E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঈদে বাড়নো হচ্ছে লঞ্চভাড়া

২০১৬ জুন ২২ ১৫:৪৫:৫০
ঈদে বাড়নো হচ্ছে লঞ্চভাড়া

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : প্রতিবারের মতো এবারও সরকারি রেটের দোহাই দিয়ে ঈদে ঘরমুখো দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষকে জিম্মি করে লঞ্চভাড়া বৃদ্ধি করছেন মালিকরা। এরইমধ্যে ঢাকার সাথে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২৮টি রুটে চলাচলকারী লঞ্চগুলোর মালিকরা যাত্রী ভাড়া ৫৫ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঈদের সাতদিন আগে থেকে শুরু হবে বর্ধিত রেটের এ ভাড়া আদায়। চলবে ঈদের পর কমপক্ষে ১০দিন।

ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা দক্ষিণাঞ্চলের লাখো যাত্রীদের সুবিধার্থে সবচেয়ে বেশি লঞ্চ ও জাহাজ যুক্ত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটে এবারের ঈদে বেসরকারি কোম্পানির ১৭টি লঞ্চ সরাসরি ঢাকা-বরিশাল রুটে যাত্রী পরিবহন করবে। এরমধ্যে পারাবত কোম্পানির ৫টি, সুন্দরবন কোম্পানির ৩টি, সুরভী কোম্পানির ৩টি, কীর্তনখোলার ২টি, টিপুর ১টি, ফারহানের ১টি, কালাম খানের ১টি, দীপরাজের ১টি। দিবাসার্ভিসের গ্রীন লাইন ওয়াটার ওয়েজের ২টি জাহাজ এ রুটে যাত্রী পরিবহন করবে। এছাড়া চাঁদপুর-বরিশাল ভায়া ফতুল্লা হয়ে সুন্দরবন, ফারহান, পূবালীসহ ৪টি লঞ্চ চলাচল করবে। পাশাপাশি সরকারী জাহাজ সার্ভিসে বিআইডব্লি-উটিসি’র পিএস মাহসুদ, অষ্ট্রিজ, লেপচা, নামের ৩টি রকেট ও নতুন সংযুক্ত এমভি মধুমতি, এমভি বাঙালীসহ মোট ৫টি জাহাজ যাত্রীপরিবহন করবে।

অপরদিকে এবার ঢাকা-বরিশাল সড়কপথে ঈগল, হানিফ, সাকুরা, গোল্ডেনলাইন, সোনারতরী, মেঘনাসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবহন যাত্রীসেবা প্রদান করবে। পাশাপাশি মাওয়া-বরিশাল রুটে রয়েছে বিআরটিসি এসি বাস সার্ভিস। তবে নতুন করে যাত্রীসেবায় ঢাকা-বরিশাল সড়কপথে ডিপজল পরিবহনের এসি বাস সার্ভিস চালু হওয়ার কথা রয়েছে। আকাশপথে প্রথমবারের মতো নভো এয়ার, ইউএস বাংলা ও বাংলাদেশ বিমান একত্রে নিয়মানুযায়ী তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করবেন। প্রয়োজনে ইউএস বাংলা তার ফ্লাইট বাড়াতে পারে। একসাথে এতো সার্ভিসের ফলে এবারে যাত্রীর চাঁপ অনেকাংশে কম হওয়ার আশংকা করছেন লঞ্চ মালিকরা।

আগামী ২৯ জুন থেকে স্পেশাল সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছে। তবে সিংহভাগ যাত্রী বেসরকারি কোম্পানির লঞ্চে যাতায়াত করলেও বিআইডব্লিউটিএ এখনো লঞ্চের স্পেশাল সার্ভিসের সময় নির্ধারণ করতে পারেনি।

সূত্র মতে, ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চগুলোতে ডেকে মাথাপিছু ভাড়া নেয়া হয় ২’শ টাকা। সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ৯’শ আর ডাবল ১ হাজার ৭’শ টাকা। এর বাইরে অধিকাংশ লঞ্চে সোফা ও ভিআইপি কেবিনের ব্যবস্থা রয়েছে। সারাবছর এ রেট থাকলেও বছরের দুই ঈদ আসলেই পাল্টে যায় পুরনো সব হিসেব-নিকেশ। তখন সরকারি রেটের কথা উলে¬খ করে ভাড়া বাড়িয়ে দেন লঞ্চ মালিকরা। অবশ্য এ রুটের লঞ্চে ডেকের যাত্রীদের জন্য সরকার নির্ধারিত ভাড়া ২৫৮ টাকা। সেই হিসেবে সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ১ হাজার ৩২ এবং ডাবল কেবিনের ভাড়া ২ হাজার ৬৪ টাকা। বছরজুড়ে যাত্রীদের কাছ থেকে এ হারে ভাড়া নেয়া হয় না। শুধু দুই ঈদের সময়ই চলে সরকারি রেটে ভাড়া আদায়। এ বছরও সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিকরা।

ঈদের সময় ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন সংস্থার কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু সরকারি রেটের কথা উল্লে¬খ করে তিনি বলেন, এছাড়া কোনো উপায় নেই। সারাবছর কম ভাড়ায় যাত্রী নিলেও ঈদের সময় বাড়তি খরচ থাকায় ভাড়া বৃদ্ধি করতেই হয়। ঈদ উপলক্ষে নৌপথে যাত্রী পরিবহন প্রসঙ্গে রবিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় আন্তঃমন্ত্রণালায়ের বৈঠক। এতে বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপদস্থরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রী ও লঞ্চ মালিক সমিতির নেতারা। বৈঠকে ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত হলেও যাত্রী ভাড়া নিয়ে প্রতিবছর চলা এ জটিলতা প্রসঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি।

এ বিষয়ে বরিশাল নাগরিক সমাজের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, এসব বৈঠকে সরকারি কর্মকর্তা ও লঞ্চ মালিকরা উপস্থিত থাকলেও যাদের জন্য আয়োজন, সেই জনসাধারণের কোনো প্রতিনিধি রাখা হয় না। ফলে জনগণ কি চায়, সেটা আর বলা হয় না। বরিশালের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাজল ঘোষ বলেন, সবসময় যে হারে ভাড়া নেয়া হয় ঈদের সময়ও সেই হারেই লঞ্চ ভাড়া নেয়া উচিত। সরকারি রেটের দোহাই যদি দিতেই হয় তাহলে সারাবছর কেন কম নেয়া হয়? বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি বরিশাল অঞ্চলিক শাখার আহবায়ক অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, এটি আসলে লঞ্চমালিকদের এক ধরনের হঠকারিতা। সারাবছর লঞ্চভাড়া কম নেয়ার বিষয়ে তারা দম্ভ করে যাত্রীসেবার কথা বললেও ঈদের সময় মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী থাকা সত্বেও যাত্রীদের জিম্মি করে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে সুরভী লঞ্চের মালিক রেজিন উল কবির বলেন, ঈদে যেমন প্রত্যেক মানুষের অনেক বাড়তি খরচ থাকে, তেমনি আমাদেরও পোহাতে হয় নানা ঝামেলা। কর্মচারীদের বোনাসসহ নানা খাতে ব্যয় হয় অতিরিক্ত টাকা। তিনি বলেন, ঈদে ঢাকা থেকে বরিশালে যাওয়ার সময় যাত্রী থাকলেও ফিরতি পথে আসতে হয় সম্পূর্ণ খালি। এ অবস্থায় ঈদের সময়ও যদি আমরা কম ভাড়ায় যাত্রী আনা-নেয়া করি তাহলে বাড়ি থেকে টাকা এনে কর্মচারীদের বেতন-বোনাস দিতে হবে।

অপরদিকে ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের জন্য বিআইডবিব্লউটিসি’র সরকারি জাহাজ ও উপকূলীয় এলাকার অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী সি-ট্রাকগুলো আগামী ২৯ জুন থেকে স্পেশাল সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছে। তবে সিংহভাগ যাত্রী বেসরকারি কোম্পানির লঞ্চে যাতায়াত করলেও বিআইডব্লিউটিএ এখনো লঞ্চের স্পেশাল সার্ভিসের সময় নির্ধারণ করতে পারেনি।

সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেসরকারি যাত্রী পরিবহন সংস্থার (যাপ) নেতাদের সাথে বৈঠক করে আগামী দু’এক দিনের মধ্যেই লঞ্চের সেস্পাল সার্ভিসের সিডিউল দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত যে প্রস্তুতি রয়েছে তাতে ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটে ৫টি রকেট স্টিমার ও ২৩ বেসরকারি কোম্পানির লঞ্চ ঈদে যাত্রী পরিবহন করবে।

বিআইডব্লিউটিসি’র ডিজিএম (যাত্রী/বাণিজ্য) আজমল হোসেন জানান, তাদের মোট ৮টি বড় জাহাজ ২৯ জুন থেকে ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের যাত্রী পরিবহন শুরু করবে। এগুলোর মধ্যে এমভি বার আউলিয়া, এমভি মনিরুল হক ও এমভি মতিন চলাচল করবে চট্টগ্রাম, হাতিয়া ও সন্দ্বীপ রুটে। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল, ঝালকাঠী, হুলারহাটসহ মোড়েলগঞ্জ পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করবে পিএস মাহসুদ, অষ্ট্রিচ, লেপচা, এমভি মধুমতি ও এমভি বাঙালি। ঢাকা-বরিশাল রুটে সরকারি এ ৫টি নৌ-যানের সাথে বেসরকারি কোম্পানির ২৩টি লঞ্চ যাত্রী পরিবহন করবে। এরমধ্যে ১৭টি লঞ্চ সরাসরি ঢাকা-বরিশাল রুটে চলবে। বাকি ছয়টি ঢাকা-বরিশালের সাথে লঞ্চ ঝালকাঠী ও চাঁদপুরের যাত্রী পরিবহন করবে।

(টিবি/এএস/জুন ২২, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test