E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শহীদ সুকান্ত আবদুল্লাহর ম্যুরাল উদ্বোধন করলেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ

২০১৬ আগস্ট ১৫ ১৭:৪৭:০৫
শহীদ সুকান্ত আবদুল্লাহর ম্যুরাল উদ্বোধন করলেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি : “পিতার কাধে সন্তানের লাশ” কত ভারী তা লাশ বহনকারী জন্মদাতা পিতাই জানেন ! তারপরেও সন্তানের মুখটা শেষ বারের মত একবার দেখা আর তার দাফন-কাফন থকেও বঞ্চিত হতে হয় যে পিতাকে তিনি কতই না ভাগ্যাহত পিতা!

এমনই এক হতভাগ্য পিতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। গল্পের রূপ কথার মতই সত্যি ঘটনা ঘটেছে তার জীবনে। ’৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ইতিহাস স্বাক্ষী। দেশী-বিদেশী স্বাধীনতা বিরোধী, ক্ষমতালোভী কিছু কুচক্রিরা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে।

এদিন ওই হত্যাকারীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি শহীদ মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও তার দৌহিত্র আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর জ্যেষ্ঠপুত্র ১৯৭১ সালের ২২ জুন জন্ম নেয়া চার বছরের সুকান্ত বাবু। সেই দিনের সুকান্ত আবদুল্লাহ্ আজ বেঁচে থাকলে ৪৫ বছর বয়সী সুকান্তই হয়তো হতেন পিতা হাসানাত ও পিতামহ রব সেরনিয়াবাতের যোগ্য উত্তরসূরী। কিন্তু ভাগ্য বিড়ম্বিত জাতির সাথে ভাগ্য বিতাড়িত হয়েছেন পিতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। পিতা ও পুত্র হারানো ৪১ বছরের ভাগ্য বিড়ম্বিত সেই পিতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ সোমবার ৪১তম জাতীয় শোক দিবসে প্রাণপ্রিয় পুত্র শহীদ সুকান্ত আবদুল্লাহর ম্যুরাল উদ্বোধন করতে গিয়ে আবেগ আর বুকফাটা কান্নায় আপ্লুত হয়ে পরেন। ।

জাতির জনকের শৈশবের স্কুল বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহি গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উদ্যোগে দ্বিতল ভবনের সামনে ১১ ফুট উচ্চতা ও ৫ ফুট চওড়া শহীদ সুকান্তর ম্যুরালটি স্থাপন করা হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ নবনির্মিত দ্বিতল ভবনের নামকরণও করেছে “শহীদ সুকান্ত ভবন”।

জাতীয় শোক দিবসে জ্যেষ্ঠপুত্র হারা পিতা, জাতির জনকের ভাগ্নে এবং শহীদ মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের জ্যেষ্ঠপুত্র, পার্বত্য শান্তি চুক্তির রূপকার, সাবেক চিফ হুইপ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, বরিশাল জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ নিজ পুত্রের সেই ম্যুরাল উদ্বোধন করতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পরেন। প্রকৃতির নিয়মানুযায়ি পুত্র পিতার কীর্তিময় কর্মকান্ড স্মরণ করে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস উল্টো পিতা ও পুত্রসহ পরিবারের অন্যান্যদের হারিয়ে সেই শোকগাঁথা দিনগুলো স্মরণ করতে হচ্ছে এক পিতাকে।

’৭১ এর ১৫ আগষ্ট সামরিক ক্যু-র পর দীর্ঘদিন লুকিয়ে থাকতে হয় পুত্রহারা পিতা হাসানাত আবদুল্লাহ ও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া একমাত্র কন্যা কান্তাকে নিয়ে বুলেটবিদ্ধ অন্তঃস্বত্তা মা শাহান আরা আবদুল্লাহকে। পিতা-মাতা হয়েও শেষ বারের মত দেখতে পারেন নি তারা প্রাণাধিক পুত্রের মুখটা। হত্যাকারীদের নির্দেশে সাধারণ ভাবেই বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয় শহীদ সুকান্তকে। হৃদয়বিদারক স্বজন হারানোর ঘটনা একমাত্র ভুক্তভোগী ছাড়া অন্য কারো পক্ষে অনুভব করা সম্ভব নয়।

আমরা দেখেছি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ও দেশীয় রাজাকার, আল-বদর বাহিনীর বিরুদ্ধে মুজিব বাহিনীর প্রধান হয়ে দল ও কর্মী বান্ধব নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে। চাওয়া আর পাওয়ার হিসেব নিকেশ নিয়েই নেতাকর্মীদের পাশে থাকতে হচ্ছে ক্ষণজন্মা এই মানুষটিকে। কিন্তু আমরা নেতাকর্মীরা কখনও অনুভব করতে পারিনি বা চাইনি পিতা-পুত্র হারানো এক স্নেহময়ী পিতা মাতার মনের তুষের আগুনের মত বুকে জলা দীর্ঘ হাহাকার?

১৫ আগস্টের এই দিনে প্রিয় নেতার হৃদয়ের অনুভূতি? আমাদের প্রিয় নেতা সকলের ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ্ আজকের দিনটাতে নিভৃতে কতটা হাহাকার করেন?

কিন্তু পুত্রের ম্যুরাল উদ্বোধন করতে গিয়ে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না। তবুও গোপনে সেই অনুভূতি ছাপিয়ে স্বীয় কর্তব্য সম্পন্ন করলেন তিনি। হয়তো নেতাদের আবেগাপ্লুত হতে নেই এই কারণে তিনিও আবেগ-হাহাকার-সব হারানোর বেদনা চেপে রাখতে বাধ্য হলেন। কারণ তিনি এখন অগণিত নেতাকর্মীর জনক।

(টিবি/এএস/আগস্ট ১৫, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test