E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

টাঙ্গাইলে শ্রাবণ সংক্রান্তি ১৪২৩ অনুষ্ঠিত

২০১৬ আগস্ট ১৭ ১৮:৪৪:২৩
টাঙ্গাইলে শ্রাবণ সংক্রান্তি ১৪২৩ অনুষ্ঠিত

মো. নাসির উদ্দিন, টাঙ্গাইল : আবহমান বাংলার জনপ্রিয় পালা শাওনের ডালা “শ্রাবণ সংক্রান্তি ১৪২৩” বুধবার টাঙ্গাইলের ৮টি নদীতে পালিত হয়েছে। বেসরকারী বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন প্রধান অতিথি থেকে এই শ্রাবণ সংক্রান্তির উদ্বোধন করেন।

এই শ্রাবণ সংক্রান্তিতে বেইলা নাচানির যাত্রা পালার শিল্পীরা সুসজ্জিত নৌকায় করে নৃত্যগীত করে নদীর ৭টি ঘাটে পুজোঁ দিয়ে থাকে। পরে কালিহাতী উপজেলার আকুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বেইলা নাচানির যাত্রা পালার আয়োজন করা হয়। এটা প্রতিবছর শাওন মাসের প্রথম দিন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

সাধনা ও যাত্রিক এর আয়োজনে এবং বেসরকারী বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সহযোগিতায় বুধবার সকালে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা বাজার ঘাট থেকে সুসজ্জিত নৌকা বহর নিয়ে যাত্রা শুরু হয় শ্রাবণ সংক্রান্তির। বেসরকারী বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন প্রধান অতিথি হিসেবে এই বহরে যোগ দেন।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম আখতারী মমতাজ, শিল্পকলা একাডেমীর পরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, টাঙ্গাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আনোয়ার হোসেন, জেলা সিনিয়র তথ্য অফিসার কাজী গোলাম আহাদ, সাংবাদিক ও অভিনেতা পীযুষ সিকদার, যাত্রিকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাদাব সাজ, সাধনার কো-অডিনেটর লাবণ্য সুলতানা বন্যা ও গবেষক কো-অডিনেটর শফিউদ্দিন তালুকদার।

বেহুলা লাচারি বাংলাদেশ একটি জনপ্রিয় পালা। এটি ‘বেইলা নাচানি, বেইলা সতী, বেইলা সুন্দরী, বেইলা-লক্ষিন্দর, প্রভৃতি নামে পরিবেশিত হয়ে থাকে। বেহুলা, মনসা, সনেকা, নরেকা, দাসী ইত্যাদি চরিত্রে পুরুষরা নারী সেজে সংলাপ ও নৃত্যগীতে অংশ নিয়ে থাকে।

বেহুলা লাচারিতে শিব ও পার্বতীর কৈলাশ গমন, মনসা পদ্মাদেবীর জন্ম ইতিহাস, চাঁদ সওদাগরের নিকট মনসার পুজা দাবি, চাঁদ সওদাগর মনসাকে পূজা না দেওয়ায় তার ছয় পুত্রকে কালীদহ সাগরে ডুবিয়ে মারা, বেহুলা ও লক্ষিন্দরের জন্মের ইতিবৃত্ত, প্রেম ও বিয়ে, শাতালি পর্বতে লোহার বাসর ঘরে মনসার নির্দেশে কালনাগ কর্তৃক লক্ষিন্দরের দংশন, কলার ভেলায় ভেসে মরা পতিসহ বেহুলার দেবপুরীর উদ্দেশ্যে যাত্রা, দেবসভঅয় বেহুযলার আকুল আকুতি ও নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে দেবতাদের মন সস্তুষ্টি করায় লক্ষিন্দরের পুনজীবন লাভ, তার ছয় ভাইয়ের পুনজীবন লাভ, বেহুলার অনুরোধে চাঁদ সওদাগরকে দিয়ে মনসাকে পুর্জা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি বিষয় কখনো কাহিনী আকারে, কখনো নৃত্যগীত প্রধান হয়ে বেহুলা লাচারীতে স্থান পেয়েছে।

শাওইনা ডালা বেহুলা লাচারির শ্রাবণ সংক্রান্তির একটি পরিবেশনা বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসকে গ্রামাঞ্চলে শাওন মাস বলে। শ্রাবণ সংক্রান্তিতে (শ্রাবণ মাসে শেষ দিন) প্রতিবছর বেহুলা লাচারির দলগুলো আলাদাভাবে বড় ধরণের নৌকায় আরোহন করে নৃত্যগীত করতে করতে নদীর স্রোতের অনুকুলে নৌকা ভাসিয়ে দেয় “যাকে শাওইনা ডালা” নামে অভিহিত করা হয়। কোনো কোনো অঞ্চলে শাওইনা ডালাকে বেহুলার ভাষান’ বলা হয়ে থাকে। দলের ওস্তাদ কিছু দুর পরপর সাতটি ঘাটে নৌকা ভিড়িয়ে সর্পদেবী মনসা (পদ্মাদেবী ও শিচব মহাদেবতাসহ দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে পূজা দেয় এবং তাদের জন্য ছোট ছোট কলার ভেলায় ভোগ সামগ্রী দিয়ে তা নদীতে ভাসিয়ে দেয়।

এর পর পুর্বে থেকে মানত করা নিদিষ্ট বাড়ির আঙ্গিনায় বেহুলার লাচারি পালার শেষের একটি বা দুটি দৃশ্য পরিবেশনা করে থাকে। বিশেষ করে লোহার বাসর ঘরে মানসার নির্দেশে কালনাগ কর্তৃক লক্ষিন্দরকে দংশন ও জীয়ত্তকরণ পর্যন্ত পালাটি পরিবেশিত হয়। অতপর তারা নৌকাযোগে গন্তেব্যে ফিরে আসে। এদিন প্রতিটি ওস্তাদ, ওঝা বা কবিরাজ সাপের বিষ নামানোর মন্ত্র ও ঝালাই করে থাকেন।

টাঙ্গাইল জেলার যমুনা, ঝিনাই, ধলেশ্বরী, বৈরান, বংশী, ফটিকজানী ও লৌহজং নদীতে প্রতিবছর শাওইনা ডালা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

(এমএনইউ/এএস/আগস্ট ১৭, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test