E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জাজিরার কুন্ডেরচরে পদ্মার ভাঙ্গনে নিখোঁজ ২, বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি

২০১৬ আগস্ট ২৪ ১৫:৪৫:৩৩
জাজিরার কুন্ডেরচরে পদ্মার ভাঙ্গনে নিখোঁজ ২, বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : এক সপ্তাহ বিরতি দিয়ে আবার পদ্মা নদীর ভয়াবহ ভাংগন শুরু হয়েছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর ইউনিয়নের কলমীরচর খেজুরতলা এলাকায়। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে ঘর বাড়ি গাছ পালাসহ অন্তত ২০ শতাংশ জমি  হঠাৎ দেবে যায় নদীতে।

এসময় নিজেদের ঘর বাড়ি সড়ানোর সময় অন্তত ৮ ব্যক্তি অন্যান্য স্থপনার সাথে নদী গর্ভে চলে যায়। স্থানীয়দের তাৎক্ষনিক চেষ্টায় ৬ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও নিখোঁজ রয়েছে এলাকার দুই দরিদ্র বৃদ্ধ। তারা হলেন কলমিরচর গ্রামের গরীব কৃষক আব্দুর রশিদ শিকদার (৬৮) ও ঈশ্বর কাঠি গ্রামের বাদাম বিক্রেতা মোসলেম ফকির (৭০)।

স্থানীয়রা জানান, গত ১ মাস থেকে কুন্ডের চরের কলমিরচর এলাকার কয়েকটি গ্রামে প্রবল ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। সপ্তাহ খানেক বিরতির পরে মঙ্গলবার রাত ৮ টার দিকে হঠাৎ করে আবার ভাঙ্গন শুরু হয়। এ সময় নিজেদের ঘর দরজা ও মালামাল সামলাতে গিয়ে নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে এলাকার হাজী সামসুদ্দিন মোল্যা, খালেক সরদার, রশিদ শিকদার ও মোসলেম ফকিরসহ মোট ৮ জন পানিতে পরে যায়। রাতের অন্ধারে ৬ জনকে উদ্ধার করা গেলেও বাকি দুই বৃদ্ধকে পাওয়া যায়নি। পদ্মার প্রবল স্রোতে তারা কোথায় ভেসে গেছে তার কোন হদিস মিলেনি। মঙ্গলবার সারা রাত পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে খোঁজা খুঁজি করেও তাদের সন্ধান মিলেনি। বুধবার ভোর থেকে পূনরায় কয়েকটি ট্রলার নিয়ে পদ্মা নদীর ওয়াপদা, সুরেশ্বর, কাঁচিকাটা, পালেচর, মাওয়া, শিমুলিয়া এলাকা চষে বেড়ালেও কোন রকম খোঁজ মিলেনি ওই দুই বৃদ্ধের। এলাকাবাসী ধারনা করছে তারা পানির তোড়ে কোথাও ভেসে গেছে। এমনকি তারা মৃত্যু বরণ করে থাকতে পারে বলেও ধারনা করছে এলাকার লোক।

বুধবার সকালে নিখোঁজদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে স্বজনদের আহাজারি চলছে। সরকারের কাছে তাদের শুধু একটাই দাবী, অন্তত এই দুই বৃদ্ধের মরদেহটা যেন তারা ফিরে পেয়ে দাফন করার সুযোগ পায়। বুধবার দুপুরে নিঁেখাজদের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেছে, ১৮ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও তাদের উদ্ধারে সরকারের পক্ষ থেকে কোন চেষ্টা করা হয়নি। এ দিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে। শরীয়তপুর ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা ১৬ ঘন্টা পরে ঘটনাস্থলে পৌছলেও তাদের কোন নিজস্ব ডুবুরি না থাকায় উদ্ধার কাজে তারা কোন সহায়তা দিতে পারেনি।

উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে নদী ভাঙ্গনে কুন্ডেরচর ইউয়িনের ৩টি গ্রাম, খেজুর তলা বাজার, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বসত বাড়ি, ফসলী জমি, পাকা সড়ক, পল্লী বিদ্যুতের লাইন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পদ্মা বক্ষে বিলীন হয়েছে। এতে ৫ শতাধিক পরিবার তাদের বসত বাড়ি হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। বুধবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্তদের কারো কারো স্কুল মাঠে, অন্যের আবাদী জমিতে, সড়কের পাশে কোন রকম মাথা গোজার ঠাই মিললেও বেশীরভাগ মানুষই মানবেতর জীবন পার করছে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেছেন, নদী ভাঙ্গনে নিখোঁজদের উদ্ধারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদান করা হবে। আর যারা তাদের সহায় সম্বল নদী গর্ভে হারিয়েছেন তালিকা প্রনয়নের মাধ্যমে সাধ্যমত তাদের সকল ধরনরে সাহায্য করা হবে।

(কেএনআই/এএস/আগস্ট ২৪, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test