E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

তদন্তকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা অর্থ বানিজ্যের অভিযোগ

২০১৬ জুন ২৯ ১১:২৮:১৭
তদন্তকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা অর্থ বানিজ্যের অভিযোগ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি :সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার ভূমিহীন পল্লী চিংড়িখালি ও বৈরাগীর চকে গণপিটুনিতে  দু’ ভূমিদস্যু নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশের দায়েরকৃত দু’টি মামলার মধ্যে অস্ত্র মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক অমল কুমার রায় গত মঙ্গলবার আদালতে ৩৭ জনের নামে এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

অভিযোগ, ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় বা জড়িত এজাহারভুক্ত ৩৪ জন আসামীকে অব্যহতি দেওয়া ও পাঁচজনকে জনকে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করার নামে পুলিশ দু’টি মামলা থেকে ২০ লাখ টাকা অর্থ বাণিজ্য করেছে।,

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ভূমিদস্যু কাশিবাটি গ্রামের মহব্বত মীর, সারাকাত মীর , ছিদ্দিক মীর, করিম পাড়সহ কয়েকজন ভূমিদস্যুদের উচ্ছেদ করে ২০০৪ সাল থেকে ভূমিহীন জনপদ চিংড়িখালি ও বৈরাগীর চকের ৮৫০ বিঘা জমিতে প্রায় পাঁচশত ভূমিহীন পরিবার বসবাস শুরু করে।২০০৫ সাল থেকে কাশিবাটি গ্রামের শুকুর আলী মীরের ছেলে ব্যাংক পাকাতি ও হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী আশরাফ মীর ওই ভূমিহীনদের নেতা সেজে একর পর এক ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করতে থাকেন। উচ্ছেদ্দের পরপরই এক থেকে দু’ বিঘার এক একটি প্লট বিক্রি করা হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায়। তিন মাস না যেতেই যে কোন অজুহাত দেখিয়ে তাদেরকে উচ্ছেদ করে ওই জমি অন্যত্র হস্তান্তর করা হয়। এমনকি জমি থেকে উচ্ছেদ না করার শর্তে ভূমিহীন নারীদের আশরাফ মীর ও তার বাহিনী সদস্যদের লালসার শিকার হতে হয়। স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যান ও পুলিশকে ম্যানেজ করে দীর্ঘ ১৩ বছরে জমি হস্তান্তর করে আশরাফ মীর সাতক্ষীরা শহরতলীর লাবসায় চার বিঘা জমি কেনা, কাশীবাটিতে মোজাইক টাইলস দিয়ে তিনতলা বাড়ি নির্মাণসহ কোটি টাকার মালিক বনে যান। প্রতিবাদ করলে ভূমিহীনদের নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়।

আশরাফ মীরের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে উচ্ছেদ হওয়া ভূমিহীনরা স্থানীয় সাংসদ ও সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হকের শরনাপন্ন হলে জামায়াত কর্মী আশারফ মীর ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে নলতা আহছানিয়া ডিগ্রী কলেজের মাঠে নলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সংবর্ধণা সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হকের হাতে সোনার নৌকা দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এরপর তার দৌরাত্ম্য আরো বেড়ে যায়। ২০০৫ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বৈরাগীর চক ও চিংড়িখালি থেকে উচ্ছেদ হওয়া কয়েক’শ ভূমিহীন, আশরাফ মীরের হাতে ধর্ষিত ভূমিহীন নারীদের স্বজনরা নলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেনের সহায়তায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে গত বছরের ২ মার্চ আশরাফ মীরসহ তার কয়েকজন স্বজনকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। এরপর থেকে আশরাফ মীর ও তার স্বজনরা সাতক্ষীরার কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা, ভূমিহীন নেতা, সাংসদ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে।

উপায় না দেখে সন্তুষ্ট করানোর পর এক সাংসদের ভাই সাংবাদিক সুমন ভাইয়া মানবাধিকার কর্মী, ও প্রয়াত ভূমিহীন নেতা আব্দুর রহিমের ছেলে তপন ভাইকে নিয়ে গত বছরের জুলাই মাসের মাঝামাঝি নাগাদ বৈরাগীর চকে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে সেখানে যাননি। যদিও পরে তিনি একাধিক দু’বার বৈরাগীর চকে গিয়েছিলেন। বৈরাগীর চকের ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করিয়ে আশরাফ মীর বাহিনীকে প্রতিষ্ঠিত করতে সুমন ভাইয়া ছাড়াও পুলিশের এক দালাল ঠাকুর সাংবাািদকসহ সাতক্ষীরা ও কালীগঞ্জের দু’ আওয়মী লীগ নেতা তাদেরকে পুলিশের সহযোগিতার গ্যারন্টি দিয়েছিলেন। একপর্যায়ে সুমন ভাইয়ার কথামত তার শ্বশুর আশরাফ মীর ১৮ আগষ্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে একটি আবেদন করেন। তাতে নলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন তার ভাই করিম পাড়সহ ২৪ জনকে জামায়াত বিএনপি’র লোক বানিয়ে বৈরাগীর চক ও চিংড়িখালির জমি জবরদখল করে তাদেরকে উচ্ছেদ করার অভিযোগ করা হয়। গত ১৯ আগষ্ট ওই আবেদনপত্রে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী কমঃ রাশেদ খান মেননের সুপারিশ করান সাংবাদিক সুমন ভাইয়া। একই দিনে ওই আবেদনপত্রটি ভূমিহীন নেতা ওহাব আলী পেয়াদা, শহীদুলসহ কয়েকজন ডাক ফাইলে জমা দিয়ে তাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর স্বাক্ষর করান। এ কাগজের বুনিয়াদে, সুমন ভাইয়া, ওহাব আলী পেয়াদা, সদর থানার দালাল ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়দানকারি কালীগঞ্জের দুদলী গ্রামের নাসিরউদ্দিন, ও আরো কয়েকজনের পৃষ্টপোষকতায় গত বছরের ২৪ আগষ্ট ভোরে বৈরাগীরচক দখলে নেমে পড়েন তারা। পরিকল্পনা অনুযায়ি রোববার বিকেলে সাংবাদিক সুমন ভাইয়া বৈরাগীর চক ও চিংড়িখালি এলাকায় গিয়েছিলেন। এ সময় তাকে সন্তুষ্ট করায় দখল করতে যাওয়ার সময় তিনি সঙ্গে থাকার নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। ফলে সব ধরণের নিরাপত্তার গ্যারাণ্টি দিয়েছিলেন ভাইয়া। অথচ বৈরাগীর চক ও চিংড়িখালিতে বসবাসরত প্রকৃত ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করতে যেয়ে মুহু মুহু গুলি ও বোমা হামলা চালিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি আশরাফ মীর বাহিনীর। গোলা বারুদ ফুরিয়ে যাওয়ার পর পালাতে যেয়ে নিরস্ত্র ভূমিহীনদের গণপিটুনিতে মারা যান আশরাফ মীর ও তার শ্যালক ইছহাক পাড়।

২৫ আগষ্ট আশরাফ মীরের স্ত্রী ফিরোজা বেগম ৫২ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা ৪০/৪৫ জনের নামে থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। ওই দিনের সহকারি উপপরিদর্শক সাগর আলী বাদি হয়ে হত্যা ও অস্ত্র আইনে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন। প্রতিটি মামলায় ৬৬ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা ৩০০জনকে আসামী করা হয়।

একই ঘটনায় নিহত আশরাফ মীরের স্ত্রী ফিরোজা বেগম বাদি হয়ে গত ৩০ আগষ্ট ৮৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জনের নামে মামলা (সিআরপি-১৯৫/১৫) করেন। নিহত ইছহাকের ছেলে ইসমাইল হোসেন বাদি হয়ে সদর থানার দালাল কালীগঞ্জের নাসিরউদ্দিনের নির্দেশনা অনুযায়ি গত পয়লা সেপ্টেম্বর যশোরের ঝিকরগাছা, সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা, শ্যামনগর ও কালীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার ৯১ জনের নামে আদালতে মামলা (সিআরপি-২০৪/১৫)দায়ের করেন। গত ৭ সেপ্টেম্বর আদালতে এফিডেফিডের মাধ্যমে বাদি ইসমাইল হোসেন মামলা প্রত্যাহারের আবেদন জানান। পরদিন নিহত ইছহাকের স্ত্রী ফরিদা খাতুন ৯৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে আরো একটি হত্যা মামলা (সিঅঅরপি-২১১/১৫)দায়ের করেন। বিচারক এরশাদ আলী অঅদালতে দায়েরকৃত তিনটি মামলার কার্যক্রম স্থগিত রেখে পুলিশের দায়েরকৃত মামলার প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
গত ২০ জুন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক অমল কুমার রায় অস্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

তবে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, তারা মামলা থেকে অব্যহতি পাওয়া ও নতুন লোকের নামে অভিযোগপত্রে নাম দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তাকে সমষ্টিগতভাবে ২০ লাখ টাকা দিয়েছেন।

তবে মামলা থেকে অব্যহতি দিতে ও অভিযোগপত্রে নাম সংযুক্ত করতে কোন প্রকার আর্খিক লেনদেনের কথা অস্বীকার করেছেন উপপরিদর্শক অমল রায়।

(আরএনকে/এস/জুন২৯,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test