু হত্যার এক মাস আগে গাইবান্ধা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। এতে জেএমবি’র চট্টগ্রাম শাখার সামরিক কমান্ডার জাবেদ ‘হত্যাকারী’ পুলিশ কর্মকর্তাদের খুন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন ফুয়াদ।

নগর ডিবি পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, চিরকুটটি চট্টগ্রাম কারাগারে আটক জেএমবি’র সেকেন্ড ইন কমান্ড ফুয়াদ ওরফে মো. বুলবুলের হাতের লেখা। এতে প্রাপকের নাম উল্লেখ নেই। চিরকুটটি হস্তগত হওয়ার পরও পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে না নেয়ায় নিরীহ গৃহবধূ মিতুকে এভাবে প্রাণ হারাতে হয়েছে বলেই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে।

এদিকে ফুয়াদ ওরফে বুলবুলকে বাকলিয়া থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন মঞ্জুর করেছে চট্টগ্রামের একটি আদালত। চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম হারুনুর রশিদ গতকাল মঙ্গলবার এ আদেশ দিয়েছেন।

সিএমপি’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী জানান, ২০১৫ সালের ২৫ মে বাকলিয়া থানার সত্সঙ্গ আশ্রম সংলগ্ন নদী থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় বুলবুলকে গ্রেফতার দেখিয়ে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পরিদর্শক শেখ মো. এহতেশামুল ইসলাম। শুনানি শেষে আদালত পাঁচদিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। চট্টগ্রাম মহানগর পিপি মো. ফখরুদ্দীন ইত্তেফাককে জানান, বাকলিয়া থানার হত্যা মামলায় ফুয়াদকে রিমান্ডে নেয়া হলেও মিতু হত্যাকাণ্ডে জেএমবির সম্পৃক্ততা বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর নগরীর খোয়াজনগর এলাকায় জেএমবির আস্তানায় হানা দিয়ে সংগঠনের সামরিক কমান্ডার জাবেদ, সেকেন্ড ইন কমান্ড ফুয়াদসহ পাঁচজনকে আটক করে নগর ডিবি পুলিশ। ডিবি’র তত্কালীন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বাবুল আক্তার ওই অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অভিযানের পরদিন সকালে খোয়াজনগর থেকে আটক পাঁচ জঙ্গির মধ্যে জাবেদকে নিয়ে অভিযানে যায় পুলিশ। চট্টগ্রামের হাটহাজারী কুয়াইশ এলাকায় পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে জাবেদ নিহত হয়। আটক বাকি চার জেএমবি সদস্য ফুয়াদ ওরফে মো. বুলবুল, সুজন ওরফে বাবু, মাহবুব ও সোহেল ওরফে কাজল বর্তমানে কারাগারে আছে। পুলিশ তাদের কাছ থেকে জঙ্গি কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

গতকাল ফুয়াদের রিমান্ড শুনানিকালে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আদালতকে অবহিত করা হয় যে, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির কারাবন্দী নেতারা কারাগার থেকেই তাদের সহযোগীদের কাছে ‘হত্যার নির্দেশনা’ দিতো। শুনানিতে আদালত পুলিশের পরিদর্শক শিল্পী রানী দেবনাথ বলেন, ফুয়াদ জেএমবির একজন ‘উচ্চপদস্থ সদস্য’। তিনি জেলখানা থেকে কারাগারের বাইরে থাকা জেএমবি সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ‘গুপ্তহত্যার তথ্য’ সরবরাহ করেছেন বলে ‘তথ্য’ পাওয়া গেছে। এমনকি জেলখানা থেকে বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের দিয়েছেন এমন তথ্যও পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নির্মলেন্দু সাংবাদিকদের বলেন, শোনা যাচ্ছে তিনি (ফুয়াদ) জেলখানা থেকে সহযোগীদের কাছে চিরকুট পাঠিয়েছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের পর তদন্তে বিস্তারিত জানা যাবে।

কী লেখা ছিল সেই চিরকুটে

উদ্ধার হওয়া চিরকুটের বিষয়টি সামনে আসার পর বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু আক্তার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জেএমবির সম্পৃক্ততা আছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে পিবিআই। এ ব্যাপারে বুলবুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন জানায় পিবিআই। পিবিআইয়ের একটি সূত্র জানায়, দুই পৃষ্ঠার চিরকুটের শেষ পৃষ্ঠায় দ্বিতীয় প্যারায় জাবেদকে হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিশোধে পুলিশ সদস্যদের হত্যার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিভিন্ন হাত ঘুরে চিরকুটটি পৌঁছেছে পিবিআই এবং একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে। গত ৫ জুন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম ওরফে মিতু আক্তারকে হত্যার আগে চিরকুটটি অবশ্য নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছেও পৌঁছেছিল। কিন্তু এ নিয়ে অনুসন্ধান শুরুর আগেই মিতু নিহত হন।

ফাঁস হওয়া চিরকুটে জাবেদের নাম জায়েদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তার সম্পর্কে চিরকুটে লেখা আছে- ভাই, জায়েদ ভাইকে তারা গলার সাথে গ্রেনেড বেঁধে দিয়ে ব্লাস্ট করে শহীদ করে দেয়। তার পিছনে বড় কারণ হল সে (জাবেদ) নিজেকে আইএস দাবি করেছিল। আমার থেকে কোনো দলের নাম পায়নি। কিন্তু আমাদের দোকানের ছেলেকে যখন ধরেছিল তখনই দলের নাম প্রকাশ পেয়েছে। দোকানের ওই ছেলেটা অনেক তথ্য দিয়েছিল যা আমরা জানতাম না।

চিরকুটে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ভাই, আপনাদের প্রতি আমার আকুল আবেদন, আপনারা ওই জালেম দোসরদের হত্যা করতে থাকুন এবং তাদের অফিসে গিয়ে হলেও হামলা করুন। তারা যদি ছুটিতে যায় তখন হলেও তাদের হত্যা করুন এবং প্রতিশোধ নিন। ভাই, আপনারা ভাইদের ভুল বুঝবেন না কারণ আমি দেখেছি তাদের নির্যাতন। তাই আল্লাহর উপর ভরসা রেখে কাজ করুন।


(ওএস/এস/জুন ১৫,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test