E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নড়িয়ায় যুবলীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা

২০১৬ জুলাই ২১ ১৫:৪৪:৪৩
নড়িয়ায় যুবলীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা

শরীয়তপুর প্রতিনিধি :জপসায় ইউনিয়ন শাখা যুবলীগের সদস্য জাকির হোসেন হাওলাদার (৩০)  তার নিজ বাড়িতে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হয়েছেন। বুধবার গভীর রাতে প্রতিপক্ষের লোকেরা এলাকায় ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতংক সৃষ্টি করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে।

স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোররাতে সে মারা যায়। এ ঘটনায় নড়িয়া থানা পুলিশ দুইজনকে আটক করেছে । এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জেলার নড়িয়া উপজেলার জপসা ইউনিয়নের যুবলীগের সদস্য চর ভোজেশ্বর গ্রামের ফজল হাওলাদারের ছেলে জাকির হোসেন হাওলাদার (৩০)কে বুধবার রাত অনুমান সাড়ে ১১টায় জপসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা শওকত বয়াতি, মজিবর ছৈয়াল ,আলী মাদবর, কালাম বয়াতি, রব বেপারী, মোতালেব বেপারী, রজ্জব বেপারী, ও শরবত আলী মাদবরসহ প্রতিপক্ষের ১৫/২০ জন সন্ত্রাসী পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে তার নিজ বাড়ির কাছে ২টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতংক সৃষ্টি করে। এ সময় জাকির হোসেন হাওলাদার ঘরের বারান্দায় বসে তার বাবার সাথে কথা বলে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। হামলাকারিরা তাকে ঘর থেকে ধরে নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সামনেই বাড়ির দক্ষিণ পাশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারী কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা জাকির হাওলাদারের ঘরে ঢুকে নগদ টাকা ও ৩ ভরি স্বর্ণালংকার লুটে নেয়। তার আর্তচিৎকার শুনে তার পরিবারের লোকজন ও আশে পাশের অন্যান্য লোকজন এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা দ্রুত পালিয়ে যায়।

স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে তাৎক্ষণিক ভাবে শরীযতপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার রোগীর অবস্থার বেগতিক দেখে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।

বৃহস্পতিবার ভোররাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। এ সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন ও আত্মীয় স্বজনের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।

নিহত জাকির হাওলাদারের মা আলেয়া বেগম পূত্র শোকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। স্ত্রী লতা আক্তার তার ছোট্ট দুইটি শিশু সন্তান আলিফ (৫) ও জোয়েদ (১) কে কোলে নিয়ে বিলাপ করছে। সে স্বামীর শোকে এখন বিহবল। বার বার সে চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মূর্ছা যাচ্ছে। তার কান্নায় দেখে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে।শ ত শত লোক সংবাদ শুনে তাদের বাড়িতে ভীড় জমায়।

সংবাদ পেয়ে নড়িয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এ ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে একই উপজেলার মাইজপাড়া গ্রামের কেরামত আলী হাওলাদার ও আকসা গ্রামের আঃ সাত্তার মীর নামে দুইজনকে আটক করেছে । এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাগন এলাকা পরিদর্শন করেছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

নিহত জাকির হোসেন হাওলাদারের বাবা ফজল হাওলাদার বলেন, জপসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত বয়াতির সাথে সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার মাদবরের সাথে স্থানীয় আধিপত্য নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। অামার ছেলে আনায়ার মাদবরের সমর্থক ছিল। বুধবার রাত অনুমান ৮টায় নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা শওকত হোসেন বয়াতি আমাদের বাড়ির পাশে এসে আমাদের বাড়ি ঘর ভেঙ্গে আমাদের হাত পা ভেঙ্গে দিতে তার লোকজনকে নির্দেশ দেয়।

এরপরই রাত অনুমান সাড়ে ১০টায় থেকে ১১ টার দিকে ১৫/২০জন সন্ত্রাসী আমাদের বাড়ি এসে ২টি ককটেলের বিস্ফোরন ঘটায়। এ সময় আমার ছেলে জাকির আমার সাথে ঘরে বসে কথা বলছি। সন্ত্রাসীরা ঘরে ঢুকে ওকে টেনে হিচরে বেড় করে আমার চোখের সামনেই কুপিয়ে জখম করে। অনেক চেষ্টা করেও ওকে বাঁচাতে পারিনি। আমার ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

নড়িয়া উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল বলেন, নিহত জাকির আমার খালাতো ভাইয়ের ছেলে। সে জপসা ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য ও ৬নং ওয়ার্ড শাখার সভাপতি ছিল।

জপসা ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা শওকত হোসেন বয়াতি বলেন, নিহত পরিবার ও তারই চাচাত ভাই আবু বকর হাওলাদারের মধ্যে জমি জমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধের জের ধরে খুন হতে পারে। আমার বড়ভাই সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম নজরুল ইসলাম ওরফে নুরু বয়াতির সাথে নিহত পরিবারের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এ দ্বন্দ্বের জের ধরে তারা আমাকে এ ঘটনায় জড়াতে চাচ্ছে। আমি গত ১৩ জুলাই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শপথ পড়ার পর ঢাকায় চলে আসছি। এখনো ঢাকায় আছি। আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা।

শরীয়তপুরের সহকারী পুলিশ সুপার ( সার্কেল) তানভির হায়দার শাওন বলেন, আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এই হত্যাকান্ড ঘটতে পারে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে ২ জন কে আটক করা হয়েছে। মামলার প্রক্রিয়া চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।


(কেএনআই/এস/জুলাই ২১,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test