E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

উপকূলে ইলিশ মৌসুমের শুরুতে বনদস্যুর হাতে জিম্মি জেলেরা

২০১৪ জুন ০৮ ১৮:৫৬:৫৯
উপকূলে ইলিশ মৌসুমের শুরুতে বনদস্যুর হাতে জিম্মি জেলেরা

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বঙ্গোপসাগরসহ সুন্দরবন উপকুলে ইলিশ আহরণ মৌসুমের শুরুতে বনদস্যু বাহিনীগুলোর চাঁদাবাজী, মুক্তিপণের দাবিতে জেলেদের  অপহরণে নেমে পড়েছে। এ অবস্থায় মৌসুমের শুরুতে জিম্মি হয়ে পড়েছে সুন্দরবনে বনদস্যু বাহিনী গুলোর হাতে।

একদিকে জলদস্যুদের চাঁদাবাজী অন্যদিকে সাগরে ইলিশ না পাওয়ার বেদনা জেলে পাড়ায় দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। চাঁদা না পাওয়ায় মুক্তিপণের দাবিতে মাঝে মধ্যেই অপহৃত হচ্ছে জেলেরা। তাদের মধ্যে যারা মুক্তিপণ দিচ্ছে তারাই কেবল ফিরে আসছে । অনেকেই মুক্তিপণ দিতে না পারায় মুক্তিও মিলছে না তাদের। এ যেন এক পৃথক রাজত্ব ! বনদস্যুদের চাঁদা দিয়ে ‘ টোকেন’ না নিয়ে সাগরসহ উপকূলে কেউ বিচরণ করতে বা মাছ ধরতে পারছে না।
সাগর থেকে উপকূলে ফিরে আসা জেলেরা জানান, ইলিশ মৌসুম শুরুতে সমুদ্রে ইলিশের দেখা মিলছেনা, অন্যদিকে বনদস্যু বাহিনীগুলোকে যে সব ট্রলার চাঁদা দিচ্ছে না, সে সব ট্রলার ইলিশ আহরণ করতে নানা বিড়ম্বনায় পড়ছে। চাঁদা পরিশোধের টোকেন দেখাতে ব্যর্থ হলে, বনদস্যুরা ওই সব ট্রলারে হামলা করছে। জেলেদের ধরে নিয়ে গহীন অরণ্যে আটকে রাখছে। এরপর মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে। জেলেদের অভিযোগ, উপকূলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সার্বক্ষণিক তদারকির অভাব রয়েছে। আর এতে দেড় লাখ জেলে বছরের পর বছর দস্যু বাহিনীগুলোর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে।
গত এক বছরে র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুক যুদ্ধ’ ও ‘ক্রশ ফায়ারে’ অন্তত ৪১ বনদস্যু নিহত হয়েছে। এরপরও নতুন নতুন বনদস্যু বাহিনী গঠিত হচ্ছে। চলছে জেলেদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন আর তাণ্ডব।
জেলে, ট্রলার মালিক ও আড়তদারদের সূত্রে জানা গেছে, গত মাসে মুক্তিপণের দাবিতে অন্তত শতাধিক জেলেকে অপহরণ করে কয়েকটি বনদস্যু গ্রুপের সদস্যরা। সুন্দরবন উপকূলে সাম্প্রতিককালে আউয়াল ওরফে ছোট, জাহাঙ্গীর, ইলিয়াস, জুম্মন, মর্তুজাসহ বেশ কয়েকটি জলদস্যু বাহিনী চলতি ইলিশ আহরণ মৌসুমের শুরুতেই ট্রলার ও নৌকা প্রতি ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করছে।
মংলার চিলা ও জয়মনি এলাকার মাছ ধরা ট্রলারের মাঝি ফারুক, চান মিয়া, লাল মিয়া, নুর মিয়া জানান, দাবিকৃত চাঁদা দিতে ব্যর্থ ট্রলার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলোতে বনদস্যুরা হানা দিয়ে মাছসহ ট্রলার-নৌকা লুট ও জেলেদের অপহরণ করে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণের দাবিতে সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে আটকে রাখছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এ সব অপহরণের ঘটনা জানিয়ে দু'একটি ছাড়া অধিকাংশ ট্রলার মালিকরা কোনো প্রতিকার পাননি।
কখনও ট্রলার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকার মালিকরা মুক্তিপণের টাকা দিতে দেরি হওয়ায়, জেলেদের হত্যা করে বন ও সাগরে নিক্ষেপ করার ঘটনা ঘটেছে বলে জেলেরা জানিয়েছেন। বনদস্যুদের কারণে সুন্দরবন উপকূলসহ গভীর সমুদ্রে ইলিশ আহরণে নিয়োজিত ট্রলার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলো বাধ্য হয়ে বন ও বনদস্যু বাহিনীগুলোকে চাঁদা দিয়ে টোকেন নিয়েই সমুদ্রে ইলিশ আহরণ করতে বাধ্য হচ্ছে।
সুন্দরবনের সাগর উপকুলের মৎস্যজীবিদের বৃহৎ সংগঠন ‘দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের চেয়ারম্যান মেজর (অব:) জিয়াউদ্দিন জানান, অসহায় জেলেরা দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন বনদস্যু বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার। পেশার তাগিদে জীবণের ঝুঁকি নিয়ে তাদের সাগরে আসতে হয়। বনদস্যু বাহিনীর নেপথ্য গড ফাদারদের আইনের আওতায় না আনতে পারলে, এদের কোনভাবে দমন করা যাবে না।
এ ব্যাপারে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লে. কমান্ডার আলাউদ্দিন নয়ন জানান, জেলে ও বনজীবীদের অপহরণের খবর পাওয়া মাত্রই দ্রুত অভিযান চালিয়ে অপহৃতদের উদ্ধার করা হয়ে থাকে। সুন্দরবনসহ উপকুলে বনদস্যু দমনে কোষ্টগার্ডের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
(একে/এএস/জুন ০৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test