E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বরিশালে পিস স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা

২০১৬ আগস্ট ০৪ ১৬:০৯:১৩
বরিশালে পিস স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : অবশেষে জামায়াতী যোদ্ধা তৈরির ব্যাপক কুখ্যাতি অর্জনকারি বরিশাল নগরীর কলেজ এভিনিউয়ের পিস স্কুল এ্যান্ড কলেজের সকল কার্যক্রম বুধবার সকালে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে স্কুলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাওসারুল ইসলাম নাহিদ জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী বরিশালের পিস স্কুলের সকল কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। বরিশালে বিতর্কিত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর স্কুল এ্যান্ড কলেজের কর্মকান্ড নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। এ ঘটনার পর পরই নাটকীয়ভাবে কলেজের অধ্যক্ষ তার স্ব পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

মহানগর পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল আমীন জানান, পিস স্কুলের বিষয়ে হেড কোয়ার্টারের নির্দেশে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছিলো। প্রতিষ্ঠানটির সাথে কারা জড়িত সে ব্যাপারেও খোঁজখবর নেওয়া হয়। অপরদিকে ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন স্ব-পদ থেকে পদত্যাগ করার জন্য গত ১৬ জুলাই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে তারা শুনতে পেয়েছেন। পিস স্কুলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাউসারুল ইসলাম নাহিদ অধ্যক্ষ মোয়াজ্জেম হোসেনের পদত্যাগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। সচেতন নাগরিকদের মতে, অধ্যক্ষর পদত্যাগের বিষয়টিও রহস্যজনক।

সূত্র মতে, নগরীর ৪৭ কলেজ এভিনিউয়ের জিমি কটেজ ভাড়া নিয়ে গত এক বছর পূর্বে বরিশালে পিস স্কুল এন্ড কলেজের যাত্রা শুরু হলেও নির্দিষ্ট লোকের বাইরে কেউ এ প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারতেন না। নগরীতে এ প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু করার সময় কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছিল ভারতের ইসলামী বক্তা (বর্তমানে বির্তকিত) ড. জাকির নায়েকের ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধায়নে এ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হবে। ওইসময় বিভিন্ন মাধ্যমে জাকির নায়েক জনপ্রিয় হওয়ায় অল্পদিনে এখানে বিপুল পরিমান শিক্ষার্থী ভর্তি হন। অতিসম্প্রতি জাকির নায়েকের বুদ্ধি বৃত্তিক জঙ্গিবাদ প্রচার ফাঁস হওয়ার পর কথা ঘুরিয়ে নিয়েছেন বরিশালের পিস স্কুলের দ্বায়িত্বপ্রাপ্তরা।

স্কুল কমিটির নেতৃবৃন্দরা বলছেন, এ স্কুলের সাথে জাকির নায়েকের ফাউন্ডেশনের কোন সস্পৃক্ততা নেই। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরাসরি জামায়াত ইসলাম পরিচালনা করছে পিস স্কুল এন্ড কলেজ বরিশাল শাখা। ইনভাইট পিস নামের একটি কোম্পানি স্কুলটি পরিচালনা করছে। যার (ইনভাইট পিস লিমিটেড) এর চেয়ারম্যান আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ। যিনি শিবিরের ১১তম সাবেক সভাপতি। ১৯৯১-৯২ সেশনে আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ শিবিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলেন।

সূত্রে আরও জানা গেছে, পিস স্কুল এন্ড কলেজের পাঠক্রম অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। এমনকি বোর্ডের পাঠক্রমের সাথে সাংর্ঘষিক। এখানে সরকার স্বীকৃত পাঠক্রম প্রচারণায় ব্যবহৃত হলেও মূলত ‘জামায়াতি পাঠ্যক্রম’ অনুসারে পরিচালিত হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হচ্ছে, বইতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেমনই লেখা থাকুক না কেন, শ্রেণী কক্ষে শিক্ষকরা ভিন্নভাবে তা ব্যখ্যা করে থাকেন। এখানে কখনো জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়নি। তবে ইসলামী শিক্ষার নামে বিভিন্ন যুদ্ধের চুম্বুকাংশ প্রায় প্রতিদিন শিশুদের মাঝে বাধ্যতামূলক ‘বয়ান’ দেয়া হয়। সচেতন নাগরিকদের মতে, এটা জামায়াতের একটা কৌশল। ইসলামী শিক্ষার নামে যুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরে ছোট থেকেই শিশুদের মনে ‘জিহাদি’ হবার প্রবণতা তৈরি করা হতো।

ফলে এ প্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজী ও আরবি শেখানোর নামে সাম্প্রতিক সময়ে ইরাক, ইরান, সিরিয়া বা আফগানিস্তানে তালেবান এবং আইএসএস-এর যোদ্ধাদের মানুষ হত্যার গল্প ‘লেসন স্পিড’ হিসেবে পড়ানো হয়। এ প্রতিষ্ঠানের ২১জন শিক্ষকের মধ্যে ১৯জনই জামায়াতের সমর্থক। এখানে জামায়াত বা শিবিরের সুপারিশ ছাড়া কিছুই হতোনা।

(টিবি/এএস/আগস্ট ০৪, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test