E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

গাইবান্ধায় কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি

২০১৬ জুলাই ২৯ ১৪:৩৬:১১
গাইবান্ধায় কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি

গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধায় শুক্রবার সকাল থেকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার, ঘাঘট, করতোয়া ও তিস্তাসহ সব নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এদিকে পানি কমার সাথে সাথে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ খাদ্য ও পানির অভাবে বন্যা দুর্গতরা নানা রোগে অসুস্থ হচ্ছেন।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কুমার সরকার জানান, শুক্রবার সকালে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি ২০ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটার, ঘাঘটের পানি ২২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার, করতোয়ার পানি ১৮ দশমিক ৮৭ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি ২৪ দশমিক ৯৩ সেন্টিমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি ২০ দশমিক ৭৯ সেন্টিমিটার, ঘাঘট ২২ দশমিক ৬৯ সেন্টিমিটার, করতোয়া ১৮ দশমিক ৯৬ সেন্টিমিটার ও তিস্তা ২৫ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার পানি নির্ধারণ করা হয়েছিল।

এ হিসাবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত করতোয়ার পানি ৯ সেন্টিমিটার, তিস্তার পানি ১২ সেন্টিমিটার, ঘাঘটের পানি ৯ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি ৭ সেন্টিমিটার কমেছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি ১৯ দশমিক ৮২ সেন্টিমিটার, ঘাঘটের পানি ২১ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার, করতোয়া ২০ দশমিক ১৪ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি ২৫ দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার হলে বিপদসীমা ধরা হয়।

সূত্র অনুযায়ী এ পর্যন্ত গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার ও ঘাঘটের পানি ৯০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ও করতোয়ার পানি ১ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, অন্যান্য স্থানে বন্যার পানি কমলেও এ উপজেলায় বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ কাজের অভাবে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। সরকারী ত্রাণ বিতরণেও কাজ করছে নির্বাচনী সহিংসতা। ত্রাণ পাওয়া অধিকাংশ মানুষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে (ইউপি) বিজয়ী চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কর্মী-সমর্থক। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অনেকেই ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

ত্রাণের চাল পাওয়া একই গ্রামের সুফিয়া বেগম জানান, রান্নার চুলা পানিতে তলিয়ে গেছে। নিরুপায় হয়ে তিনি বাড়ির আঙ্গিনায় জলচকির উপর আলক চুলা বসিয়ে খাবার তৈরি করছেন।

একই উপজেলার ভরতখালী গ্রামের ভবেশ চন্দ্র জানান, এলাকায় নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। তারা স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, নিরাপদ পানি ও উপযোগী বাসস্থানের অভাবে স্বাস্থ্যহানীসহ নানা রোগে অসুস্থ হচ্ছেন।

গাইবান্ধা জেলা সির্ভিল সার্জন নির্মানেন্দু চৌধুরী জানান, এসব এলাকায় মেডিকেল টিম গঠন করে পাঠানো হয়েছে। তারা বন্যার্তদের পানি ফুটিয়ে পান করার পরামর্শ দিচ্ছেন। এ ছাড়াও অসুস্থদের চিকিৎসাসেবা প্রদানসহ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করছেন।

অপরদিকে, গাইবান্ধা পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবির মিলন জানান, গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধের পৌর এলাকার কুটিপাড়া ও ডেভিড কোম্পানী পাড়ার ৮টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ইউপি) আব্দুল গফুর মণ্ডল জানান, পানি কমার সাথে সাথে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়াও উপজেলার ৯ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৫টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ওই এলাকার পশ্চিম পাড়ের লক্ষাধিক মানুষ আতংকে রয়েছে।

সদর উপজেলার কামারজানি হাটের কাঁচামালের ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান জানান, উপজেলার কামারজানি হাট, তহশিল অফিস, ফুলছড়ি এবং সাঘাটার ভরতখালির হাট তিনটি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। হাট তিনটি পানিতে ডুবে যাওয়ায় এলাকার মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বেচাকেনা বন্ধ হয়ে গেছে।

বন্যার পানির চাপে গাইবান্ধার ফুলছড়ি-সাঘাটা সড়কের ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড যৌথভাবে বালুর বস্তা ফেলে সড়কটি রক্ষায় চেষ্টা চালাচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।

(ওএস/এএস/জুলাই ২৯, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test