E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বরিশালে ‘লংকাবাংলা’ নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড!

২০১৬ জুন ১৭ ১৫:৪৪:২৬
বরিশালে ‘লংকাবাংলা’ নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড!

আঞ্চলিক প্রতিনিধি(বরিশাল):অবৈধ ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ‘লংকাবাংলা ফাইন্যান্স’ বরিশালবাসীর কাছে এখন একটি আতংকের নাম। ঋণ প্রদানের নামে এই প্রতিষ্ঠানটির গলাকাটা সুদে দিশেহারা হয়ে পড়েছে গ্রাহকেরা। সেবার দোহাই দিয়ে রাতারাতি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

অভিযোগ রয়েছে, ঋণের সুদের টাকা তুলতে এই প্রতিষ্ঠানের কতিপয় কর্ণধর গড়ে তুলেছেন নিজস্ব একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। কোন গ্রাহক এই প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ঋণ নিয়ে নির্ধারিত সময়ে সুদের টাকা না দিতে পারলে তাদের ওপর চলে আসে নির্যাতনের খড়গ। এছাড়াও সুদের টাকার জন্য বাসা-বাড়ি থেকে মালামাল নিয়ে আসারও একাধিক অভিযোগ রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহকদের কাছ থেকে ঋণের লভ্যাংশ সময় মতো তোলা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কোনো গ্রাহক যদি টাকা দিতে ব্যর্থ হয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে তা উত্তোলন করা হচ্ছে।

কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে প্রতিষ্ঠান কর্তারা এমন কথা বললেও কাজের সাথে তাদের কোন মিল পাওয়া যায়নি। সম্প্রতিসময়ে ঋণের সুদের টাকার জন্য একাধিক গ্রাহকের বাসায় হানা দিয়ে মালামাল লুটপাট করার অভিযোগ রয়েছে। তাদের খপ্পড়ে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন কয়েক’শ পরিবার। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মতে ঋণদানকারী কোন প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের মালামাল জব্দ করার ক্ষমতা রাখে না। যদি কোন গ্রাহক নির্ধারিত সময়ে টাকা পরিশোধে ব্যর্থ তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক সহযোগিতা নেয়ার এখতিয়ার রাখে। সেক্ষেত্রে ঋণদারকারী লংকাবাংলা প্রতিষ্ঠান যা করে বেড়াচ্ছে তা সম্পূর্ণ বেআইনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রবিবার বিকেলে বাজার রোড এলাকায় প্রভূপাদ মেডিকেল হলে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম হানা দিয়ে মালামাল লুটপাটের চেষ্টা চালায়। এসময় স্থানীয়রা সিরাজুলকে আটক করে কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা পুলিশকে ম্যানেজ করে সিরাজুলকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির এসএমই ঋণদানের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলামের নির্দেশনায়ই সিরাজুল ইসলাম সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে বাজার রোডের ওই ওষুধের দোকানে হানা দিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেডিসিন প্রতিষ্ঠানটির মালিক অমিত সুলিত সম্প্রতি ঋণে জর্জরিত হয়ে আত্মগোপন করেছেন। তার কাছে অপর একটি বেসরকারি এনজিও প্রতিনিধি বাপ্পীও বেশ কিছু টাকা পাবেন। যে কারণে অমিত সুলিতের নগরীর ক্লাবরোড এলাকার বাসায় হানা দিয়ে বাপ্পী ২০লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বাড়িতে হানা দিয়ে লংকাবাংলার কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম কোনো মুল্যবান মালামাল না পেয়ে দোকানে হানা দেন। এসময় সংবাদ সংগ্রহে মিডিয়াকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে ছবি তুলতে গেলে তাদের লাঞ্ছিত করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক পরিচালনায় রয়েছেন এম কেনান খান নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, গ্রাহকরা টাকা নিয়ে ফেরত না দিলে কি আর করার, বাধ্য হয়ে কঠিন সিদ্ধান্তে তো যেতেই হয়। এতে অভিযোগ আসলে কিছুই করার নেই। তবে এসএমই বিভাগের দায়িত্বে থাকা রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আমি এই প্রতিষ্ঠানের একজন অস্থায়ী কর্মচারী।

ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, গ্রাহকদের প্রথমদিকে নানা সুযোগ সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে ঋণ দিলেও পরবর্তীতে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে অধিক টাকা। তাদের টাকা পরিশোধ না করতে পেরে ইতোমধ্যে অনেকেই পথে বসেছেন। কারণ ঋণের সুদের পরিমান এতোই বেশি যে ব্যবসা করে তা পরিশোধে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয়। তাছাড়া নির্ধারিত সময়ে সেই ঋণের সুদ দিতে বিলম্ব হলে অপদস্থ হওয়ার পাশাপাশি বাসাবাড়ির মালামাল লুট করে নেয়া হচ্ছে।

ফলে এই হায়হায় প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়ছে গ্রাহকেরা। এমতাবস্থায় গ্রাহকেরা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

(টিবি/এস/জুন ১৭,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test