E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঈদের নতুন জামা পরা হলো না সাইফুলের দুই শিশু কন্যার

২০১৬ জুলাই ০৩ ২১:৩৪:১৩
ঈদের নতুন জামা পরা হলো না সাইফুলের দুই শিশু কন্যার

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : পরিবারের সঙ্গে ঈদ করা হলোনা সাইফুলের। কথা ছিল ঈদের ছুটিতে রবিবার বাড়ি ফেরার । দুই কন্যার জন্য কিনে আনবে নতুন জামা। বাড়ি এসে সকলের সঙ্গে ঈদ করবেন। সেই সাইফুল ফিরবে, তবে লাশ হয়ে। ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরায় জঙ্গি হামলার শিকার হয়ে নিহত হয় শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কলুকাঠি গ্রামের সাইফুল ইসলাম চৌকিদার। হামলার খবর শোনার পর শনিবার থেকেই তার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। এখনো লাশ বাড়ি পৌঁছেনি। কখন পৌঁছাবে তাও বলতে পারছেনা কেউ। লাশ বাড়িতে না পৌঁছাতে ও আত্মীয়স্বজন পাড়া প্রতিবেশী সহ শত শত লোক বৃষ্টি উপেক্ষা করে তার গ্রামের বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে। স্বপ্ন ভাঙা পরিবারটি এখন শুধুই অপেক্ষা করছেন মরদেহের জন্য।

রবিবার দুপুরে কোলকাঠি গ্রামে সাইফুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে তার অন্তস্বত্তা স্ত্রী সোনিয়া আকতার (২৭) তার দুই কন্যা সামিয়া (১০) ও ইমলি (৭) কে নিয়ে বাড়িতে আহজারি করছেন শত শত আত্মীয়স্বজন। পার্শ্বের কক্ষে মা সমেরা বেগম (৭০) এর আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। সন্তানের শোকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। তাদেরকে কি সান্ত্বনা দিবে স্বজনরা। সাইফুলে মায়ের বুকফাটা কান্না দেখে স্বজনেরা তাদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেনা। ছেলে সাইফুল কথা দিয়েছিল ঈদের ছুটিতে রবিবার বাড়ি এসে সকলের সঙ্গে একসাথে ঈদ করবেন।

নিহত সাইফুল শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কলুকাঠি গ্রামের মৃত আবুল হাসেম চৌকিদারের ৫ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। তার ছোট ভাই বিল্লাল মালয়েশিয়া থাকে। ৩ বোন সকলের বিয়ে হয়ে গেছে। দীর্ঘ ১০ বছর সে জার্মাানীতে থাকার পরে দেশে ফিরে। এরপর সে দেড় বছর যাবৎ ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় পিজ্জা তৈরির বাবুর্চি হিসেবে কাজে যোগদান করে।

আর অল্প ক’দিন পরেই তৃতীয় সন্তানের মুখ দেখতেন হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় কর্মরত কুক সাইফুল ইসলাম চৌকিদার। পরিবারের লোকজন জানান সাইফুলের স্ত্রী সোনিয়া ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আর ক’দিন গেলেই তৃতীয় সন্তানের বাবা হতেন তিনি। অনাগত সন্তান আর কখনোই দেখতে পারবেনা তার বাবার মুখ।

নিহত সাইফুলের স্ত্রী সোনিয়া কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ১ মাস পূর্বে সে বাড়ি আসছিল। গত শুক্রবার বিকেলে আমার সাথে তার শেষ কথা হয়। ঘটনার সংবাদ পেয়ে বার বার তাকে ফোন করা হলে সে ফোন রিসিভ করছেনা। এরপর ঢাকায় থাকা আত্মীয় স্বজনেরা খোঁজ নিয়ে তার লাশ সনাক্ত করে বাড়িতে খবর দেয়। আমার দুটি মেয়ে এবং অনাগত সন্তানের কি হবে। ওরা কাকে বাবা বলে ডাকবে। কি করে আমি বাঁচবো?

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সাথে যোগাযোগ করলে এ বিষয়ে প্রশাসনিক ভাবে তাদের কাছে কোন তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন।

(কেএনই/পি/জুলাই ০৩, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test