E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ধর্ষিতার ইজ্জতের মূল্য ১লাখ ৩০ হাজার টাকা !

আগৈলঝাড়ায় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ধর্ষণের প্রহসনের শালিশ 

২০১৬ জুলাই ১৯ ১৫:০০:৫৩
আগৈলঝাড়ায় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ধর্ষণের প্রহসনের শালিশ 

আঞ্চলিক প্রতিনিধি(বরিশাল):বরিশালের আগৈলঝাড়ায় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে প্রভাবশালীদের নিয়ে গ্রাম্য শালিশ বৈঠকে সাদা ষ্ট্যাম্পে জোর করে ধর্ষিতার সাক্ষর আদায় করে স্কুল ছাত্রি ধর্ষণের ইজ্জতের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে  ১লাখ ৩০ হাজার টাকা।

তথ্য অনুসন্ধানে ওই শালিশ বৈঠকে উপস্থিত নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক ব্যাক্তি জানান, শনিবার (১৬ জুলাই) সকালে আদালত ও আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে বাগধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্রির নেতৃত্বে নাঘিরপাড় কালী মন্দিরে নাঘিরপাড় স্কুলের দশম শ্রেনির ছাত্রি ধর্ষণ ঘটনায় আদালতে মামলা দায়েরের পরেও ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে ধর্ষিতার পরিবারকে কৌশলে শালিশ বৈঠক হাজির করা হয়। ওই শালিশ বৈঠকে এলাকার নির্বাচিত জন প্রতিনিধি, গণ্যমান্য লোকজনসহ শতাধিক সাধারণ জনগণ উপস্থিত ছিলেন।

চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্রির সভাপতিত্বে ধর্ষণের শালিশ বৈঠকে ৭ সদস্যর শালিশ বোর্ড গঠন করা হয়। শালিশ বোর্ডের অপর সদস্যরা হলেন বাগধা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি এআর ফারুক বক্তিয়ার, ইউনিয়ন কৃষকলীগ সভাপতি কাশেম বক্তিয়ার, নাঘিরপাড় স্কুলের সাবেক সভাপতি আবুল বাশার বক্তিয়ার, স্থানীয় সিরাজ বক্তিয়ার, দিলীপ বাড়ৈ ও ধর্ষক পরিবারের একজন সদস্য।

এসময় শালিশ বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রি ধর্ষণকারী কলেজ ছাত্র ওই গ্রামের দুলাল মন্ডল ও তার বাবা আমরী মন্ডল, ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রি ও তার বাবা, ইউপি সদস্য কালাম হাওলাদার, সংরক্ষিত ইউপি সদস্য রেনুকা অধিকারী ওরফে কালা বউ, সাবেক ইউপি সদস্য কুমোদ রায়সহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

স্বল্প সময়ের স্থায়ী শালিশ বৈঠকের শুরুতেই চেয়ারম্যান হত দরিদ্র ধর্ষিতার বাবা ও ধর্ষিতাকে হুমকি ধামকি দিয়ে তাদের মঙ্গলের জন্য এই শালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে ৩শ টাকার সাদা ষ্ট্যাম্পে ধর্ষিতা, তার বাবা, ধর্ষক দুলাল মন্ডল, তার বাবা আমরী মন্ডল, স্থানীয় নিত্যানন্দ হালদারের স্বাক্ষর আদায় করেন।

এরপর চেয়ারম্যানসহ শালিশ বোর্ডের ওই সাত সদস্য আলাদাভাবে এক জায়গায় বসে ধর্ষকের দেড় লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করেন। শালিশ বৈঠকে উপস্থিত জনগণের কাছে চেয়ারম্যান ধর্ষণের বিচারে দেড় লাখ টাকার রায় ঘোষণার পর তিনিই ওই সভায় বলেন এখানে আপিলের সুযোগ রয়েছে। আপিলের কথা শুনে ধর্ষকের বাবা জরিমানা কমানোর আবেদন করলে শালিশবৃন্দ ২০ হাজার টাকা কমিয়ে ১লাখ ৩০ হাজার টাকা ধার্য করেন। ওই সময় ৩০ হাজার টাকা ধর্ষক পরিবার পরিশোধ করলেও ওই টাকা ধর্ষিতার পরিবারের হাতে না দিয়ে আ’লীগ নেতা এআর ফারুক বক্তিয়ারের কাছে রেখে দেন। বাকী ১লাখ টাকা আগামী শুক্রবারের মধ্যে দেয়ার কথা রয়েছে। ওই টাকার মধ্যে থানা পুলিশ ম্যানেজের কথাও জানানো হয় বৈঠকে।

ধর্ষিতার স্বজনেরা জানান, অর্থের অভাবে মামলা চালানো তাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর। এই সুযোগ নিয়ে প্রহসনের শালিশ বৈঠক করা হয়েছে। ধর্ষকের বিচারের দাবিতে তারা মানবাধিকার সংগঠনসহ সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু দৃষ্টি কামনা করেছেন।

প্রকাশ, উপজেলার নাঘিরপাড় গ্রামের হত দরিদ্র বাবার দশম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে একই গ্রামের আমরী মন্ডলের ছেলে কলেজ পড়ুয়া দুলাল মন্ডল ৫ জুলাই ধর্ষণ করে।

ধর্ষিতার ডাক চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে ধর্ষককে হাতেনাতে আটক করে। পরে উভয় পরিবারের লোকজন তাদের বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেয়। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১০ জুলাই রবিবার তাদের বিয়ের কথা ছিল। কিন্ত ধর্ষক ও তার পরিবার বিয়েতে তালবাহানা শুরু করলে ধর্ষিতা বিয়ের দাবিতে আত্মহত্যার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে ধর্ষিতার বাবা থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও থানা ওই অভিযোগ মামলা আকারে রেকর্ড করেনি। পরে উপজেলা তৎকলীন নির্বাহী কর্মকর্তা দেবী চন্দ’র সাথে ধর্ষিতা ও তার পরিবারের স্বজনেরা সাক্ষাৎ করে বিচারের দাবি জানান।

থানায় মামলা না নেয়ায় বাধ্য হয়ে ধর্ষিতার বাবা বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যনালে বুধবার এমপি ৯৪/১৬ মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে আগৈলঝাড়া থানা পুলিশকে মামলা রেকর্ড করার নির্দেশ প্রদান করেন। সোমবার আদালতের আদেশের কপি থানায় পৌছলেও গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে মামলা রেকর্ড করা হয়নি বলে সুত্র নিশ্চিত করেছে।

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার তিনি আদালতের আদেশের কপি হাতে পেয়েছেন। মামলা রেকর্ডের প্রক্রিয়া চলছে জানালেও দুপুর ২টা পর্যন্ত মামলা রেকর্ড হয়নি।

এব্যাপারে বাগধা ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্রি এ প্রতিনিধিকে জানান, পুলিশের সাথে কথা বলে এলাকার শান্তির জন্য গণ্যমান্যদের নিয়ে তিনি শালিশ বৈঠকের আয়োজন করে দিয়েছেন।

উল্লেখিত ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, শালিশের রায় তিনি ঘোষণা করেননি। রায় দিয়েছেন আওয়ামীলীগের সভাপতি এরআর ফারুক বক্তিয়ার। ৩০ হাজার টাকাও তার কাছে জমা রয়েছে। সাংবাদিকরা লেখার কারণে ওই মেয়ে বিচার পেয়েছে বলেও জানান তিনি।


(টিবি/এস/জুলাই ১৯,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test