E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সিরিজ বোমা হামলার কলঙ্কময় দিন আজ

২০১৬ আগস্ট ১৭ ১৫:০২:৫৪
সিরিজ বোমা হামলার কলঙ্কময় দিন আজ

আঞ্চলিক প্রতিনিধি(বরিশাল):২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সকাল ১০টা। বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে বরিশালের আদালত প্রাঙ্গণ। কিছুক্ষণ পর খবর মেলে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণসহ ৬৩ জেলায় একযোগে সিরিজ বোমা হামলা চালানো হয়েছে। ১৭ আগস্টের পর একের পর এক হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ ৩৩জন নিহত ও প্রায় চার শতাধিক আহত হন।

ওই বছরের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠি আদালতে আত্মঘাতী বোমা হামলায় বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে ও সোহেল রহমান নিহত হয়েছেন। জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদশে (জেএমবি) বোমা হামলা চালিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের অস্তিত্বের জানান দেয়। আজ বুধবার সেই ভয়াল সিরিজ বোমা হামলার ১১ বছর পূর্ণ হচ্ছে।

সূত্রমতে, এসব ঘটনায় বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে ১৬১টি। যারমধ্যে এখনো ৫৯টির বিচার কাজ ঝুলে রয়েছে। এসব মামলায় ৭ শতাধিক জঙ্গিকে আসামি করা হয়। ইতোমধ্যে ১০২টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এতে মোট ২৪৭ জনকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুদন্ড, ১১৮ জনের যাবজ্জীবন এবং ৯৯ জনকে দেওয়া হয়েছে নানা মেয়াদে কারাদন্ড। খালাস পেয়েছেন ১১৮ জন এবং জামিনে রয়েছে আরও ৩৫ জন। পলাতক রয়েছে ৫৩ জঙ্গি। আর এখনও বিচারাধীন আছে ৫৯টি মামলা। এমনকি স্বাক্ষীর অভাবে থমকে আছে অনেক মামলার বিচার কার্যক্রম।

সূত্রে আরও জানা গেছে, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার চেঙ্গুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা (দীর্ঘদিন থেকে খুলনার ফুলতলা এলাকায় বসবাসরত) দুর্ধর্ষ শিবির নেতা পরবর্তীতে আফগান যোদ্ধা সর্বশেষ জেএমবি’র আত্মঘাতী দলের প্রশিক্ষক মাওলানা মহিউদ্দিন ফারুকীকে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে বরিশাল কোতোয়ালী থানা পুলিশ খুলনা থেকে গ্রেফতার করে বরিশালে নিয়ে আসে। ভয়ঙ্কর এ জঙ্গি নেতাকে (মহিউদ্দিন ফারুকী) ১৭ আগস্টের সিরিজ বোমা হামলা মামলায় শোন এ্যারেস্ট করা হলেও পরবর্তীতে তৎকালীন সময়কার চারদলীয় জোট সরকারের উচ্চ মহলের চাঁপের মুখে পুলিশ চার্জশীট থেকে তার নাম বাদ দিতে বাধ্য হয়। এমনকি রহস্যজনক কারণে শীর্ষ এ জঙ্গি নেতাকে গ্রেফতারের পর ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের কেন্দ্রীয় নেতা দাবি করে চারদলীয় জোট সরকারের বিশেষ মহলের আশ্বাসে একটি টিম বরিশালে এসে জেএমবির আত্মঘাতী দলের প্রশিক্ষক মাওলানা মহিউদ্দিন ফারুকীকে একমাসের ব্যবধানে জামিনে মুক্ত করে নিয়ে যায়। এছাড়াও বরিশাল কারাগারে দীর্ঘদিন কারাভোগকারী ১৩ জঙ্গি সদস্য অনেক আগেই জামিনে বেরিয়ে গেছেন।

ঝালকাঠির বিচারক সোহেল আহমেদ চৌধুরী ও জগন্নাথ পাড়ে হত্যার ঘটনা দেশব্যাপী সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টি হয়। দুই বিচারক হত্যা মামলায় ২০০৬ সালের ২১মার্চ মামুন, সুলতান হোসেন খান, শায়খ আব্দুর রহমান, আব্দুল আউয়াল, আতাউর রহমান সানি, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাই, শাকিল আহমেদ ওরফে মোল্লা ওমর (মৃত) ও মেহেদীসহ ৮ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করা হয়। ২০০৬ সালের ৩০ মে মামলার রায়ে শায়খ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাই, আতাউর রহমান সানি, আব্দুল আউয়াল, মাসুম, খালিদ, সাইফুল্লাহসহ মোট ৭ জনকে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ তাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্ভরযোগ্য একটি গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, জেএমবি’র বোমা বিশেষজ্ঞ আফগানফেরত যোদ্ধা হান্নান উদ্দিন, জেএমবি’র আরেক শীর্ষ নেতা (বাংলা ভাই পর্যায়ের) আত্মঘাতী দলের প্রশিক্ষক মাওলানা মহিউদ্দিন ফারুকী, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীম আনসারী ও কালেমায়ে জামাত সংগঠনের আমীর আব্দুল মজিদের গ্রামের বাড়ি বরিশাল অঞ্চলে হওয়ায় বিভিন্ন সময় জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকায় শক্ত অবস্থান নেয়ার চেষ্ঠা করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের ১২ আগস্ট বরিশাল বিভাগের বরগুনা শহরের উপকন্ঠ খেজুরতলা থেকে বৈঠকরত অবস্থায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীম আনসারীসহ ৩১ জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ৩১ জনের মধ্যে মুফতি জসীম আনসারী ব্যতিত বাকি সবাই রয়েছেন জামিনে।

এরপূর্বে ২০০৮ সালে সদর উপজেলার নিভৃত পল্লী নলটোনা ইউনিয়নের শিয়ালীয়া মাদরাসায় জঙ্গি প্রশিক্ষণের সময় ৩৩ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিলো। এসব জঙ্গির অনেকেই ২০০৫ সালের দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলায় জড়িত ছিলো। গ্রেফতার হওয়া এসব জঙ্গির অধিকাংশরাই মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছে। আর অল্প কয়েকজন পরবর্তীতে স্বল্প মেয়াদের শাস্তি ভোগ করে জামিনে বেরিয়েছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট গভীর রাতে ঝালকাঠীর নলছিটি উপজেলার কামদেবপুর কওমী মাদ্রাসা থেকে গোপন বৈঠকের সময় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজী) নয়জন সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি গ্রেনেড, চারটি রামদা, ডায়েরী, সাতটি মোবাইল ফোন ও জেহাদী বই উদ্ধার করা হয়। একইদিন বিকেলে পটুয়াখালী শহরের ছোট চৌরাস্তা এলাকা থেকে পুলিশ উগ্রপন্থি জঙ্গি সংগঠনের তিনজনসহ গত এক বছরে দক্ষিণের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা থেকে জঙ্গি সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃত প্রত্যেক জঙ্গি সদস্যরাই কয়েকদিন কারাভোগ করে কৌশলে জামিনে বেরিয়ে যায়।

আটক জঙ্গিদের জামিনে বের হওয়ার ব্যাপারে বরিশালের পাবলিক প্রসিকিউটর গিয়াস উদ্দিন কাবুল বলেন, আটক জঙ্গিরা যাতে বিচারিক আদালত থেকে জামিনে বের হতে না পারে সেজন্য আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করি। কিন্তু তারা যখন বিচারিক আদালত থেকে জামিনে বের হতে না পারে তখন উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়ে জামিন নিয়ে আসে। এক্ষেত্রে আমাদের করার কিছুই থাকে না।

জেএমবির জঙ্গিরা অন্য সংগঠনে : ২০০৭ সালে শীর্ষস্থানীয় ছয় জঙ্গি নেতার ফাঁসির রায় কার্যকরের পর জেএমবি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। অনেক সদস্য গোপনে আরেক সংগঠন জামায়াতুল মুসলেমিনে যোগ দেয়। কেউ কেউ যোগ দিয়েছে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে। সূত্রমতে, ২০০৮ সালের ১৫ নভেম্বর রাজধানীর মিরপুর থেকে জেএমবির কথিত সামরিক কমান্ডার মোঃ হানিফ গ্রেফতার হয়। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, তার বন্ধু এজাজের মাধ্যমে তারা তিনজন জেএমবি থেকে জামায়াতুল মুসলেমিনে যোগ দিয়েছে। অবশ্য এজাজ পরে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে যোগ দেয়। জেএমবির প্রতিষ্ঠাকালীন শুরা সদস্য শাহেদ বিন হাফিজও জামায়াতুল মুসলেমিনে যোগদান করেছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের পর তিন জঙ্গি নেতা সামিন মাহফুজ, জাহিদুর রহমান ও ইসমাইল হোসেনও জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা শুরুতে জেএমবিতে ছিলো, পরবর্তীতে জামায়াতুল মুসলেমিনে যোগ দিয়েছে।

প্রশাসনের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, জেএমবির অনেক সদস্য জামায়াতুল মুসলেমিন ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে যোগ দিয়েছে।








(টিবি/এস/আগস্ট১৭,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test