E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নড়িয়ায় নৌকার জামানাত বাজেয়াপ্ত, নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ

২০১৬ আগস্ট ০৮ ১৫:২৮:১৩
নড়িয়ায় নৌকার জামানাত বাজেয়াপ্ত, নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : নড়িয়া পৌরসভার উপ- নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের ভরাডুবি হয়েছে। মাত্র ৪৯৩ ভোট পাওয়ায় জামানাত বাজেয়াপ্ত হয়েছে প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম চুন্নুর। এতে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

স্থানীয় আওয়ামীলীগের গ্রুপিং এর কারণে এ ভরাডুবি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দলীয় প্রার্থী। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় এম পি স্বীকার করলেন তৃনমূলের মতামতকে উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় কিছু নেতার প্রভাবে অযোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ায় এ ভরাডুবি হয়েছে।

নড়িয়া উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামীলীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নড়িয়া পৌরসভায় আওয়ামীলীগ থেকে মনোনীত মেয়র হায়দার আলী গত ৩০ ডিসেম্বর টানা চতুর্থ বারের মত মেয়র নির্বাচিত হন। এর কিছু দিন পরে ১৮ এপ্রিল তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। তার মৃত্যুতে নড়িয়া পৌরসভা মেয়রের পদটি শুন্য হলে উপ-নির্বাচনের আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর দলীয় রীতি অনুযায়ী তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামত নিয়ে নড়িয়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি হাসান আলী রাড়িকে মনোনয়নের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে। এতে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক, নড়িয়া উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সভাপতি সাধারণ, নড়িয়া পৌরসভা আ’লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সাংসদের অনুমোদন নেয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড তৃনমুলের মতামতকে উপেক্ষা করে হাসান রাড়িকে মনোনয়ন না দিয়ে মনোনয়ন প্রদান করেন নড়িয়া কলেজের সাবেক ভিপি, দলীয় কর্মকান্ডে নিস্ক্রীয় সিরাজুল ইসলাম চুন্নুকে।

সিরাজুল ইসলাম চুন্নু মনোনয়ন পাওয়ায় তার বিপক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করে আরো ৬ জন। তারা হলেন, গত নির্বাচনে নৌকার সাথে পরাজিত শহিদুল ইসলাম বাবু (নারিকেল গাছ প্রতীক), নিহত মেয়র পুত্র মাহমুদুল হাসান জুয়েল (জগ প্রতীক), সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আকতার হোসেন (কম্পিউটার), শাহেদুজ্জামান (রেল ইঞ্জিন) ও কামরুল হাসান (মোবাইল ফোন প্রতীক)। ৭ আগষ্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহন শেষে দেখা যায় ৫ হাজার ২ শত ৫২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন শহিদুল ইসলাম বাবু রাড়ি। তার নিকটতম প্রার্থী হিসেবে ৪ হাজার ৪ শত ১৭ ভোট পায় সাবেক মেয়র পূত্র মাহমুদুল হাসান জুয়েল। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের নৌকা প্রতীকের সিরাজুল ইসলাম চুন্নু পেয়েছেন মাত্র ৪ শত ৯৩ ভোট। এতে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটানির্ং অফিসার মো. জালাল উদ্দিন।

সিরাজুল ইসলাম চুন্নু অভিযোগ করে বলেন, কেন্দ্রীয় মনোনয় বোর্ড আমাকে মনোনয়ন দিলেও স্থানীয় আওয়ামীলীগ আমার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেছেন। তারা কেউ নৌকার পক্ষে কাজ করেননি। তিনি আরো বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান আমার বিরুদ্ধে সরাসরি কাজ করেছেন। উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রকাশ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়েছেন।

সিরাজুল ইসলাম চুন্নু আ’লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এনামুল হক শামীম সম্পর্কে অভিযোগ করেন, “আমি মনোনয়ন পাওয়ার পরে শামীম ভাই কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেবকে বলেছিলেন, চুন্নুর দায়ীত্ব আমি নিলাম। ওকে নির্বাচতি করানোর দায়িত্ব আমার”। কিন্তু শামীম ভাইকে বার বার ফোন করলেও তিনি একবারের জন্যও নড়িয়া আসেননি। আমার সাথে তারা সবাই ড্রামা করেছে। ফলে আমি পরাজিত হয়েছি।

নড়িয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার খলিফা বলেন, আমরা তৃনমূল থেকে হাসান আলী রাড়ির নাম কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডর কাছে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেখান থেকে দুঃখজনকভাবে এই নাম পরিবর্তন করে, যিনি মনোনয়ন চায়নি এমন একজনকে মনোনীত করা হয়েছে।

শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কর্নেল (অবঃ) শওকত আলী বলেন, তৃনমুলের মতামতের সাথে আমারও সুপারিশ ছিল। একজন ত্যাগী ও যোগ্য নেতাকে মনোনয়ন না দিয়ে এমন একজনকে কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন পাইয়ে দেয়া হয়েছে যিনি ২২ বছর আগে ছাত্রলীগের টিকিটে নড়িয়া কলেজের ভিপি হওয়ার পর আর দলীয় কর্মকান্ডে যুক্ত ছিলেন না। পরবর্তীতে বিএনপি- জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়েছিল।

শওকত আলী বলেন, দলীয় সভানেত্রী ও মনোনয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আশে পাশে কিছু লোক কেন্দ্রীয় নেতা পরিচয়ে ঘোরাফিরা করে, তারাই অযোগ্য লোককে মনোনয়ন পাইয়ে দিয়ে দলরে মান-সম্মান হানী করেছেন।

(কেএনআই/এএস/আগস্ট ০৮, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test