E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সর্বগ্রাসী পদ্মার ছোবলে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম

২০১৬ আগস্ট ০২ ১৭:০৮:১২
সর্বগ্রাসী পদ্মার ছোবলে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : উজান থেকে নেমে আসা বানের পািনর প্রবল স্রোত ও অতিরিক্ত বর্ষণের কারণে সর্বগ্রাসী পদ্মার ভয়াবহ ভাঙ্গনে এক সপ্তাহে জেলার জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার ১০ গ্রামের অন্তত ৩ শতটি পরিবার গৃহহীন হয়ে পরেছে। মাত্র দুই রাতের ভাঙ্গনে পদ্মা গর্ভে বিলীন হয়েছে একটি বাজার। পদ্মার অব্যাহত ভাঙ্গনে দিশেহারা মানুষগুলো পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।

মাত্র ১ মাস আগে ২৭ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে শেষ করা নদী তীর রক্ষা কাজটি কোন কাজেই আসেনি। পানিতেই খেয়ে ফেললো পানি উন্নয়ন বোর্ডের এতগুলো টাকা মন্তব্য করেছেন এলাকার লোকেরা।

সরে জমিন ঘুরে দেখ গেছে, গত ২৪ জুলাই এর পর থেকে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি অস্বাভাবিক গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে শরীয়তপুরের নিম্ন এলাকায়। ফলে, বানের পািনর সাথে পাল্লা দিয়ে প্রবল স্রোতের কারণে শুরু হয়েছে নদী ভাঙ্গন। জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের দূর্গার হাট এলাকা, কুন্ডেরচর ইউনিয়নের কলমিরচর, কালু বেপারীর কান্দি, চোকদার কান্দি, হাজী মকবুল খালাসির কান্দি, খেঁজুরতলা, মোমিন খালাসির কান্দি, ভেদরগঞ্জ উপজেলার উত্তর তারাবুনিয় ইউনিয়নের ৬ ও ৭নং ওয়ার্ডের মুসনসুর মোল্যার কান্দি, আলম খার কান্দি, আহমদ মাঝির কান্দি, ওকালদ্দিন মুন্সির কান্দিসহ ৫টি গ্রামের তিন শতাধিক বসত বাড়ি গত ৭ দিনে বিলীন হয়েছে। তারাবুনিয়া চেয়ারম্যান ষ্টেশন বাজারটিও ভেঙ্গে গেছে মাত্র দুই রাতে। এই বাজারের শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কিছুটা অন্যত্র সড়িয়ে নিতে পারলেও বেশীর ভাগ স্থাপনাই নদী গর্ভে হারিয়ে গেছে। ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

নদী ভাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত জাজিরা কুন্ডের চরের রিজিয়া বেগম, আব্দুস সাত্তার চোকদার, আনোয়ার ফকির, বাদশা মিয়া, দেরগঞ্জের তারাবুনিয়ার খোরশেদা বেগম, নুরুল আমিন মৃধা, বাদল মিয়া ও সাহেরা বেগম বলেন, আমাদের চৌদ্দ পুরুষের ভিটা মাটি সব রাক্ষুসী পদ্মা গ্রাস করেছে। আমরা এখন খোলা আকাশের নিচে রাত হলে বৃষ্টিতে ভিজি আর দিনে রৌদ্রে শুকাই। আমাদের কাছে কোন মেম্বার চেয়ারম্যান খোঁজ নিতে আসে নাই। সরকারের কোন সাহায্যও আমরা এই পর্যন্ত পাই নাই।

ষ্টেশন বাজারের মাছের আড়তদার হাবিবুর রহমান জানান, শুক্রবার গভীর রাতে হঠাৎ করে নদী ভাংগনের কবলে পরে আমাদের বাজারের অন্তত ৩০টি দোকান ঘর পদ্মা নিয়ে গেছে। আমরা দোকানগুলি কোন জায়গায় সরানোর সুযোগ পাইনাই।

কুন্ডেরচর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোতালেব মোল্য বলেন, আমার নিজের বাড়িটা চোখের সামনে পদ্মা নদী গিলে খাইলো। অসহায়ের মত শুধু দেখলাম। কিছুই করার ছিল না। তিনি আরো বলেন, বর্ষার স্রোতের মধ্যে মাত্র ১ মাস আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড আমার বাড়ির সামনে মাত্র ৭০-৮০ ফিট জায়গায় আধাবিদি করে বালুর বস্তা ফেলেছে। শুনেছি এই কাজে সাড়ে ২৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে হয়েছে। মার্চে মাসে ঠিকার এই কাজের জন্য ওয়ার্ক অর্ডার পেলেও কাজ করেছে জুন মাসের শেষ দিক দিয়ে। সময় মত এবং সঠিকভাবে এই কাজ করলে এবছর আমরা ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পেতাম।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, নদী ভাঙ্গন এখন সবচেয়ে ভয়াবহ ও গুরুত্বপূর্ন সমস্যা। শরীয়তপুরের নদী ভাঙ্গার স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে সাড়ে তিন শত কোটি টাকার একটি বৃহৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যা প্রি-একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ কালের এই সমস্যা দুর হবে।

(কেএনআই/এএস/আগস্ট ০২, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test