E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ময়মনসিংহের ওয়াজেদুলের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধে মামলা

২০১৬ জুলাই ০৪ ১৫:৫৫:৩০
ময়মনসিংহের ওয়াজেদুলের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধে মামলা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি :ময়মনসিংহে সিনিয়র জুডি: ম্যাজিষ্ট্রেট ১নং আমলী আদালতে আন্তর্জাতিক ও মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩/৪ ধারায় ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বাঘাডোবা গ্রামের ওয়াজেদুল ইসলাম ওরফে শেয়াল (৭৫) এর নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলা নং-৫৯৭/২০১৬। মামলার বাদী বাঘাডোবা গ্রামের মো: আ: রহিম (৭০)।

মামলার বিবরণে মো: আ: রহিম জানান, আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাঙ্গালী জাতির কান্ডারী শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সক্রিয় কর্মী এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের দেশ প্রেমিক মানুষ। অপরদিকে আসামী মুসলিমলীগ পরিবারের সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রচন্ড বিরোধীতাকারী পাকহানাদার বাহিনীর সদস্য ও সহযোগী সংগঠন রাজাকার বাহিনীর সরাসরি সদস্য। ১৯৭১ সালে পাকহানাদার বাহিনীর তত্বাবধানে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠনের কিছুদিন পর আমাদের এলাকায় ওয়াজেদুল ইসলাম ওরফে শেয়াল এর পিতা মৃত মনির উদ্দিন এর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে এলাকায় শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। গগনশাহ বাজার বর্তমান অম্বিকাগঞ্জ বাজার পাকহানাদার বাহিনী ও রাজাকার বাহিনীর ক্যাম্প গঠন হয়। ১৫ই আগষ্ট ১৯৭১ সাল বেলা ১০ ঘটিকায় ওয়াজেদুল ইসলাম ওরফে শিয়াল এবং তার পিতা মৃত মনির উদ্দিন সহ ২০/২৫ জনের একটি রাজাকার দল আমাদের বাড়ীতে হামলা চালিয়ে বাড়ী থেকে ধান, চাল ও পুকুরের মাছ, টাকা পয়সা লুটপাট করে নিয়ে যায় এবং এলাকার বহু ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দেয় এবং ক্যাম্পে ফিরে যাওয়ার পথে আওয়ামীলীগ কর্মী (বাদী) মো: আ: রহিম, স্বাক্ষী মো: ফজলুল হক ও আ: রাজ্জাককে পিঠমোড়া করে বেধে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। রাইফেলের বাট দিয়ে আমাদেরকে মারধর করে এবং অবশেষে ৫হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়।

আসামী ওয়াজেদুল ইসলাম ওরফে শিয়াল এর পিতা তৎকালীন পুর্ব পাকিস্থানের আলমাস বাহিনীর ইউনিয়ন কমান্ডার ছিলেন, তার সাথে মৃত ইমান আলী সরকার রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন এবং মৃত মোসলেম পিতা মৃত ইনসান মুন্সী সে অত্র ইউনিয়নের আলমাস বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। আসামী ওয়াজেদুল ইসলাম ওরফে শিয়াল রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন।

বিগত ১৬/০৮/১৯৭১ইং বেলা ১০ ঘটিকায় ওয়াজেদুল ইসলাম ওরফে শেয়াল তার সঙ্গীয় লোকজন ও উক্ত রাজাকার এবং আলমাস বাহিনীকে নিয়ে বাঘাডোবা গ্রামে মো: নুরুল ইসলাম এর পিতা নাতু শেখকে বাড়ী হতে ধরে নিয়ে পিঠমোরা বেধে আসামীর হাতে থাকা রাইফেল দিয়ে গুলি করে হত্যা করে পুকুরে ফেলে দেয়। ঘটনার সময় মামলার বাদী আ: রহিম ও মামলার স্বাক্ষী মো: ফজলুল হক ও আ: রাজ্জাক ঘটনা দেখেছে। নাতু শেখকে হত্যা করার সময় তার পুত্র মো: নুরুল ইসলামের বয়স ছিল ৫বছর। নুরুল ইসলাম তার পিতাকে হত্যা করার সময় আসামী ওয়াজেদুল ইসলাম ওরফে শিয়ালকে দেখে ছিল। আসামী অত্র এলাকায় পাকহানাদার বাহিনীকে নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠন করে হিংসাত্বক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে হিন্দু লোকজন ও হিন্দু মহিলাদের ধরে নির্যাতন করে ও বাড়ী ঘর লুটপাট সহ বিভিন্ন নিরীহ লোকজনকে ধরে এনে শত শত লোকজনকে হত্যা করে বাঘাডোবা গ্রামের পাশের বিলে ফেলে রাখে। তারা স্বাধীনতা পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু সরকারকে বিব্রত করার জন্য সর্বহারা পার্টিতে যোগদান করে প্রকাশ্য দিবালোকে গনশত্রু ঘোষণা করে। ১৬ই আগষ্ট ১৯৭১ সাল সকাল ১০ ঘটিকার সময় নাতু শেখকে হত্যা করে এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করে। তৎকালীন গগনশাহ বাজারে (বর্তমান অম্বিকাগঞ্জ বাজার) ক্যাম্পে নিরিহ মানুষকে নিয়ে শারিরিক নির্যাতন করে। নাতু শেখকে হত্যা করার সময় বাদী আ: রহিম, স্বাক্ষী মো: ফজলুল হক ও মো: আ: রাজ্জাক প্রত্যক্ষ ভাবে আসামী ওয়াজেদুল ইসলাম ওরফে শিয়ালকে গুলি করতে দেখেছে। আসামী ওয়াজেদুল ইসলাম ওরফে শিয়াল এর গুলিতে নাতু শেখ মারা যায়। ১৯৭১ সালে নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনের মাত্রা বেড়ে গেলে রাজাকাররা বাঘাডোবা ছেড়ে চলে যায়।

বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন ময়মনসিংহ জজ কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মো: সাইদুর রহমান, এডভোকেট মাহমুদুল হাসান প্রমুখ ।

(এমডি/এস/জুলাই০৪,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test