E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিক্ষা চলে জামায়াতের কারিকুলামে

বরিশালের পীস স্কুল জামায়াতের যোদ্ধা তৈরীর আঁতুরঘর

২০১৬ জুলাই ১৩ ২০:৩০:৪০
বরিশালের পীস স্কুল জামায়াতের যোদ্ধা তৈরীর আঁতুরঘর

আঞ্চলিক প্রতিনিধি(বরিশাল):এক গুলিতে দুই পাখি শিকার করছে বরিশালের পীস স্কুল এন্ড কলেজ। মাত্র একবছর আগে নগরীতে কার্যক্রম শুরু করার সময় ঘোষণা দিয়েছিল ইসলামী বক্তা (বর্তমানে বিকর্কিত) ড. জাকির নায়েকের ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধায়নে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হবে। যেহেতু বিভিন্ন মাধ্যমে জাকির নায়েক জনপ্রিয় হওয়ায় অল্পদিনে এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এ স্কুলে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। বর্তমানে জাকির নায়েকের বুদ্ধি বৃত্তিক জঙ্গিবাদ প্রচার ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর কথা ঘুরিয়ে নিয়েছেন বরিশালের পীস স্কুলের দ্বায়িত্বপ্রাপ্তরা।

পীস স্কুল কমিটির নেতৃবৃন্দরা বলছেন, এ স্কুলের সাথে জাকির নায়েকের ফাউন্ডেশনের কোন সস্পৃক্ততা নেই। তাহলে পীস স্কুল পরিচালনা করছেন কারা? এমন প্রশ্নের সমাধান খুঁজতে গিয়ে বেড়িয়ে এসেছে নানা তথ্য। জানা গেছে, সরাসরি জামায়াত ইসলাম পরিচালনা করছে পীস স্কুল এন্ড কলেজ বরিশাল শাখা। ইনভাইট পিস নামক একটি কোম্পানি স্কুলটি পরিচালনা করছে।

সূত্রে আরও জানা গেছে, পীস স্কুল এন্ড কলেজের পাঠক্রম অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের চেয়ে আলাদা। এমনকি বোর্ডের পাঠক্রমের সাথে সাংঘর্ষিক। এখানে সরকার স্বীকৃত পাঠক্রম প্রচারণায় ব্যবহৃত হলেও মূলত ‘জামায়াতি পাঠ্যক্রম’ অনুসারে পরিচালিত হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হচ্ছে, বইতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেমনই লেখা থাকুক না কেন, শ্রেণি কক্ষে শিক্ষকরা ভিন্নভাবে তা ব্যখ্যা করে থাকেন। এখানে কখনো জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়না। তবে ইসলামী শিক্ষার নামে বিভিন্ন যুদ্ধের চুম্বুকাংশ প্রায় প্রতিদিন শিশুদের মাঝে বাধ্যতামূলক ‘বয়ান’ দেয়া হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা জামায়াতের একটা কৌশল। ইসলামি শিক্ষার নামে যুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরে ছোট থেকেই শিশুদের মনে ‘জিহাদি’ হবার প্রবণতা তৈরী করা হচ্ছে। তাদের মতে, জামায়াত ও জাকির নায়েকের ‘টার্গেট’ খুব বেশি আলাদা নয়। যেহেতু বিশ্বে জাকির নায়েক জনপ্রিয় এবং তার টেলিভিশনের নাম পীস টিভি তাই সেই নাম ব্যবহার করে সুযোগ নিয়েছে জামায়াত। এমন ধারণার সত্যতাও পাওয়া গেছে।

পীস স্কুল পরিচালনা করে যে প্রতিষ্ঠান (ইনভাইট পিস লিমিটেড) তার চেয়ারম্যান আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ। যিনি শিবিরের সাবেক সভাপতি। নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ শিবিরের ১১ তম সভাপতি। তিনি, ১৯৯১-৯২ সেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। তাকে বিভিন্ন সময় ছাত্র শিবিরের অনুষ্ঠানেও দেখা গেছে। ছাত্র শিবিরের মুখপাত্র ছাত্র সংবাদেও নিয়মিত তিনি লেখালেখি করেন। তবে এই বিষয়টি কয়েকদিন পূর্বে গণমাধমে আলোচিত হলে তাকে সরিয়ে নতুন চেয়ারম্যান করা হয় জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিদ্যা বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর মীর আকরামুজ্জামানকে।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আকরামুজ্জামানের সাথে জামায়াতের প্রত্যক্ষ কানেকশন থাকার অভিযোগে এর আগে দুইবার তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। তবে ওই দুই দফায় লিখিত মুচলেকা দিয়ে তিনি জামায়াতের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ বন্ধ করে স্বপদে বহাল হন।

জানা গেছে, বরিশালের পীস স্কুল এন্ড কলেজে ভাষা হিসেবে বাংলা, ইংরেজী ও আরবি শেখানো হয়। শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের ইংরেজী ও আরবি শিক্ষার প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়ে শেখানো হয়। তার তুলনায় বাংলা ভাষা শেখানো হয় না। এমনকি ইংরেজী বা আরবি শেখাতে গিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ইরাক, ইরান, সিরিয়া বা আফগানিস্তানে তালেবান এবং আইএসএস-এর যোদ্ধাদের মানুষ হত্যার গল্প ‘লেসন স্পিড’ হিসেবে পড়ানো হয়।

একাধিক অভিভাবকরা জানান, পীস স্কুলে লেখাপড়ার কৌশল ভিন্ন এবং এখানে অনেক কিছুই শেখানো হয় যা স্বাভাবিক শিক্ষা নয়। তবে দু’টি কারণে তারা তাদের ছেলে-মেয়েদের সেখানে ভর্তি করিয়েছেন। এরমধ্যে আরবি ও ইংরেজী ভাষাটা রপ্ত করা যাচ্ছে বলে জানান তারা।

অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা স্কুলটি সর্ম্পকে কোন কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
স্কুলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, স্কুলটি জামায়াতের পরিচালনা কমিটি দিয়ে চললেও জাকির নায়েকের লেকচারের নির্বাচিত অংশ পাঠ্য হিসেবে পড়ানো হয়ে থাকে। যে অংশের মধ্যে অনেক মতামত আছে যা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। সূত্রমতে, নগরীর ৪৭ কলেজ এভিনিউয়ের জিমি কটেজ ভাড়া নিয়ে স্কুল এন্ড কলেজটি পরিচালিত হলেও নির্দিষ্ট লোকের বাইরে কেউ এ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেন না।

সূত্রটি আরও জানিয়েছেন, বরিশালে জামায়াতের যোদ্ধা তৈরীর আঁতুরঘর হিসেবে স্কুল এন্ড কলেজটি কাজ করছে। এখানে একদিকে যেমন শিশুদের শিক্ষার নামে ভিন্ন শিক্ষা দেয়া হচ্ছে, তেমনি একইসাথে প্রতিসপ্তাহে এখানে বিশেষ সভাও বসে। যেটিকে বাইরে প্রচার করা হয়ে থাকে স্কুল এন্ড কলেজ কমিটির সভা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সেই সভা প্রায় বিকেলে হয়ে থাকে। সভায় যারা যোগদান করেন তারা বরিশালের বিভিন্ন অঞ্চলের শীর্ষ জামায়াত নেতা। সূত্রমতে, এরপূর্বে স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান ছিলেন বিএম কলেজের গণিত বিষয়ের শিক্ষক মোশারেফ হোসেন। জামায়াত পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার কথা বিএম কলেজ কর্তৃপক্ষ জানতে পারায় শেষে বাধ্য হয়ে তিনি (মোশারেফ) পদত্যাগ করেন। তবে এটি তার আইওয়াশ বলছেন অনেকেই। এখনো নেপথ্যে মোশারফই স্কুল এন্ড কলেজটি চালাচ্ছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, স্কুলে ২১জন শিক্ষকের মধ্যে ১৯জনই জামায়াতের সমর্থক।

বরিশালের পীস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন টিআইবির বোর্ড অব ট্রাস্টির বরিশালের সদস্য এবং সনাক’র বরিশাল শাখার সাবেক সভাপতি প্রফেসর এম মোয়াজ্জেম হোসেন।

পীস স্কুল সর্ম্পকে জানতে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও স্কুলে গিয়েও তাকে না পাওয়ায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে স্কুল এন্ড কলেজের অফিস ব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের স্কুলের সাথে জাকির নায়েক বা জামায়াতের কোন কানেকশন নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে চাকরি নেয়ার ক্ষেত্রে যেমন আ’লীগের সুপারিশ দরকার, তেমনি পীস স্কুল এন্ড কলেজও শিবির বা জামায়াতের সুপারিশ ছাড়া কিছুই হয়না।




(টিবি/এস/জুলাই১৩,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test