E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অবৈধভাবে স্কুলের ১২ বিঘা জমি বিক্রি

কারাভোগের পরেও বাতিল হয়নি ব্যবস্থাপনা কমিটি

২০১৬ জুলাই ২৪ ১৩:৫০:২৩
কারাভোগের পরেও বাতিল হয়নি ব্যবস্থাপনা কমিটি

শরিয়তপুর প্রতিনিধি :সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পৌর এলাকার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২ বিঘা সম্পত্তি বিক্রির দায়ে দুদকরে দায়েরকৃত মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারা ভোগের পরেও বাতিল করা হয়নি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। বিধি লংঘন করে এখনো স্বদম্ভে বহাল তবিয়তে রয়েছেন দূর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক। শিক্ষা মন্ত্রনালয়, অধিদপ্তর ও ঢাকা বোর্ড বরাবরে বার বার আবেদন করার পরেও রহস্যজনক কারনে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ।

দুদকের মামলার বিবরণ ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্র থেকে জানা গেছে, শরীয়তপুর সদর উপজেলার শরীয়তপুর পৌরসভাধীন উত্তর মধ্যপাড়া মৌজার আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব নামীয় ৩ একর ৭১ শতাংশ (প্রায় ১২ বিঘা) জমি রয়েছে। আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি সরকারের বা শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের কোন রকম অনুমতি ছারাই শুধুমাত্র পত্রিকায় একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এখতিয়ার বহির্ভূত রেজুলেশন করে, পর্চা জাল করে জমির শ্রেনী পরিবর্তন করে অতপর তাদের পছন্দের লোকের কাছে ৩ একর ৭১ শতাংশ (প্রায় ১২ বিঘা) জমির সমূদয় ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর পানির দামে বিক্রি করে। অন্তত ৮ কোটি টাকা তৎকালিন বাজার মূল্যের এই জমি সর্বনিন্ম সরকারি মূল্য থেকে ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা হ্রাসকৃত মূল্য নির্ধারণ করে এবং সরকারের ২৮ লক্ষ টাকা কর ফাঁকি দিয়ে মাত্র দেড় কোটি (এক কোটি পঞ্চাঁশ লক্ষ) টাকায় বিক্রি দেখিয়ে সেই টাকাও আত্মসাৎ করে তারা।

এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর দূর্নীতি দমন কমিশন এর ফরিদপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক মলয় কুমার সাহা বাদী হয়ে ২০১৪ সালের ৬ আগষ্ট মোট ১৫ জনকে আসামী করে শরীয়তপুর সদর পালং মডেল থানায় দুইটি মামালা দায়ের করনে। মামলা নং ০৮ ও নং ০৯ । দীর্ঘ দিন মামলার তদন্ত শেষে ৮ নং মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা দূদকের আঞ্চলিক উপ-সহকারি পরিচালক শামসুল আরেফিন ২০১৫ সালের ২৭ মে আদলতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২৮ মে দূদক আলোচিত এই মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের পর ৩০ জুন আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর ১ মাস ২০ দিন পলাতক থাকার পর ১৯ আগষ্ট ২০১৫ তারিখে আসামীরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করলে সকলের জামিনই নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে মামলাটি ফরিদপুর জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ৮ দিন কারাগারে থাকার পরেও শিক্ষা বিভাগের সুস্পষ্ট বিধান থাকা সত্বেও প্রধান শিক্ষকসহ অপর তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করেনি শিক্ষা বোর্ড। এমনকি ওই কমিটির বিরুদ্ধেও কোন রকম ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রনালয়, শিক্ষা অধিদপ্তর ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের নিয়মানুসারে অর্থাৎ “মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা ২০০৯ এর ৪১ ধারার বিধান মতে কমিটি শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানের সংগৃহিত সম্পদ ও তহবিলের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ও নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন। বর্নিত বিধিমালায় কমিটিকে বিদ্যালয়ের জমি/সম্পত্তি বিক্রি অথবা হস্তান্তরের কোন ক্ষমতা প্রদান করা হয়নি”। এ ক্ষেত্রে যেহেতু, কমিটি বিধি বহির্ভূতভাবে সম্পত্তি বিক্রি পূর্বক টাকা আত্মসাৎ করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে দুদক কর্তৃক ফৌজদারি মামলা দায়েরপূর্বক অভিযোগ গঠন করা হয়েছে এবং আসামীরা কারাভোগ করেছে, সেহেতু, একই প্রবিধানমালার ৩৮ ধারা মতে ম্যানেজিং কমিটি ভেঙ্গে দেয়া, বিধি মোতাবেক নতুন কমিটি গঠন এবং প্রধান শিক্ষকের অদক্ষতা ও সম্পত্তি তসরুপে সহযোগিতার কারনে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে।

কিন্তু দুদকের মামলা দায়েরে পূর্বে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে প্রথমে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসন ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১২ তারিখে ২০১ নং স্মারকে শিক্ষা সচিব বরাবরে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাতে আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি বাতিল ও প্রধান শিক্ষকসহ জমি বিক্রিতে সহযোগিতায় জরিত থাকার দায়ে সহকারি প্রধান শিক্ষক এবং অপর তিন জন সহকারি শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করা হয়। এর কিছুদিন পরে দ্বিতীয় দফায় শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নিরীক্ষন ও পরিদর্শন বিভাগ ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসের ১০ তারিখ থেকে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের দুইজন কর্মকর্তা ৮ দিন শরীয়তপুরে অবস্থান করে এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করেন। তদন্তকালে ওই কর্মকর্তাদ্বয়ও কমিটি কর্তৃক জমি বিক্রয় সম্পর্কিত যাবতীয় অপরাধের প্রমান সংরক্ষন করেন ।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল ৬৮ নং স্মারকে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবরে ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিল, প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন এবং বিদ্যালয়ের জমি ফেরৎ পেতে জমি বিক্রির রেজিষ্ট্রিকৃত দলিল বেআইনী ঘোষনা করতে একটি দেওয়ানী মামলা দায়ের করার সুপারিশ করেন। জেলা প্রশাসকের পত্র প্রাপ্তির আলোকে ১২ মে ২০১৬ তারিখে শিক্ষা মন্ত্রনালয় ১০২২ ও ১০২৩ নং স্মারকে দুইটি পত্র দ্বারা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালককে একটি দেওয়ানী মামলা দায়ের করে ঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বিক্রয়কৃত জমির দলিল বেআইনী ঘোষনা পূর্বক স্কুলের নামে জমি ফেরৎ নেয়ার ব্যবস্থা গ্রহন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহন এবং ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিল করার নির্দেশ প্রদান করেন।

শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে ২০১৫ সালের ৪ অক্টোবর ও শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয় আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠন এবং প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য। শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মন্ত্রনালয় ও অধিদপ্তর কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শককে নির্দেশ দেন এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক এ,টি,এম মইনুল হোসেন রহস্যজনক কারনে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে দূর্নীতিগ্রস্ত ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষক।

এই প্রতিবেদক গত ১৮ জুলাই ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে বিদ্যালয় পরিদর্শক এ,টি,এম মইনুল হোসেনের কাছে আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কমিটি সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে লিখিত আবেদন করলে তিনি কোন তথ্য প্রদান করতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং কিভাবে দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কারাভোগকারি কমিটি ও প্রধান শিক্ষক এখনো বহাল রয়েছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সন্তোষজনক কোন জবান দেননি।

২০ জুলাই এই প্রতিবেদক পূনরায় শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমানের সাথে দেখা করে অবৈধভাবে আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২ বিঘা জমি বিক্রি করার পরেও বোর্ড কেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহন করেননি জানতে চাইলে, তিনি সাফ জানিয়ে দেন এ বিষয়ে তার কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেনি।





(কেএনআই/এস/জুলাই ২৪,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test